Trending
মাঝেমধ্যেই কোটিপতিরা উধাও হয়ে যান। পাওয়া যায় না তাদের কোন খোঁজ। চিনের কোটিপতিদের এমন উধাও হয়ে যাওয়ার কারণটা কি? মনে পড়ছে ২০২০ সালের কথা? চিনের সবথেকে বড় বিলিয়নেয়ার বিজনেসম্যান জ্যাক মা উধাও হয়ে গেছিলেন। প্রায় এক বছরের বেশি সময় কেটে গেছিল। জ্যাক মায়ের কোনরকম খোঁজ পাওয়া যায়নি। যেন কর্পূরের মত উবে গেছিলেন। না তাঁর অফিস, না মিডিয়া, না সোশ্যাল মিডিয়া। এবার সেই একই ট্র্যাডিশন বজায় থাকল। এবার উধাও চিনের সবথেকে বড় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার এবং একইসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল বিলিয়নেয়ার বিজনেসম্যান বাও ফ্যান। বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল, বাও ফ্যানের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর যে মুহূর্তে ওর বেপাত্তা হবার খবর মিডিয়ার সামনে এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে চিনের শেয়ার বাজারে পড়ে গিয়েছে ব্যপক শোরগোল। বাও ফ্যান চায়না রেনেসাঁ কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং সিইও। সংস্থার তরফ থেকে এটাও জানানো হয়েছে যে, বাও ফ্যানের কোন খোঁজ তারা পাচ্ছে না। হতে পারে, তিনি হয়ত কাজের সূত্রে কোন দেশে গিয়েছেন আবার হতে পারে, তিনি হয়ত অন্য কোন কারণে এখন সবার সামনে থেকে একেবারে উধাও হয়ে গেছেন। কিন্তু আসল কারণটা কি- এই বিষয়ে সংস্থা কোনরকম তথ্য দিতে পারেনি। কেউ কেউ মনে করছেন, চিনের ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট নাকি বেশ কিছুদিন ধরেই বাও ফ্যান এবং তাঁর সংস্থার দিকে ভালোরকম নজর রেখেছিল। আর যে কারণে, চিন সরকারের নজরবন্দি হতে হল বাও ফ্যানকে। সত্যিই কি তাই? আজকের প্রতিবেদনে এই নিয়েই খানিক ধোঁয়াশা কাটানোর চেষ্টা করা যাক। কেন চিনের কোটিপতিরা উধাও হয়ে যান?
বাও ফ্যান- চিনের বাজারে এর মত প্রভাবশালী লোক বেশ কম রয়েছেন। এর সংস্থার নাম চায়না রেনেসাঁ। ২০১৮-য় হংকং স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ২০২১-এ নিউ ইয়র্ক এক্সচেঞ্জে চায়না রেনেসাঁ-র নাম লিস্টেড হয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, বাও ফ্যান বেশ তাড়াতাড়ি নিজের কোম্পানির গ্রোথ তুলে ধরতে পেরেছিল। তবে চিনে বাও ফ্যান নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে আজ থেকে প্রায় তেরো, চোদ্দ বছর আগে। এখনো এই সংস্থার মোট শেয়ারের ৫০% রয়েছে বাও ফ্যানের দখলে। বাও ফ্যান চিনের আর যেকটি কোম্পানিতে সবচেয়ে বেশি ইনভেস্ট করেছিলেন, সেগুলো হল ডিডি, কুআইদি এবং মিউটান। এছাড়া মর্গ্যান স্ট্যানলি, ক্রেডিট সুইস গ্রুপের সঙ্গেও বাও ফ্যানের ভালোরকম বিজনেসের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু যে মানুষটা চিনের অর্থনীতিতে বেশ উল্লেখযোগ্য ছাপ রাখছিলেন, হঠাৎ তিনি এভাবে উধাও হয়ে গেলেন কেন? বলাই বাহুল্য, তাঁর উধাও হয়ে যাবার খবর আসতেই চায়না রেনেসাঁ-র শেয়ার ব্যপক ধসের মুখে পড়ে। এক ধাক্কায়, ৫০% শেয়ারের ভরাডুবি হয়। চিনের কিছু প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গিয়েছে, শুধু বাও ফ্যান নন। চায়না রেনেসাঁ-র প্রেসিডেন্ট কাং লিন নাকি নিজেই চিন সরকারের নজরের আওতায় রয়েছেন। তাহলে কি তিনিও হঠাৎ করেই একদিন উধাও হয়ে যাবেন?
জানা গিয়েছে, চিনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিংপিং কমপ্রিহেনসিভ অ্যান্টি করাপশন ইনভেস্টিগেশন শুরু করেছিলেন ২০২১ সাল নাগাদ। সেই ইনভেস্টিগেশনের আওতায় ছিলেন চিনের প্রথম সারির বেশ কিছু বিজনেসম্যান। আর সেটাই বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে চিনের কোটিপতিদের। কারণ, চিন সরকারের নজরবন্দি যেই হচ্ছেন, তিনিই নাকি উধাও হয়ে যাচ্ছেন বেশ কয়েকদিনের জন্য। যেমন জ্যাক মা। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং অত্যন্ত ইনফ্লুয়েনশিয়াল এই মানুষটিই বেশ কিছুদিনের জন্য উধাও হয়ে যান। সেটা কবে? ২০১৩ সালে জ্যাক মা একটি ইন্টারভিউতে বেশ খোলাখুলিভাবে চিন সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। একইসঙ্গে চিনের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের নিয়ম কানুন নিয়েও করেছিলেন সমালোচনা। আর তার জন্যই ভালোরকম মূল্য চোকাতে হয় জ্যাক মা’কে। মাঝে কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও হঠাৎ করে উধাও হয়ে যান জ্যাক মা। তাঁর এই আকস্মিক বেপাত্তা হবার কারণ চিন সরকারের সমালোচনা বলেই মনে করে থাকেন অনেকে। তবে এই ধরণের অন্তর্ধান শুধু বিজনেসম্যানদের ক্ষেত্রেই নয়। চিনের অন্যতম বিখ্যাত অভিনেত্রী ফ্যান বিংবিং এভাবেই বেশ কয়েকদিনের জন্য সবার আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। ১৭ বছর বয়সে সিনেমা থেকে টিভি- সর্বত্র দাপিয়ে বেরানো এই অভিনেত্রী নাকি চিনের ইকোনমির জন্য লক্ষ্মী ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ৬ কোটির ওপর ফলোয়ার ছিল তাঁর। কিন্তু তিনিও নাকি চার মাসের জন্য হঠাৎ করেই একেবারে উধাও হয়ে যান। অনুষ্ঠান, সোশ্যাল মিডিয়া- কোথাও বিংবিং-এর উপস্থিতি নজরে আসেনি তাঁর ফ্যানেদের। তারপরই গুঞ্জন ওঠে। সবাই ভেবে নেন, তাহলে কি এবার বিংবিং পুরোপুরিভাবে নিখোঁজ হয়ে গেলেন? তারপর অবশ্য তিনি যখন ফ্রন্টফুটে আসেন, তখন বলেন, ট্যাক্সের ভয়ে তিনি নাকি গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। ১৩ কোটি টাকা মূল্য চোকাতে হয়েছিল তাঁকে।
চিনের ভেতরের খবর দুনিয়ার সামনে তেমন একটা প্রকাশ্যে আসে না। চিনের সংবাদমাধ্যম যতটুকু দেখায়, ঠিক ততটুকুই। কিন্তু যেটুকু খবর হঠাৎ হঠাৎ বাইরে চলে আসে, সেখান থেকেই জানা যাচ্ছে, চিনে কোটিপতিদের নিখোঁজ হবার মতন বিষয়টা খুব যে একেবারে সাদামাটা, তেমন কিন্তু নয়। কারণ, চিনে এভাবে নিখোঁজ হয়েছেন এক-দুজন নয়। বরং ৩০ হাজার জন। বলা হয়, এভাবেই নাকি ফটোগ্রাফার এমনকি নিজের দেশের সেনাদেরও চিন সরকার নাকি রেয়াত করে না। সরকারের নজরবন্দি হলেই উধাও হয়ে যেতে পারেন যে-কেউ। তিনি যতবড় ক্ষমতাশালী হন না কেন।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ