Trending
অধিকাংশ ভারতীয়দের যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন দেশে আপনি চাকরি করতে চান, তাহলে তারা এক নিঃশ্বাসে বলবেন আমেরিকা। আমেরিকা প্রতিটি ভারতীয়র কাছে স্বপ্নের মত। সেখানে গিয়েই চাকরি করে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করে নিজের জীবনকে সহজ, সরল এবং সুন্দর বানাতে চায়। কিন্তু কথায় বলে, দূর থেকে যা চকচক করে সেটাই সোনা নয়। আমেরিকায় চাকরি করে ফিউচার তৈরির বিষয়টাও এখন তেমন একটা জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। কারণ, ভারতীয়দের আমেরিকায় গিয়ে চাকরি করার স্বপ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু খোদ আমেরিকানরাই এখন দলে দলে পাড়ি দিচ্ছেন ইউরোপে। চাকরি করে অর্থ উপার্জনের আশায় তাঁরা আর আমেরিকার ওয়ার্ক কালচারে তেমন একটা বিশ্বাসি নন। বরং ইউরোপের বিভিন্ন শহরে গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন আমেরিকানরা মার্কিন মুলুক ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে নিজের কেরিয়ার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন? সেই উত্তর খুঁজব আজকের প্রতিবেদনে।
গুগল, অ্যালফাবেট, মেটা, অ্যাপল, অ্যামাজন- পৃথিবীর সকল বড় বড় সংস্থার অফিস রয়েছে মার্কিন মুলুকে। অধিকাংশ ভারতীয়রা উচ্চ শিক্ষার পর এই সকল কোম্পানিতে গিয়ে ভবিষ্যতের জীবন আরও মসৃণ করতে চান। কিন্তু খোদ মার্কিন নাগরিকরাই চাকরির আশায় দলে দলে পাড়ি দিচ্ছেন ইউরোপে। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত একটা সমীক্ষা করা হয়েছিল। আর এই ১৫ বছরে প্রায় ৯ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কাটানোর জন্য পাড়ি দিয়েছেন। এবং সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে পৌঁছে যাচ্ছে প্রায় ৪৫% মতন। আমরা সকলেই জানি, আমেরিকা পৃথিবীর অন্যতম পুরনো ডেমোক্র্যাটিক কান্ট্রি। একইসঙ্গে বর্তমান বিশ্বের সুপারপাওয়ার বলতে সবার প্রথমে নাম আসে আমেরিকার। আমেরিকার ডলার আজ গোটা বিশ্বের অর্থনীতির একটা মূল ভিত। তারপরেও কেন আমেরিকা ছাড়ার প্রশ্ন? মার্কিন মুলুকের ওয়ার্ক কালচার কি তাঁদের পছন্দ হচ্ছে না? যদি এই প্রশ্নটা করেন, তাহলে বলব, হ্যাঁ। আমেরিকার মতন দেশের ওয়ার্ক কালচার তাদের কাছে দিন দিন অত্যন্ত স্ট্রেসফুল হয়ে যাচ্ছে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। মার্কিন নাগরিকদের ইউরোপ পাড়ি দেবার প্রসঙ্গ যদি ওঠে, তাহলে প্রথমেই বলতে হবে ডেলি রুটিন। খোদ মার্কিন নাগরিকরাই তাঁদের ডেলি রুটিন নিয়ে খানিক বীতশ্রদ্ধ। তার পেছনে অবশ্যই কাজ করছে মূল্যবৃদ্ধি। তাঁদের বক্তব্য, আমেরিকা আর আগের মতন নেই। স্বচ্ছল জীবনযাপন করা সেই দেশে দিন দিন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মোদ্দা কথা, এই দেশে কস্ট অফ লিভিং দিন দিন বাড়ছে। ইলেকট্রিক বিল থেকে খাদ্যপণ্য, মেডিক্যাল, স্কুল-কলেজে পড়াশুনো সব কিছুই সেখানকার সাধারণ মানুষের কাছে ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে উঠছে। জানা যাচ্ছে, আমেরিকায় খরচা যেভাবে বাড়ছে, তাতে সাধারণ মানুষ তাঁদের বেসিক নিডসগুলোই পুরণ করতে গিয়ে কার্যত হাঁকপাঁক খাচ্ছেন। আমেরিকায় সরকারি স্কুলে পড়াশুনো ফ্রি। কিন্তু প্রাইভেট স্কুলে পড়াশুনোর খরচা সামাল দিতে পাচ্ছেন না সেখানকার মা-বাপরা। এছাড়া আমেরিকার কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ শিক্ষার খরচটাও দিন দিন মহার্ঘ্য হয়ে উঠছে। স্কলারশিপ পেলে তাও কিছুটা রক্ষে, না-হলে পড়াশুনোর চাপে সংসার সামলানো বড় দায় হয়ে যাচ্ছে। আমরা সকলেই জানি, ১৮ বছরের পর সেখানকার ছেলেমেয়েরা নিজের পড়াশুনোর খরচ চালানোর পাশাপাশি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে। অতীতে একজন ছাত্রছাত্রীর কাছে বিষয়টা অতটা কঠিন না-হলেও ইদানিং তারাও আর সামাল দিতে পারছে না। পার্ট টাইম হলেও রয়েছে চাকরি টিকিয়ে রাখার কঠিন চাপ, সঙ্গে পড়াশুনো। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের কাছে এই লাইফস্টাইল ভয়ঙ্কর স্ট্রেসফুল হয়ে উঠছে। এছাড়া মেডিক্যাল ফেসিলিটি সেখানকার সরকার অনেক কিছুতেই ফ্রি করে রেখেছে। কিন্তু ইনশিওরেন্স না-থাকলে তখন সামান্য চোটের জন্য লম্বাচওড়া মেডিক্যাল বিল ধরিয়ে দিচ্ছে সেখানকার হাসপাতালগুলো। ফলে কঠিন অসুখ হলে মার্কিনী নাগরিকদের পথে বসার মত উপক্রম হয়।
এবার আসা যাক কনজিউমার গুডসের কথায়। আমেরিকায় কনজিউমার গুডসের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশের বেশি। বাড়ি ভাড়া হোক বা হেঁশেলের খরচা- সব কিছুরই লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। আর সেটাই মার্কিনী নাগরিকদের ভবিষ্যৎকে বড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কিন্তু যদি আমরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে বলতে হবে, ইউরোপে এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বেশ আশার আলো দেখিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড বা আইএমএফ। তাদের বক্তব্য, ইউরোপে ২০২১-২০২৬ সাল পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি আমেরিকার তুলনায় অনেকটাই কম হবে। এবং সেটা ঘোরাফেরা করবে ২ শতাংশের আশেপাশে। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই বড়সড় মন্দা আসতে চলেছে মার্কিন মুলুকে। ফলে আমেরিকায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আগামীতে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সম্প্রতি আমেরিকা ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি দেওয়া বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থীদের ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, প্রায় ১৬% মার্কিন নাগরিকের বক্তব্য তাঁরা ইউরোপ যেতে চাইছে, কারণ এখন তাঁরা একটা হেলদি লাইফস্টাইল লিড করতে চায়। এখান থেকেই পরিষ্কার যে, আমেরিকায় সাধারণত উপার্জনের নিরিখে বিচার করা হয় কে সাকসেসফুল আর কে সাকসেসফুল নয়। সেদিক থেকে দেখলে, ইউরোপে চাকরি সঙ্গে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন মেনটেন করাটা সেখানকার ট্র্যাডিশন।
এছাড়া জব অপরচুনিটি। মার্কিন মুলুকে চাকরি কম- এই কথাটা বলা একেবারেই ঠিক হবে না। সেই দেশে কর্মীদের মাসের শেষে মোটা অঙ্কের মাইনেও পাওয়া যায়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, একজন সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের চাকরি পাওয়াটা খোদ নিজের দেশেই প্রতিদিন যেন আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সেদিক থেকে আমরা যদি ইউরোপের দিকে নজর ঘোরাই, দেখব, সেই দেশেও কর্মসংস্থান রয়েছে যথেষ্ট। একইসঙ্গে চাকরি পাওয়ার জন্য মার্কিন মুলুকের মতন অত কাঠখড় তাদের পোড়াতে হয়না। মার্কিন নাগরিকরা মনে করছেন, ইউরোপে ওয়ার্ক কালচার আমেরিকার থেকে অনেক বেটার। ফলে তাঁরা সহজেই নিজের কর্মদক্ষতা প্রমাণ করে একটা ভালো অঙ্কের স্যালারি নিশ্চিত করছেন। এবং তাঁরা মার্কিন মুলুক ছেড়ে ইউরোপে কর্মসংস্থানের দিকে ঝুঁকছেন। একইসঙ্গে বলা হচ্ছে, আমেরিকায় যেখানে পার্সোনাল লাইফ এবং প্রোফেশনাল লাইফের মধ্যে তাঁরা কোন ফারাক খুঁজে পাচ্ছিলেন না, সেখানে ইউরোপে ওয়ার্ক কালচার তাঁদের পার্সোনাল লাইফ এবং প্রোফেশনাল লাইফের মধ্যে খুব ভালোভাবে ব্যালেন্স করার কাজটা করছে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, মার্কিন নাগরিকরা তাহলে ইউরোপের কোন কোন দেশে সবচেয়ে বেশি কাজের সুযোগ খুঁজছেন? ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি এবং গ্রিসের মতন ইউরোপিয়ান কান্ট্রিতে সবথেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। সব শেষে একটাই প্রশ্ন, ভারতীয়দের মধ্যেও কি আমেরিকা ছেড়ে ইউরোপে কর্মসংস্থানের দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিৎ? একটা সুস্থ, স্বাভাবিক ওয়ার্ক কালচার তৈরি করার জন্য ভারত সরকারের কোন কোন জায়গায় বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন? সঙ্গে আপনাদের চোখ আটকে থাকুক বিজনেস প্রাইম নিউজে।
জীবন হোক অর্থবহ