Trending
হাই ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাক্টিভ অরোরাল রিসার্চ প্রোগ্রাম। সংক্ষেপে যাকে বলা হয় হার্প। মার্কিন প্রশাসনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে গোপনীয় একটি প্রযুক্তি। অনেকেই বলে থাকেন, হার্প হল সেই টেকনোলজি যাকে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে আমেরিকা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমেই বিরোধী দেশে ঘটানো যেতে পারে ভূমিকম্প, বন্যার মতন একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ছাড়খাড় করে দেওয়া যেতে পারে সেই দেশের অর্থনীতি। অনেকেই মনে করছেন তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের পেছনে আমেরিকার এই হার্প টেকনোলজিই নাকি দায়ি। সত্যিই কি তাই? আজকের প্রতিবেদনে এই ধোঁয়াশাই কিছুটা পরিষ্কার করা যাক। জানার চেষ্টা করা যাক, হার্প টেকনোলজি আসলে কী? আর কেনই বা সেটা অন্য দেশের জন্য ভয়ঙ্কর থ্রেট হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আমেরিকা এমন একটি দেশ, যার নীতি নির্ধারণ গোদা চোখে দেখলে খুব সহজ, সাদাসিধে মনে হয়। কিন্তু মগজ খাটিয়ে বিচার করলে তখন প্রশ্নের ওপর প্রশ্ন তৈরি হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। আমেরিকাই চিরকাল নিজেকে বিশ্ব রাজনীতির হর্তা-কর্তা-বিধাতা মনে করে এসেছে। তাই আমেরিকা কখনোই চাইবে না, বিশ্বের অন্য কোন দেশ মার্কিন মুলুকের সমকক্ষ হয়ে উঠুক। সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতন বোকামি আমেরিকা করে না। তার কারণ একটাই- এটা টেকনোলজির যুগ। তাই প্রযুক্তিগত দিক থেকে নিজেদের সুপিরিয়র বানানোর চেষ্টা বহুদিন ধরেই করছে আমেরিকা। আর এই সব কাজ তারা করে লোকচক্ষুর আড়ালে, অত্যন্ত গোপনে। যাতে অন্য কোন দেশ এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও কিছু জানতে না-পারে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে এরিয়া-৫১। অনেকেই মনে করেন, এরিয়া-৫১ আমেরিকার সবথেকে গোপন একটি জায়গা। যেখান থেকেই বিজ্ঞানীরা ভিন গ্রহের প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে থাকে। সেখানকার সিকিউরিটি এতটাই শক্তপোক্ত যে, জায়গার ভেতরের কোন ছবি আজ পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি। তাই মানুষের মনে জায়গাটা নিয়ে শুধুই তৈরি হয়েছে প্রশ্নচিহ্ন। এরিয়া-৫১ এর মতনই আমেরিকা আরেকটি গোপন কাজে নিজেদের সিদ্ধহস্ত করে তুলছে। সেটা প্রযুক্তিগত দিক থেকে। এমনই একটি টেকনোলজি যা অন্য কোন দেশের আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটিয়ে সেই দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক সিস্টেমকে চিরতরে পঙ্গু করে দিতে পারে। এই টেকনোলজিকেই বলা হয় হার্প টেকনোলজি।
হার্প টেকনোলজি নিয়ে গোটা বিশ্বে বিভিন্ন রকম ধারণা মতবাদ প্রচলিত আছে। মার্কিনী ডলারের বদান্যতায় এতো দিন ধরে লালন-পালন হয়ে আসা হার্প টেকনোলজি অন্য দেশের কাছে সবথেকে বিধ্বংসী একটি প্রযুক্তি বলে মনে করা হয়। মনে করা হয়, এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই কোন একটি দেশের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মানেটা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে? তাহলে আরও সোজা কথায় বলি। হার্প টেকনোলজিকে ব্যবহার করে মার্কিন প্রশাসন কৃত্রিমভাবে বন্যা, ভূমিকম্প, সুনামি কত কিই না তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ ম্যানমেড তবে ন্যাচারাল ডিসঅ্যাস্টার- মানুষের তৈরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই হার্প হচ্ছে এমনই একটি গবেষণা প্রকল্প যেখানে নিরন্তর কাজ করে চলেছে মার্কিন বিমান বাহিনী, মার্কিন নৌ বাহিনী আর প্রতিরক্ষা উন্নত গবেষণা প্রকল্প এজেন্সি। এদের যৌথ উদ্যোগে হার্প টেকনোলজি নিয়ে কাজ হয়ে আসছে অতি গোপনে, ১৯৯৩ সাল থেকে। মনে করা হয়, এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই তৈরি করা হয় উচ্চ তরঙ্গ বা হাই ফ্রিকোয়েন্সি। যা পাঠানো হয় বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে বা আয়নোস্ফিয়ারে। তার মাধ্যমেই তৈরি করা হয় কম্পন। যা ভূপৃষ্ঠ কাঁপিয়ে দিতে পারে। তবে হার্প টেকনোলজির এক চমকে দেবার মতন ইতিহাস আছে।
পৃথিবীর সবথেকে আন্ডাররেটেড জিনিয়াসদের নিয়ে যদি কোন লিস্ট তৈরি করা হয়, সেই তালিকায় ঠাঁই পাবেন নিকোলা টেসলা। বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তি যার হাত ধরেই খানিকটা অগ্রগতি পেয়েছে। টেসলাকেই বলা হয় দ্য ম্যান হু ইনভেন্টেড দ্য টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি। এসি বা অল্টারনেট কারেন্ট আবিষ্কার করে তিনি গোটা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছেন। পেটেন্ট নিয়েছেন। প্রচুর অর্থ রোজগারও করেছেন। কিন্তু তিনি কোনদিন নিজের বৈভবকে বিশেষ পাত্তা-টাত্তা দেননি। সারাজীবন নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির কাছে। ১৯৪৩ সালে টেসলার মৃত্যু হয় রহস্যজনকভাবে। তার ঠিক পরেই মার্কিন সরকার টেসলার সকল গবেষণাপত্র সংগ্রহ করে গোপনে সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দেয়। সে যাই হোক। টেসলার গোটা জীবনটাই বড় রহস্যের। শোনা যায়, এই মহান বিজ্ঞানী নাকি নিজেই আমৃত্যু কাজ করেছেন হার্প প্রযুক্তি নিয়ে। তিনি চেয়েছিলেন প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করার। যাতে সেটা অস্ত্র তৈরির কাজে লাগানো যেতে পারে। তার পরেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি টেসলা নিজে হার্প প্রযুক্তি নিয়ে এতো এক্সটেনসিভ গবেষণা চালিয়ে গেছেন? সত্যি বলতে কি, এর কোন পরীক্ষিত সত্য বা প্রমাণ নেই। কারণ পুরোটাই আমেরিকার খুব গোপনে সংরক্ষণ করে আসছে। অনেকেই বলছেন, আমেরিকা টেসলার এই গবেষণার হাত ধরেই হার্প প্রযুক্তিকে এতোটা অ্যাডভান্স জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছে। আর তারই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্প। টুইটার, ফেসবুক সহ সকল সোশ্যাল মিডিয়া সর্বত্র অভিযোগের আঙুল উঠছে আমেরিকার বিরুদ্ধে। অধিকাংশ মানুষের মতামত এই ভূমিকম্পের জন্য হার্প প্রযুক্তি দায়ি। এই ধারণা আরও পরিষ্কার হয়েছে তুরস্কের এক ভদ্রমহিলার ভূমিকম্প হবার আগের মুহূর্ত যা তিনি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন, সেটাই ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা যায়, ভূমিকম্প হবার আগে নাকি তুরস্কের আকাশে বজ্রপাত হতে দেখা যায়। কিন্তু ভূমিকম্পের সঙ্গে বজ্রপাতের কী সম্পর্ক? আপাতত সেটাই যেন হার্প প্রযুক্তির ধারণাকে সবথেকে বেশি মজবুত করছে আরও। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সব ধরেও নেওয়া হয় তাহলে তুরস্কের সঙ্গে আমেরিকার কী সম্পর্ক রয়েছে? কেন আমেরিকা তুরস্কের বিরুদ্ধে হার্প প্রযুক্তিকে ব্যবহার করল?
এটা বলতেই হবে যে আমেরিকা যদি ডানদিকে যেতে বলে তুরস্ক তাহলে বাঁদিকের পথটাই নেয়। মানে, আমেরিকার কোন কথা তুরস্ক তেমন কানে তোলে না। তুরস্ক সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমেরিকার চরম বিরোধিতা করে এসেছে। অন্যদিকে তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সকলেরই জানা। আমেরিকার চক্ষুশূল হচ্ছে রাশিয়া। জানা গিয়েছে, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই তুরস্কের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছিল। আর যে কারণেই নাকি আমেরিকার কথা কানে না-তোলার শাস্তি পেল তুরস্ক। আমেরিকা ব্যবহার করল হার্প প্রযুক্তি। তার পক্ষে আরও একটা কারণ জোরালো হয়ে উঠছে। বলা হচ্ছে, তুরস্ক-সিরিয়া এবং ইজরায়েল প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করলেও ইজরায়েলের কিন্তু ন্যূনতম কোন ক্ষতি হয়নি। এদিকে তাসের ঘরের মতন ভেঙে পড়েছে তুরস্ক। হার্প প্রযুক্তি নিয়ে বিতর্ক আগেও হয়েছে। হাইতির ভূমিকম্প ২০১০। ঐ বছর থেকেই হার্প প্রযুক্তিকে দোষারোপ করা শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও রয়েছে ২০১০ সালে ঘটা চিলিতে ভূমিকম্প, পরের বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে জাপানে সুনামি এবং ভূমিকম্প, ২০১৩ সালে ওকলাহোমায় টর্নেডোর জন্য দায়ি করা হয় হার্প প্রযুক্তিকেই। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারাও আমেরিকার দিকে হার্প প্রযুক্তি নিয়ে অভিযোগের আঙুল তুলে সরব হয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদেনিজাদ। তিনি পাকিস্তানের বন্যার পিছনে আমেরিকার হার্প প্রযুক্তিকেই দায়ি সাব্যস্ত করেছেন। আমেরিকার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট উগো চ্যাভেজ। যদিও এই বিষয়ে আমেরিকা কোন দায় নিজের কাঁধে নিতে চায়নি। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, কোন বড় জায়গার আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার মতন ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। হার্প প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই ধরণের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। একই মত পোষণ করছেন আবহাওয়াবিদরা। তাঁরাও বলছেন, এভাবে হার্প প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ম্যান মেড ভূমিকম্প তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমেরিকা যত যাই বলুক, হার্প প্রযুক্তি নিয়ে মানুষের মনে অর্থাৎ বিশ্ববাসীর মনে কৌতূহল কম নেই। আপনারও কি মনে হয়, আমেরিকা হার্প প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই বিধ্বংসী কাজটি করতে পারবে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ