Trending
চিনের অর্থনীতির গ্রাফ এখন নীচের দিকে। অর্থনীতির আকাশে এ যেন মহাদুর্যোগের ইঙ্গিত। নজিরবিহীন বেড়ে চলেছে বেকারত্ব। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তারপর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির তকমা হারাতে আর খুব বেশি দেরি নেই। কারণ চিনের ভবিষ্যৎ এখন ঘোর সংকটে। এর পিছনে কি রয়েছে মোদী ডিপ্লোম্যাসি? তেমনই তো বলছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কিন্তু বেজিং কেন কার্যত কন্ট্রোল করতে পারছে না চিনের ভবিষ্যৎ? লক্ষ্য রাখা যাক, সেদিকেই।
রয়টার্সের একটা প্রতিবেদন দেখে কার্যত ঘুম উড়েছে চিনাবাসীর। প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ এ চিনের অর্থনীতি এখন লোয়েস্ট। বেজিং-এর মুদ্রাস্ফীতির হার ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে একেবারে নেমে এসেছে ০.৫ শতাংশে। বেকারত্বের গ্রাফ বেড়েছে ওদিকে আভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমশই কমেছে চাহিদা। আর এটাই নাকি চিনের সাধারণ মানুষ এখন বেজায় ফ্যাসাদে পড়েছেন। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির হার কমলে অর্থনীতির উপর কী প্রভাব পড়তে পারে? প্রথমেই বলি, মুদ্রাস্ফীতির অর্থ হল যখন পণ্যের দাম ক্রমশ নীচের দিকে নামতে থাকে। জিনিসপত্রের দাম কমলে সুবিধা তো দেশবাসীর। তাহলে সেটা অসুবিধে তৈরি করছে কিভাবে? কেন মনে করা হচ্ছে যে চিনের বর্তমান পরিস্থিতি আসলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
মুদ্রাস্ফীতির হার যদি বেনজির কমতে শুরু করে তাহলে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে পড়বে। জিনিসপত্রের দাম যদি কমে তাহলে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়বে শিল্প সংস্থাগুলো। কিরকম? উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেকটাই কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হবে শিল্প সংস্থাগুলো। বেজিং-এর সামনে সঙ্কট দাঁড়াবার আসল কারণ হল, রফতানির দুর্দান্ত ঘাটতি। আপনারা সকলেই জানেন যে, চিন থেকে অ্যাপল কার্যত জানিয়েছে টাটা বাই বাই। এখন সংস্থার পছন্দ ভারত। আর শুধু অ্যাপল বলে নয়। ওয়ালমার্টের মত বহু আমেরিকান কোম্পানি এখন বেজিংকে দূরে ঠেলে দিল্লির দিকেই নজর দিয়েছে। ভারতের বাজার তো বটেই এখন ভারতের প্রযুক্তি, ভারতের শিক্ষিত লেবারদের ওপরেই ভরসা রাখছে বিদেশি কোম্পানিগুলো। ফলে পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তারপর যেন নতুন করে চিনের রফতানি ধীরে ধীরে নেমে গিয়েছে একেবারে তলানিতে। চিনের ইকোনমি ভালোরকম ধাক্কা খেয়েছে। চিনের সাধারণ মানুষের অবস্থাও বেজায় কাহিল। দাঁড়ান, দাঁড়ান। চিনের ইকোনমি তলানিতে যাবার কারণে কি আদৌ এ কটাই কারণ? নাকি আরও কিছু রয়েছে?
চিনের ইকোনমির গ্রাফ যে ম্যাসিভ ডাউনের দিকে, সেই শুরুটা আজ থেকে নয়। বরং কোভিডকালের সময় থেকেই। সেই সময় থেকেই চিনের ইকোনমিতে বড়সড় ধাক্কা লাগতে শুরু করে। কারণ একের পর এক সংস্থা তাদের ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হয়। এর সঙ্গে তো রয়েছে চিনের সুবিশাল হাউজিং বিজনেস। যা এখন প্রায় অন্ধকারে। যেখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার। চিনের সাধারণ মানুষ আর আবাসন কেনাতে তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এদিকে আবাসনের চাহিদায় বেনজির ভাটা নামছে, আবার অন্য দিকে জিনিসপত্র কেনার মধ্যেও চরম অনীহা প্রকাশ পাচ্ছে সাধারণ মানুষের। আসলে অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, চিনের সাধারণ মানুষ আসলে দিনে দিনে অদ্ভুত এক আর্থিক অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের কাছে যে টাকা রয়েছে সেই টাকা তাঁরা খরচ করতে চাইছেন না। আর খরচ করতে চাইছেন না বলেই চিনে সার্বিকভাবে আমজনতার চাহিদা- কেনার চাহিদা ধীরে ধীরে কমছে। আর কমছে বলেই এখন চিনের অর্থনীতির ভাগ্যে বড় ফাঁড়া।
তবে আরও একটা মেজর কারণ হচ্ছে চিনা উদ্যোগপতিদের সিদ্ধান্ত। মনে করা হচ্ছে, চিনে এখন জিনপিং-এর পপুলারিটি ক্রমশই কমতির দিকে। এর ফলে চিনের যে সকল উদ্যোগপতিরা রয়েছেন আজ তাঁরা কার্যত নিজের দেশের সরকারের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন না। আর ভরসা রাখতে চাইছেন না বলেই তাঁদের বিনিয়োগের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে জাপান। কিন্তু চিন এবং জাপান যে এখন দুই যুযুধান! তাহলে? অনেকেই বলছেন উদ্যোগপতিদের কিচ্ছু করার নেই। তাঁরা চাইছেন অন্য দেশে গিয়ে নিজের ব্যবসাকে আরও বাড়াতে। তাঁরা চাইছেন চিনা সরকারের নিয়ন্ত্রণের হাত থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে। আর উদ্যোগপতিদের এই ধরণের মানসিকতা কিন্তু যে কোন দেশের ইকোনমির জন্য বেশ ভয়ের। বর্তমানে যা অবস্থা, তারপর চিনের ইকোনমি যে ডাউনফলের দিকেই যাবে সে ব্যপারে অনেকেই নিশ্চিত। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, নিজের দলের মাথারাই নাকি জিনপিং-এর উপরে বেশ চটেই রয়েছেন। কারণ চিনা অর্থনীতি গোঁত্তা খাবার একটা কারণ জিনপিং-এর নেতৃত্ব বলেই মনে করছেন অনেকে। আর এই সুযোগ পূর্ণ মাত্রায় কাজে লাগিয়েছে ভারত। ভারত এখন বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ। এই দেশে ইয়ং পপুলেশনের সংখ্যাও এখন অনেক বেশি। আবার এই দেশ থেকেই পাওয়া যায় শিক্ষিত কিন্তু কম পারিশ্রমিকের লেবার। চিনে কিন্তু লেবার কস্ট ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। ফলে চিন থেকে ধীরে ধীরে সরে গিয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলো ম্যানুফ্যাকচারিং-এর জন্য ভারত বা ভিয়েতনামকেই বেছে নিচ্ছে। ভারতের অগ্রাধিকার এক্ষেত্রে অনেকটাই বেশি। আর ট্রেন্ড যেদিকে এগোচ্ছে, মনে করা হচ্ছে চিন যাকে একটা সময় গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বলা হত, আজ সেই চিনের অবস্থা ক্রমশ ঘোরালো হতে শুরু করেছে। ইকোনমিক ডাউনফল একরকম নিশ্চিত বলেই মনে করছেন চিনের সাধারণ মানুষ এবং অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ। অতএব, পদ্ম কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে চিন, খুব দূরে কি সেই দিন? আপনাদের মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক, শেয়ার মাস্ট। আর নতুন হলে ভুলবেন না সাবস্ক্রাইব করতে আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ