Market
Introduction:
বঙ্গোপসাগর। সুনীল জলরাশির মোট আয়তন প্রায় ২১ লক্ষ ৭২ হাজার বর্গ কিলোমিটার। তার মধ্যে বাংলাদেশের মালিকানায় রয়েছে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। যা প্রায় বাংলাদেশের আয়তনের সমান। আর এই বঙ্গোপসাগরকে ঘিরেই বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মজবুত হবার আশা দেখাচ্ছে। ইংলিশে যাকে বলা হয় ব্লু ইকোনমি। প্রাণীজ সম্পদে পরিপূর্ণ এবং অপ্রাণীজ সম্পদের বিশাল ভান্ডার রয়েছে বাংলাদেশের মালিকানাধীন বঙ্গোপসাগরের তলায়। এত সমৃদ্ধ একটি ইকোনমির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি। একদিকে যখন ভারত, মিয়ানমারের মত দেশ ব্লু ইকোনমির ওপর জোর দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে, তখন বাংলাদেশের সামনে কোন কোন সমস্যা রয়েছে যা বাংলাদেশকে পিছিয়ে রাখছে অন্যান্য দেশের থেকে? আসুন আজ এই বিষয়েই একটা বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরব আমরা বিজনেস প্রাইম নিউজের পক্ষ থেকে।
Bangladesh Bay of Bengal:
বঙ্গোপসাগরের সীমারেখা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত এবং মায়ানমারের একটা দীর্ঘ বিরোধ ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাংলাদেশের পক্ষে গেলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার নিজেদের অধিকারে নেয়। যেখানে রয়েছে প্রাণীজ এবং অপ্রাণীজ সম্পদের বিপুল সম্ভার। এই প্রাণীজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে যেমন ৪৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, শামুক বা ঝিনুক রয়েছে ৩৩৬ প্রজাতির, কচ্ছপ রয়েছে ৭ প্রজাতির, লবস্টার রয়েছে ৫ প্রজাতির, চিংড়ি রয়েছে ৩৬ প্রজাতির, এবং সামুদ্রিক ঘাস বা আগাছা রয়েছে ২০০ প্রজাতির, তেমনি অপ্রাণীজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস বা চুনাপাথর ছাড়াও ১৭ ধরণের মূল্যবান খনিজ সম্পদ। তার মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য জিরকন, ম্যাগনেটাইট, মোনাজাইট, কায়ানাইট। মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশের মালিকানায় অন্তর্ভুক্ত বঙ্গোপসাগরে রয়েছে ১৭ লক্ষ টনের বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ। যা বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমিকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করতে পারবে। এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে বাংলাদেশকে। কেটে যেতে পারে বাংলাদেশের আর্থিক দুশ্চিন্তা। তবু, বেশ কিছু সমস্যার কারণেই আজ বাংলাদেশ নিজের অধিকারভুক্ত বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে ব্লু ইকোনমিকে ঠিকঠাক উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারছে না বাংলাদেশ।
Why Blue Economy failed in Bangladesh:
সত্যি কথা বলতে গেলে, সমুদ্রকে ব্যবহার করে যে কর্মযজ্ঞ চালানো যেত, বাংলাদেশ এখনো সেটা করে উঠতে পারেনি। বিশ্বব্যাঙ্কের একটি তথ্য বলছে, ২০১৬ সালে শুধুমাত্র সমুদ্র নির্ভর পর্যটন থেকেই বিশ্বে আয়ের অঙ্ক দাঁড়িয়েছিল ২ ট্রিলিয়ন ডলার মতন। আবার দেখুন, বিশ্ব বাণিজ্যকে চালিয়ে নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকে সমুদ্রপথের। তেল, গ্যাসের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করছে স্রেফ মাছ উত্তোলনের জন্যই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা পৌঁছতে পারেন সমুদ্রের ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। কিন্তু তার বাইরেও রয়েছে লং লাইন ফিসিংয়ের অপূরণীয় সুযোগ। কিন্তু বাংলাদেশের ফিশিং ইন্ডাস্ট্রি কি আদৌ ডেভেলপড? অনেকেই মনে করছেন বাংলাদেশের ফিশিং ইন্ডাস্ট্রি একেবারেই নিজেদের ডেভেলপড করতে পারেনি। তার জন্য ব্যর্থতার দায় কিছুটা হলেও বর্তায় সরকারের ওপরেই। কারণ, বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদের কাছে বঙ্গোপসাগরের অনেকটাই অজানা রয়ে গিয়েছে। ৫০ কিলোমিটারের বাইরে সমুদ্রের আরও গভীরে পৌঁছনোর জন্য যে প্রযুক্তি, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নৌ-যানের প্রয়োজন, আজ তার কিছুই নেই বাংলাদেশের হাতে। এমনকি সমুদ্র নির্ভর খনিজ উত্তোলনের প্রযুক্তিও বাংলাদেশ সরকার ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য ব্লু ইকোনমিক সেল বলে একটি প্রশাসনিক সেল গঠন করা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু দেখা গেল, এই সেল বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমিকে মজবুত করার ব্যপারে তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। দক্ষ মানুষের অভাবও কিছুটা কাজ করছে এর পেছনে। আর যে কারণে সমুদ্র নির্ভর ওষুধ শিল্পকেও ঠিকঠাক শেপ দিতে পারছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ যে ভৌগলিক সুবিধা পায় তাকে ব্যবহার করেও অর্থনীতি মজবুত করতে পারবে। কারণ বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ যেমন নেপাল বা ভুটানের মত ল্যান্ডলকড দেশগুলো সমুদ্রপথে বাণিজ্য করতে গেলে ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশের তৈরি বন্দরগুলো। তার জন্য বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বারবার উদাহরণ টানেন ভারতের ওএনজিসি বা রিলায়েন্স থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতন দেশগুলোর। অস্ট্রেলিয়া শুধুমাত্র সমুদ্রকে ব্যবহার করেই ৪৪ বিলিয়ন ডলার কোষাগারে ঢোকাতে পারছে। মনে করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে অঙ্কটা ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চলেছে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়াও চিন, জাপানের মত দেশগুলোও ব্লু ইকোনমির জনপ্রিয়তাকে বুঝতে পেরেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র সমুদ্রকে ঘিরেই ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ চলছে। এই সবই সম্ভব হয়েছে উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষ কারিগরি শক্তি, এবং সরকারের জোরালো সমর্থন থাকার কারণেই।
Conclusion:
হিন্দু শাস্ত্রে বঙ্গোপসাগরের নাম ছিল মহোদধি। জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর এই বঙ্গোপসাগর ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমারের মত দেশগুলিকে যুগ যুগ ধরে দেখিয়ে আসছে অর্থনীতি মজবুত করার দিশা। কিন্তু আজ অন্যান্য দেশ সেই দিশা খুঁজে পেলেও ব্লু ইকোনমিকে মজবুত করতে অধরা রয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ। আর যে কারণে মাত্র কয়েক কিলোমিটার গভীরে পৌঁছে বিশেষ কয়েকটি মাছ ধরা ছাড়া বাংলাদেশ বারবার কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে বঙ্গোপসাগরকে। ধাক্কা খাচ্ছে বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি। প্রতিবেদনটি যদি ভালো লেগে থাকে, তবে লাইক করুন, শেয়ার করুন এবং সাবস্ক্রাইব করুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ