Trending
![business Prime News-](https://businessprimenews.com/wp-content/uploads/2023/04/mughal-history-we.jpg)
সংগ্রাম সিংহর ইতিহাস থাকবে বাবর ছাড়া?
হুসেন শাহ ছাড়া কি শশাঙ্কর ইতিহাস সম্পূর্ণ হতে পারে?
মধ্যযুগের অসম্পূর্ণ অধ্যায় পাঠ করেই কি ভারতের ইতিহাস ব্রিটিশ শাসনের যুগে ঢুকে পড়বে?
হ্যাঁ এবার অন্তত তাই হবে। সিলেবাস থেকে প্রায় ৫০০ বছরের ইতিহাস এককোপে বাদ। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস। পরিবর্তিত সিলেবাসকে ভয়ঙ্কর বলে দাবি করেছেন এরাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এখানেই শেষ নয়। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে, মুঘল যুগের ইতিহাসকে কাঁটাছেঁড়া করার পর কোপ পড়ল গান্ধীহত্যার ইতিহাসেও। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর Historyএবং Political Science-এর বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের হিন্দুত্ববাদী পরিচয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে মহাত্মা গান্ধীর আপসহীন অবস্থান থেকে শুরু করে দু’দশক আগের গুজরাট রায়ট- সবই এখন বাদের খাতায়। এক কথায় মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলা যেকোনো বিষয়ই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে আর পড়াবে না সিবিএসই, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশ স্কুলশিক্ষা বোর্ড।
এলাহাবাদ হয়ে গিয়েছে প্রয়াগরাজ। রাষ্ট্রপতি ভবনের মোঘল গার্ডেনের পরিবর্তিত নাম হয়েছে অমৃত গার্ডেন। আর এবার শিক্ষাক্ষেত্রেও গেরুয়াকরণ? এসব প্রশ্ন নিশ্চয়ই আপনাদের মধ্যেও ঘুরপাক খাচ্ছে। হিন্দুত্ব প্রমোট করতেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত। সেটা কতটা ঠিক সেটাই চলুন দেখে নেওয়া যাক।
১৪ জুলাই ২০২১। NCERT texk book-এ বিশেষ কিছু চেঞ্জ নিয়ে একটি লেটার পাবলিশ করে ইন্ডিয়ান হিস্টরি কংগ্রেস। যেখানে বলা হয়, এই পরিবর্তন নাকি অ্যাকাডেমিক চেঞ্জকে নয় বরং পলিটিক্যাল কারণেই করা হয়েছে। ওই বছরই রাজ্যসভা সেক্রেটরিয়েট কমিটি থেকে একটি নোটিফিকেশন বের করা হয়, যেখানে বলা হয় পার্লামেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি শীঘ্রই সিলেবাস পরিবর্তন নিয়ে NCERT-র সঙ্গে কথা বলবে। যাতে ন্যাশনাল হিরোদের Reviled Historical fact সম্বন্ধে detailed discussion থাকবে। এছাড়াও Indian History-র প্রতিটা পিরিয়ড নিয়ে equal discussion করা থাকে। এবং আমাদের দেশের বীর মহিলাদের ইতিহাসও যেন হাইলাইটেড থাকে ছাত্রছাত্রীদের কাছে। ২০২২ সাল নাগাদই সিলেবাসের এই পরিবর্তন নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের ঘোষণা সেরেছিল NCERT।
কাজেই এই ঘোষণা নতুন নয়। Controversy-টা নতুন। দুদিন আগে NCERT-র এই নতুন সিদ্ধান্তের সঙ্গে সুর মেলায় উত্তরপ্রদেশ সরকার। ঠিক তারপরই তারপরই শুরু হয় বিতর্ক। কিন্তু তাদের goal achieve করার জন্য তারা কি কি পরিবর্তন আনল সিলেবাসে?
প্রথমেই পাকিস্তানি উর্দু কবিতার হিন্দি ট্রান্সলেটেড ভার্সন বাদ দিয়েছে NCERT । যেটা ক্লাস ১০-এর ডেমোক্রেটিক পলিটিক্স-২ বইতে রয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে ক্লাস ১০-এর সোশ্যাল সায়েন্স বইয়ের চ্যাপ্টার নাম্বার চার। impact of globalization on agriculture. Kings and chronicles এবং The Mughal Courts- ক্লাস ১২ এর বই থেকে বাদ পড়েছে এই দুটি শীর্ষক চ্যাপ্টার। এছাড়াও বাদ পড়েছে ঠাণ্ডা যুদ্ধ এবং নেহেরুর পদক্ষেপ রিলেটেড টপিকও। তবে এগুলো ছাড়াও আরও অনেক চেঞ্জ রয়েছে। But I think you get the point। NCERT জানিয়েছে যে, সিবিএসই জানিয়েছিল ক্লাস ৯-১২ অবধি সিলেবাসের চাপ প্রায় ৩০% কমাতে হবে। সিলেবাসকে র্যাশনালাইজ করার জন্যই নাকি এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে NCERT। একই কন্টেন্টের রিপিটেশন না হয়, সেই জন্যেই নাকি এই সিদ্ধান্ত। ১৫০০-র বেশি শিক্ষাবিদের সঙ্গে আলোচনা করার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই র্যাশনালাইজ করার সিদ্ধান্ত নতুন নয়, কাজেই এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় কোন প্রবলেম হবে না। তাছাড়া শুধু তো মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস বাদ দেওয়া হয়নি। আরও অনেক চেঞ্জ এসেছে। তবুও শুধু একটা চেঞ্জকেই বারবার হাইলাইট করা হচ্ছে। তবে এটাও ঠিক ১৫০০-র বেশি শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলেই NCERT-র ডিসিশন ঠিক হতে হবে?
এদেশের আনাচে কানাচে কত জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে মুঘলদের নিদর্শন-স্থাপত্য-শৈলী। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সিবিএসই-র সেভেন্থ স্ট্যান্ডার্ডের বইতে কিছুটা একতরফাভাবে দেখানো হয়েছে। পজিটিভ দিকটা বেশি হাইলাইটেড হয়েছে। ক্লাস ৮ এর বইতে বলা হয়েছে মাইসোরের টিপু সুলতান ছিলেন মাইসোরের বাঘ। ভারতকে ব্রিটিশ ফ্রি করার জন্য তার ভূমিকা সত্যিই অনস্বীকার্য। আমরা অবশ্যই একমত। কিন্তু সেখানে এই কথাটা বলা হয়নি যে টিপু সুলতান ফ্রেঞ্চদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জয় পাওয়ার জন্য। এবং ডিল হয়েছিল যে, ব্রিটিশ ফ্রি ভূখন্ড তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে। তাহলে তার লড়াই কি দেশ বাঁচানোর জন্য ছিল নাকি নিজের রাজত্ব বাঁচানোর জন্য? এরকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে গর্বের সঙ্গে বলা হয়েছে নন-ইসলামিকদের থেকে সুলতানেরা বেশি ট্যাক্স আদায় করতেন। মনে রাখবেন আমি কিন্তু মুঘল রুলারদের কথা বলছি। কোন রিলিজিওনের কথা নয়। আমাদের কারিকুলামে বেশ কিছু আধা ইনফরমেশন দেওয়া রয়েছে যার আরও অনেক বেশি exposure পাওয়ার কথা ছিল।
আমাদের দেশের ইতিহাস বইতে মুঘল রুলারদের ইতিহাসকে এতটাই ডিটেলে কভার করা হয়েছে যে আমদের মধ্যে অনেকেই এই ইন্ডিয়ান রুলারদের কথাই জানেন না। কাজেই তাদের কন্ট্রিবিউশনের কথা জানা তো দূরের কথা। সম্রাট ললিতাদিত্যর কথা জানেন? যে কিনা কাশ্মীরের আলেকজান্ডার হিসেবে পরিচিত?
৭২৪-৭৬১ সাল পর্যন্ত যিনি কাশ্মীরে রুল করেছিলেন এবং চীন থেকে ইরান পর্যন্ত নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। সম্রাট অশোক, রাজা দশরথ এদের সম্বন্ধে কতটুকু জানা আছে? ছত্রপতি শিবাজি, যিনি ১৫০-রও বেশি যুদ্ধ লড়েছিলেন মুঘল রুলারদের বিরুদ্ধে। একটাও হারেননি। যাকে হারাতে ঔরঙ্গজেবকে প্ররোচনার পথ বেছে নিতে হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন নৃশংস অত্যাচার সহ্য করেও ছত্রপতি শিবাজিকে একটুও টলানো যায়নি। এই ইতিহাসের কি আরও exposure পাওয়ার কথা ছিল না?
আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থার কথাই ধরুন। আপনার স্কুলের আপনার ব্যাচের অন্ততপক্ষে ৬০% মানুষ বিদেশে settled। কাওকে জিজ্ঞেস করলেও সে এটাই বলে যে, সে বিদেশে গিয়ে settled হতে চায়। কারণ ইতিহাসের পাতায় পাতায় তারা ইন্ডিয়ানদের শুধু শোষিত হতেই দেখেছে। শাসনটা দেখেনি। তাদের কাছে এটা অজানা যে ইন্ডিয়ান রুলাররাও আসলে কত বড় বীর ছিলেন। এবং আমরা তাদের উত্তরাধিকারি। ভারতকে এগিয়ে যেতে গেলে, ভারতকে জিততে হলে, এই বিষয়গুলো আরও বেশি হাইলাইটেড হওয়া প্রয়োজন। আমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে তবেই না তারা গর্ব করবে। এবং শুধু হিস্ট্রি নয়, ইন্ডিয়ান কালচার এবং ট্র্যাডিশনকেও পজিটিভ লাইটে শো-কেস করাটা জরুরী। অ্যাটলিস্ট আজকের পর এটা কারও মনে না হয়, যে ওয়েস্টের কালচার আমাদের থেকে অনেক বেশি ভালো।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ