চিন থেকে পাততাড়ি গোটাচ্ছেন বিত্তবানদের একাংশ। স্বাভাবিকভাবেই, ড্রাগনের দেশে ক্রমশই কমছে ধনকুবেরদের সংখ্যা। মনে আছে নিশ্চয়ই, বেশ কয়েকমাস আগে হঠাৎ চিনের অন্যতম ধনবান ব্যক্তি জ্যাক মা উধাও হয়ে গেছিলেন। তাঁর কোন খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু সত্যিই কি তিনি গায়েব হয়ে গেছিলেন, নাকি অকস্মাৎ গেছিলেন শীতঘুমে? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে নেই। কারণ, চিন তার হাঁড়ির খবর বাইরে নিয়ে আসে না। তবে ইদানিং আবার চিন থেকে এই বিত্তশালী মানুষদের বেরনোর খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি বিষয়টা নিয়ে খানিক চিন্তায় রয়েছেন খোদ জিংপিং নিজেও। তাহলে এখন প্রশ্ন, কেন হঠাৎ বিত্তশালীদের একাংশ চিন ছাড়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন? সেই প্রশ্নের উত্তর দেব আপনাদের।

বিত্তবানদের চিন ছাড়ার ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগেই। আমরা সেই নিয়ে একটা প্রতিবেদন করেছিলাম। সেই প্রতিবেদন আপনাদের ভালো লেগেছে। চাইলে আই বটনে ক্লিক করে আপনারা সেই প্রতিবেদন দেখে নিতে পারবেন। তবে সেই ট্রেন্ড যে এখনো থিতু হয়নি, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেল যখন চিনা সংবাদমাধ্যমে ফের বিত্তবানদের দেশ ছেড়ে পালানোর কথা ভালোরকম ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২২ সাল অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ২ হাজার ৭০০ চরম বিত্তবান মানুষ রয়েছেন। তার মধ্যে প্রায় ৬০০ জনের বেশি চিনের বাসিন্দা। বর্তমানে নাকি চিনে সেই বিত্তবানদের সংখ্যা কমে হয়েছে ৫৬২। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চিনে বিত্তবানদের সংখ্যা এভাবে কমছে কেন? আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে চিনের সরকার। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ। কিন্তু শুধু যে চিনের বিত্তবানরা চলে যাচ্ছেন, সেটা নয়। নিয়ে যাচ্ছেন কাঁড়ি কাঁড়ি নিজেদের অর্জিত সম্পদ।

জানা যাচ্ছে, চিন থেকে কিভাবে নিজেদের টাকা বাইরে নিয়ে যাওয়া যায় তারই নানান উপায়, ফিকির বের করছেন তাঁরা। ফলে ভালোরকম চাপের মুখে পড়তে চলেছেন জিনপিং সরকার। এই মুহূর্তে চিন সরকারের একাধিক নিয়ম রয়েছে বিত্তবানদের জন্য। তাঁরা নাকি কোনভাবেই বিদেশে এক বছরে ৫০ হাজার ডলারের বেশি টাকা পাঠাতে পারবেন না। কিন্তু এই নিয়মকে থোরাই কেয়ার করে কেউ কেউ তো আবার বেআইনিভাবেই টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। চিনের আইনকানুন বড় কড়া। তারা কোন বিত্তবানদের সেভাবে মানে না। ফলে গত বছর সাংহাই-তে নাকি ১১০ লক্ষ পাউন্ডের বেশি অবৈধ বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একটা সময় ছিল, যখন কোভিডের আগে চিন থেকে প্রতি বছর ১৫ হাজার কোটি ডলার বিদেশে যেত পর্যটকদের হাত ধরে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। এদিকে ফেউয়ের মত তাড়া করছে মার্কিনী উচ্চ সুদ আর দুর্বল হয়ে পড়া চিনা মুদ্রা ইউয়ান। ফলে চিনের বিত্তবানরা এখন নিজেদের টাকা বাইরে নিয়ে যেতে চাইছেন।

গত বছর শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত চিনে টাকা লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দেয় ১৯৫০ কোটি ডলার মত। চিনা অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, এটা হয়েছে কারণ চিনের মুদ্রা বাইরে বেরিয়ে যাবার কারণেই। বিত্তবানরা মনে করছেন, যেভাবে চিনে আর্থিক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও টলোমলো, সেটা বিত্তবানদের ভালোরকম চিন্তায় রাখছে। ২০২১ সালে জিনপিং সরকার বলেছিল, বিত্তবানদের আরও বেশি করে সম্পদ দেশের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে। দেখুন, ২০১৫ সালের পর থেকে যখন ইউয়ান ডলারের নিরিখে পড়তে শুরু করে তখন ভালোরকম হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়ে চিন। দেশের সম্পদ নিজের হাতে নেবার চেষ্টা করতে শুরু করে বেজিং। আর এখানেই বেঁকে বসেন তাঁরা। এছাড়া চিন সবসময়ই অপেক্ষাকৃত আয়তনে ছোট দেশগুলোর ওপরেও প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। এখন আবার দক্ষিণ চিন সাগরে নতুন করে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। তবে এসবের মধ্যেও চিনের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা সমূহ। আপনারা কি মনে করেন, চিন কি আর্থিক ভাবে ভেঙে পড়বে? জানান কমেন্ট বক্সে।

বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ