Trending
বর্জ্য প্রতিদিন ভারতের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফি বছর ভারত বর্জ্য উৎপন্ন করে ২৭৫ মিলিয়ন টন। যার অধিকাংশটাই জমা হয়ে থাকে ভাগাড়ে, নদী-নালায়। এই জমা হওয়া বর্জ্য দিন দিন পাহাড়ে পরিণত হয়। যা মানুষের স্বাস্থ্য সহ জলবায়ু এবং পরিবেশের স্বাস্থ্যকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দেয়। তাই বর্জ্যকে ফের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায় কিনা সেই নিয়ে ভারত বহুদিন ধরেই ভাবনা চিন্তা করে আসছিল। অবশেষে কিছুটা আশার আলো দেখতে পেয়েছে ভারত। আর যে কারণে ভারত এখন আর নিজের দেশের নয়। বরং বাংলাদেশ থেকেও বর্জ্য কিনছে। কিন্তু উদ্দ্যেশ্যটা কি? জঞ্জাল নিয়ে ভারতের কী প্ল্যান? আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা সারব সেই নিয়েই। বলব, কেন ভারত বর্জ্য কিনছে আর বর্জ্য নিয়ে ভারতের কী পরিকল্পনা রয়েছে?
২৭৫ মিলিয়ন টন বর্জ্য উৎপাদন করে ভারত। যার কিছুটা মাত্র ব্যবহার করা হয়। শতাংশের বিচারে দেখতে গেলে হয়ত সেটা ২০-২৫% মতন। বাকি বর্জ্য ব্যবহার করা না-হলেও ভবিষ্যতে সেই সকল বর্জ্যকে ব্যবহার করার জন্য ভারত নির্দিষ্ট কিছু রূপরেখা তৈরি করেছে। মনে করা হচ্ছে, যদি বর্জ্যকে রূপরেখা অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়, তাহলে বছর শেষে বর্জ্য জমা হলেও তা ব্যবহারের কারণে স্রেফ জমেই থাকবে না। একইসঙ্গে দূষণও ছড়াবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বর্জ্য?
সিগারেটের এই আবর্জনাগুলো সংগ্রহ করার একটা কারণ রয়েছে। তার আগে বলি, প্রত্যেক বছরে ভারতে সিগারেটের বর্জ্য জমা হওয়ার পরিমাণ থাকে প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন মতন। আপনাদের মনে হতে পারে, ফেলে দেওয়া সিগারেটের আবর্জনা আসলে কোন কাজে লাগে? তাহলে জানিয়ে রাখি, যাকে আমরা সিগারেটের আবর্জনা বলছি আসলে তা ফরম্যালডিহাইড এবং নিকোটিনের মিশ্রণে তৈরি করা হয়ে থাকে। সিগারেটের এই ফেলে দেওয়া অংশ থেকে তৈরি হয় তুলো। যা আবার বাচ্চাদের টেডি বিয়ার তৈরিতে দারুণ কাজে লাগে। এখানেই শেষ নয়। এই তুলো বালিশ তৈরিতেও দারুণভাবে কাজে লেগে যায়। প্রথমে এই আবর্জনা থেকে তুলো এবং তামাক আলাদা করা হয়। তামাক দিয়ে তৈরি করা হয় এমন একটি প্রোডাক্ট, যা মশার ধূপ হিসেবে দারুণ কার্যকরী। আর পড়ে থাকা তুলোকে বিশুদ্ধ তুলোয় রূপান্তরিত করা হয়। ফলে এই তুলো শিশুদের সফট টয় তৈরির জন্য কাজে লেগে যায়।
শুনলে একটু অবাক হবেন যে, শুধু খেলনা নয়। বর্জ্য দিয়ে তৈরি করা হয় জুতো পর্যন্ত। দশটি প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং বারোটি প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে জুতো তৈরির জন্য। কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না এক্ষেত্রে। প্রথমে এই প্লাস্টিকের ব্যাগগুলো স্রেফ গরম জলে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। তারপর শুকোতে দেওয়া হয়। শুকিয়ে গেলে, আট থেকে দশটি ব্যাগ একসঙ্গে করে তাপ দেওয়া হয়। যা থেইলি টেক্সে পরিণত হয়। এরপর সেগুলো সটান চলে যায় বিভিন্ন ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে। জুতোর মতন করে সেগুলো কেটে নেওয়া হয় এবং জুতোর শেপে নিয়ে আসা হয়। অবশ্য জুতোর তলায় ব্যবহার করা হয় রবারের সোল। ব্যবহার করা হয় আঠা। তারপর শুকোতে দেওয়া হয় ইউভি লাইটে। তারপর সেলাই করে পুরোপুরিভাবে ব্যবহারযোগ্য জুতোয় রূপান্তরিত করা হয়। জানা গিয়েছে, এই ধরণের জুতোগুলো সাধারণত বিদেশে রফতানি করা হয় ১১০ ডলার মূল্যে।
তবে ভারত শুধু প্লাস্টিক বর্জ্য বা সিগারেট বর্জ্যেই থেমে থাকে নি। বরং ইস্পাত বর্জ্যকে ব্যবহার করে নতুন একটা দিশা দেখিয়েছে। দেশ জুড়ে যত প্লান্ট রয়েছে, সেখান থেকে কম পরিমাণ বর্জ্য তো তৈরি হয়না। কিন্তু সেগুলোর তো সদব্যবহার করতে হবে নাকি? আর যে-কারণে ইস্পাতের বর্জ্য দিয়ে ভারত একটা রাস্তা তৈরি করে ফেলল। সিমেন্ট বা পিচ নয়। বরং গোটা এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে ইস্পাতের বর্জ্য দিয়ে। গুজরাতের সুরাটের হাজিরা বন্দরের কাছে এই রাস্তাটি তৈরি করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে রাস্তাঘাট আরও বেশী মজবুত হবে। একইসঙ্গে খরচ কমবে ৩০ শতাংশ মতন।
বর্জ্যকে ব্যবহার করার জন্য এক নিষ্ঠায় কাজ করছেন হায়দ্রাবাদের অধ্যাপক সতীশ কুমার। তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের অধীনে তিনি একটি সংস্থা খুলেছেন। যেখানে বাতিল প্লাস্টিক ব্যবহার করে তিনি তৈরি করে ফেলছেন পেট্রোল, ডিজেল। জানা গিয়েছে, প্লাস্টিককে পেট্রোলে রূপান্তরিত করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পাইরোলজি। তৈরি হওয়া পেট্রোলের দাম কত জানেন? ৪০ টাকা লিটার। ইয়ে…অন্তত নেট মাধ্যম থেকে সেই সূত্রই তো পাওয়া যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে, ৫০০ কেজি প্লাস্টিক থেকে ৪০০ লিটার পেট্রোল তৈরি করছেন তিনি।
এছাড়াও শাকসব্জি বা ফলমূলের বর্জ্যকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে ভালোরকম। এই বাজারে সেই সকল পচে যাওয়া, বা ফেলে দেওয়া ফল বা শাকসব্জির বর্জ্য দিয়ে তৈরি করা হয় বায়োগ্যাস। আর সেই বায়োগ্যাস ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ তৈরির জন্য। অত্যন্ত সহজ, সরল পদ্ধতি ব্যবহার করেই তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। কিন্তু ভেবে দেখুন তো বর্জ্যের ব্যবহার কিভাবে নতুন একটা দিক খুলে দিয়েছে ভারতকে। তবে শুধু ভারত নয়। গোটা পৃথিবী থেকে বর্জ্য কেনার ব্যপারে ভারতের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে চিন। চিনে বর্জ্য জমা হবার পরিমাণ একেবারে কম নয়। এছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে বর্জ্য কিনছে চিন। দেশটি তাদের বিশাল বিশাল রিসাইকেল প্লান্টে বর্জ্যগুলি জমা করছে, এবং তারাও তৈরি করছে নতুন নতুন অভিনব সব প্রোডাক্ট। আর সেই প্রোডাক্ট ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।
ভারতে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য জমা হচ্ছে। আর সেই বর্জ্য থেকে এমনিতেই দূষণ ছড়ায় আরও বেশি। তাই বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহার করার জন্য একযোগে কাজ করছে ভারত এবং চিন। না, একসঙ্গে নয়। তবে বিদেশের বাজারে বর্জ্য থেকে তৈরি জিনিসের চাহিদা রয়েছে ভালোরকম। আর এখানেও প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রেখেছে ভারত এবং চিন- দুই দেশই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ