Trending
নাহ, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে বিএসএনএল-কে বাঁচানো অসম্ভব। কেন্দ্রীয় সরকার মুখে বিএসএনএল নিয়ে এতো আশাভরসার কথা শোনাচ্ছেন। কিন্তু লাভের লাভ? বিএসএনএল যেন দিনে দিনে আরও কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। বেসরকারি কিছু কোম্পানির জন্য। তার মধ্যে শীর্ষে জিও আর পিছনে তাড়া করছে এয়ারটেল। যা অবস্থা, তাতে বিএসএনএলের পক্ষে এই মার্কেট লিড করার কথা দেশের আমআদমিকে এমনিই ভুলে যেতে হবে। কেন, সেটা ডেটা দিয়ে আর কিছু তথ্য দিয়ে আপনাদের বলছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, বিএসএনএল- যাকে ছাড়া ব্রডব্যান্ড সার্ভিস একটা সময় অসম্ভব মনে হত, আজ সেই বিএসএনএলের এমন মৃতপ্রায় অবস্থার জন্য দায় কার উপর চাপাবেন? কেন্দ্রীয় সরকার তো এই দায় এড়াতে পারবে না। পুরোটা বলছি এই প্রতিবেদনে। কেন বিএসএনএল মার্কেট থেকে কার্যত মুছে যেতে চলেছে।
আমরা যতই বিএসএনএল নিয়ে আশাবাদি থাকি না কেন আপাতত ব্রডব্যান্ড মার্কেটে বিএসএনএলের এন্ট্রি একেবারেই হেরে যাওয়া সৈনিকের মতন। কোম্পানির যা অবস্থা, সেটা দেখে মনে হতে পারে বিএসএনএল এখন ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দার হয়ে গিয়েছে। ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের একটি রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালে জিও-র দেশব্যাপী ব্রডব্যান্ড কানেকশন ছিল মাত্র ০.৮ মিলিয়ন মতন। এয়ারটেলের সাবস্ক্রাইবার ছিল আড়াই মিলিয়নের আশেপাশে। আর বিএসএনএলের ব্রডব্যান্ড কানেকশন ছিল একেবারে উল্টো। সেই বছর তাদের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ছিল ৮.৩৯ মিলিয়ন। এবার সেখান থেকে যদি জাম্প কাট দিয়ে ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারি মাসে চোখ রাখি, তাহলে দেখব খেলা একেবারে ঘুরিয়ে দিয়েছে জিও। এখন সে মার্কেট লিড করছে, দ্বিতীয় পজিশনে রয়েছে এয়ারটেল আর বিএসএনএলের অবস্থা টি-২০-র কোলকাতা নাইট রাইডারস-এর মতন। পাত্তাই পাচ্ছে না। পাত্তা পাচ্ছে না নাকি ইচ্ছাকৃত পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না? বেসরকারিকরণের হাওয়া দিচ্ছে। অম্বানি, আদানির ধনদৌলত না-বাড়ালে কি আর চলে? ইয়ে, মানে সরকারি কোম্পানিগুলো নিলামে উঠছে। সুতরাং, বিএসএনএল এখন ডানা কাটা পাখি। তাই মার্কেটে টিকে থাকার জন্য ভয়ঙ্কর স্ট্রাগল করতে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে বিএসএনএলের ব্রডব্যান্ড সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা কমে হয়েছে ৭.০৬ মিলিয়ন। আর জিও পৌঁছে গেছে ৮.৮ মিলিয়ন মানুষের ঘরে। এয়ারটেল রয়েছে ৭ মিলিয়নে, কিন্তু মার্কেট অ্যানালিস্ট-রা বলছেন, এয়ারটেল যেরকম ৫জি স্পিডে এগোচ্ছে, তারপর বিএসএনএল-কে ধুলোর মত মার্কেট থেকে উড়িয়ে দিতে এয়ারটেলের বেশি টাইম লাগবে না। তার কারণ কী? অভিযোগ (১) পরিকাঠামো উন্নয়নে অত্যন্ত কম বিনিয়োগ। অভিযোগ (২) দুর্বল সার্ভিস।
এখন বিষয়টা হচ্ছে, এই সবকিছুর জন্য বিএসএনএলের ইন্টারনাল দুর্বল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকেই দায়ী করছেন অনেকে। আদৌ কি সেটা ঠিক? ফাইবার-টু-দ্য-হোম সেগমেন্ট বা সংক্ষেপে যাকে বলা হয় এফটিটিএইচ সার্ভিস- তার আন্ডারে একের পর এক কানেকশন লুজ করছে বিএসএনএল। এই এফটিটিএইচ সেগমেন্টে কিন্তু বিএসএনএল পিছিয়ে জিও এবং এয়ারটেলের থেকে। জিও বর্তমানে ৮.০২ মিলিয়ন ঘরে এই এফটিটিএইচ সার্ভিস দিচ্ছে। অন্যদিকে এয়ারটেল দিচ্ছে ৫.৯৮ মিলিয়ন ঘরে। আর বিএসএনএলের হাতে আছে মাত্র সাড়ে তিন মিলিয়নের আশেপাশে সাবস্ক্রাইবার। মাঝেমধ্যে বড় অবাক লাগে, যখন দেখা যায় সরকার বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে সুবিধে করে দেবার জন্য ঘরের লক্ষ্মীকে পায়ে ঠেলে দেয়। অবশ্য, লক্ষ্মী আসা নিয়ে কথা। ঘর-বাহির এসব দেখে কোন লাভ হবে? কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলিহেলনে এখন সর্বত্র ৫জি নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে। দেশের দূর থেকে দূরতম প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে সার্ভিস। আর বিএসএনএল ৪জি সার্ভিস চালু করতে গিয়েই রীতিমত হোঁচট খেয়েছে। আর ব্রডব্যান্ড পরিষেবা- সেটা তো আপনাদের সামনেই তুলে ধরলাম। সরকারের সাহায্য পাচ্ছে না বলাটা ভুল। কিন্তু মার্কেটে খেলতে হবে তো। টিকে তো থাকতে হবে। এ যেন মনে হচ্ছে, বলিউডে নিজের জায়গা পাকা করার জন্য ঠেলে দেওয়া হয়েছে হিরো আলমকে। সরকারের গাফিলতি তো রয়েছেই। আর যাই হোক, বিএসএনএলের অবস্থা তো এয়ার ইন্ডিয়ার মতন ছিল না। তা এয়ার ইন্ডিয়া না-হয় টাটার মত কোম্পানি নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। কিন্তু বিএসএনএল- না আছে হোমে, না আছে যজ্ঞে।
এখন বিএসএনএলের সঙ্গে প্রচুর মানুষের কর্মভাগ্য জড়িয়ে। তারপর জিও, এয়ারটেল যতই আসুক, আজকের মার্কেটে বিএসএনএল এখনো দেশবাসীর সেন্টিমেন্ট। সুতরাং, বিএসএনএলের ভবিষ্যৎ এখনো পাকাপোক্ত নয়। সরকার ধরি মাছ না ছুঁই পানি করে বিএসএনএলের ভাগ্যকে ঝুলিয়ে রেখেছে। আর ক্ষীর দিনের শেষে কে খাচ্ছেন? মিঃ অম্বানি। সর্বত্র জিও-র জয়জয়কার। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই ট্র্যাডিশন পাল্টে যাবে। বিএসএনএলের অবস্থা এখন রাহুল গান্ধীর মত। আশা নিয়ে মাঠে নেমেছে ব্যাটিং করতে। কে বলতে পারে হয়ত কর্ণাটকের মতন খেলা ঘুরে যাবে বিএসএনএলের ভাগ্যে। বিএসএনএল চেষ্টা করছে আগামী চার বছরে ব্রডব্যান্ড কানেকশনের জন্য ৪০ মিলিয়ন ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবার। এফটিটিএইচ কানেকশনের নিরিখে কেরালা, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, পঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং রাজস্থানে একটু বেটার পজিশনে রয়েছে বিএসএনএল। এমনকি বিএসএনএল-কে এফটিটিএইচ পরিষেবায় সবথেকে বেশি লাভের গুড় দিয়েছে কেরালাই। সুতরাং হোপ ফোর দ্য বেস্ট। আপনি কি মনে করেন? ব্রডব্যান্ডের কম্পিটিশনের বাজারে বিএসএনএলের ঘুরে দাঁড়ানোটা কতটা টাফ?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ