Trending
আপনারা কি জানেন, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রায় ২৪ টা সিট রিজার্ভড ভারতের নামে? কীভাবে? বলছি, তবে সংক্ষিপ্তভাবে। কথা ছিল, ভাগ-বাটওয়ারার পর দুই দেশ, মানে ভারত এবং পাকিস্তান নিজেদের অংশ নিয়ে খুশি থাকবে, এবং শান্তি বজায় রাখবে। কিন্তু শান্তি আর পাকিস্তান? আয়রনিটা বুঝতে পারছেন? যথারীতি কাশ্মীরের ভূখণ্ড জবরদখল করার একটা ব্যর্থ খেলায় নামে পাকিস্তান। ব্যর্থই বটে। কারণ তৎকালীন জম্মু কাশ্মীরের রুলার মহারাজা হরিশ সিং পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাধ্য হয়েই ইন্ডিয়ান আর্মির স্মরণাপন্ন হন এবং তারা পাকিস্তানের খেলা শেষ করে। কিন্তু পুরোপুরিভাবে সফল হয়নি ভারত। তাই আজও কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাক-অধিকৃত। আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন, কাশ্মীর নিয়ে হঠাৎ এত কথা কেন উঠছে? কারণ জি-২০ বৈঠক। কারণ বৈঠকের লোকেশন নিয়ে চিন-পাকিস্তানের আপত্তি। কারণ, এই আপত্তিকে পাত্তা না দেওয়া মোদী সাহাব। ওয়াহ লা জাওয়াব!
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মধ্য-প্রাচ্য থেকে শুরু করে চিন এবং পাকিস্তানের এত আপত্তি স্বত্বেও কাশ্মীরকেই কেন জি-২০ বৈঠকের লোকেশন হিসেবে বেছে নেওয়া হল? তাহলে জি-২০ কে অস্ত্র করে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরকে পুনরুদ্ধার করাই কি উদ্দেশ্য? ভারত যে এর সভাপতিত্ব পেল, তাতে ভারতের কোন লাভের লাভ হল কী? যে অভিসন্ধি নিয়ে কাশ্মীরে জি ২০ অনুষ্ঠিত হল, সেটা কতটা সফল হল? প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। না উঠলেই অবাক হতাম। দেখুন, এটা বুঝতে গেলে আগে বলা দরকার যে, গ্লোবাল পলিটিক্সে জি-২০-র রোল কী? আর ভারতের জন্য এটা এত ইম্পরট্যান্ট কেন? ছোট করে বললে, দুনিয়ার মোস্ট পাওয়ারফুল ১৯ টা দেশ আর ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিয়ে গড়ে ওঠে জি-২০। গ্লোবালাইজড ওয়ার্ল্ডের বেটারমেন্টের জন্য যার জন্ম হয় জি-৭-এর সিদ্ধান্তে। জি-২০-র অ্যাজেন্ডার আবার দুটো চ্যানেল। ফিনান্সিয়াল ট্র্যাক এবং শেরপা ট্র্যাক। দুনিয়ার ৬০% পপুলেশন, ৮৫% জিডিপি এবং ৭৫% ওয়ার্ল্ড ট্রেডকে রিপ্রেসেন্ট করে এই জি-২০। কাজেই ভারতের ওভারঅল ডেভলপমেন্টের জন্য এটা যে কত বড় অপরচ্যুনিটি, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।
এবার আসা যাক দ্বিতীয় প্রসঙ্গে- এই মিটিং কেন হচ্ছে? এর আউটকাম কী হবে? এবং কেন কাশ্মীর? কথায় বলে, এই পৃথিবীতে যদি সত্যিই কোথাও স্বর্গ থেকে থাকে, তবে অবশ্যই সেটা কাশ্মীরে। ভারতের ট্যুরিজমের হটস্পট কাশ্মীর। আর এত বড় সুযোগ থাকতে তাকে ব্যবহার করা হবে না? অভূত সম্ভাবনাময় কাশ্মীর। সময় এবং বিভিন্ন সারকামস্টান্সের শিকার হয়ে সেই পোটেনশিয়াল কোনদিনই সকলের সামনে উঠে আসেনি। অরাজকতার কড়া হিসেব দিতে হয়েছে কাশ্মীর এবং কাশ্মীরীদের দুই জেনারেশনকে। কিন্তু জি-২০-র এই মিটিং একটা অনেক বড় সুযোগ কাশ্মীরের জন্য। কেন? কেন্দ্রীয় সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে বললে বলব, কাশ্মীরের ইকোনমি মেইনলি ট্যুরিজম ফোকাসড। যেখানে এই পচা গরমে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ঘেমে-নেয়ে একসা, সেখানে কাশ্মীর আপনাকে একটা প্লেসেন্ট ওয়েদার দেবে। বিশেষত এই মে মাসটায়। কাজেই এই সময় ট্যুরিজম রিলেটেড একটা মিটিং-এর ভেনু হিসেবে এর কি এর চেয়ে বেটার কোন অপশন আপনার মাথায় আসছে? গোটা বিশ্বের সামনে কাশ্মীরের নর্মালসিকে তুলে ধরাই এর এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য। কীসের নর্মালসি রাইট? লাস্ট ইয়ার কাশ্মীরের ট্যুরিজম রিলেটেড ডেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন। যেটা রেকর্ড তৈরি করেছে। ইনফ্যাক্ট গত বছর থেকেই প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ পাচ্ছে কাশ্মীর। এই যেমন এক আরব এমিরাটের কোম্পানি শ্রীনগরে শপিং মল এবং অফিস কমপ্লেক্স তৈরির জন্য ৬০ মিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট করার কথা ঘোষণা করেছে। ঠিক ১১ বছর। আর এই ১১ বছর বাদে ডিরেক্ট স্রিনগর এবং শাহযা-র মধ্যে এয়ারলিঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। যেটা এয়ারট্রাভেল এবং ট্যুরিজমকে বুস্ট করে চলেছে।
কাশ্মীরকে নিয়ে যারা বিভিন্নরকম মিসকন্সেপশন ছড়িয়েছিল, বা মিসকন্সেপশন নিয়ে ছিল, ভারত সেই অঞ্চলের রিপ্রেসেন্টেটিভদের ডেকেই এই মিথকে ডিমিস্টিফাই করতে চেয়েছে। সো দ্যাট, বাইরের দুনিয়ায় যখনই কাশ্মীর নিয়ে চর্চা হোক, সেই চর্চা যেন কাশ্মীরের সৌন্দর্য এবং ভৌগলিক অবস্থানকে নিয়ে হয়। অরাজকতা নিয়ে নয়। আর্টিকেল ৩৭০ এবং কাশ্মীরের মিলিট্যান্সি এখন ইতিহাস। এখন কাশ্মীরের হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনাকে পুনস্থাপিত করাই মেইন লক্ষ্য। আর এই গ্লোবাল সামিট তারই প্রথম পদক্ষেপ। আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া স্যাভি হন এবং জি-২০ নিয়ে আপডেট নিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই এটাও নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, মিটিং অ্যাটেন্ড করা ফরেন গেস্টরা শুধু মিটিং রুমের মধ্যেই নিজেদের আবদ্ধ রাখেননি। ডাল লেক থেকে শ্রীনগর শহরের প্রতিটা প্রান্ত তারা এনজয় করেছেন। সেই ছবি তারা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন। এবং ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে কাশ্মীরের সৌন্দর্য পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এটা কম বড় সাকসেস? তবে, এই সাকসেসে কিন্তু পাকিস্তানেরও মদত রয়েছে। বলছি কিভাবে। ভারতের ভালো কোনোদিনই ডাইজেস্ট করতে করতে পারে না পাকিস্তান। তাই ভারতের কাশ্মীরে জি-২০ হবে দেখে নানান নেতিবাচক কথা বলেছিলেন সে দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা। আর এই নেগেটিভ পাবলিসিটি কিংতু ভারতের জন্য শাপে বর হয়ে এসেছে।
ইকোনমিক এক্সপার্টরা বিশ্বাস করেন, এই সামিট আগামীদিনে কাশ্মীরের ইকোনমিক গ্রোথ এবং কোঅপারেশনকে প্রমোট করতে চলেছে। আর কাশ্মীরের এই অগ্রগতি পিওকে-তে কোন এফেক্ট ফেলবে না বলে মনে হয় আপনার? আলবাত ফেলবে। এই দুই অঞ্চলের ইকোনমিক ডিফারেন্স তো এখনই চোখে পড়ার মতো। এখনই সেখানকার বাসিন্দারা পিওকে থেকে মুক্তি চায়। যেটা এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের সবচেয়ে অস্বস্তির কারণ। আর সামিটের পর এটা তো আরও কাশ্মীরের ইকোনমিক গ্রোথ আরও বুস্ট করবে। তখন পিওকে চুপ করে বসে থাকবে ভেবেছেন? সেখানকার মানুষ কোন প্রশ্ন তুলবে না ভেবেছেন? সেই সিচ্যুয়েশন পিওকে-কে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করতে ট্রিগার করবে না ভেবছেন? আমার মনে হয়, এসব প্রশ্নের উত্তর আপনারা নিজেই খুঁজে নিতে পারবেন। হয়তো খুঁজে পেয়েও গিয়েছেন।
পাকিস্তানের সমস্যা কোথায়? তার উত্তর তো পাওয়া গেল। কিন্তু চিন, তুর্কী বা সৌদি আরবের এই বিরুপ আচরন কেন? কারণ একটাই পাকিস্তানের উস্কানি। পাকিস্তান নিজে জি-২০-র সদস্য নয়। তাতে কি? বন্ধু রাষ্ট্ররা আছে তো। ঠিক কিছুনা কিছু হিল্লে হয়ে যাবে। শুরু হল চিন, তুর্কী এবং সৌদি আরবের সঙ্গে লবি করা। এবং শ্রীনগর-এ জি-২০ মিটিংকে বিব্রত করা। হয়তো এই কারণেই কাশ্মীরের জি-২০ সামিটে উপস্থিত ছিল না চিন কিংবা সৌদি আরবের কোন প্রতিনিধি। এইপ্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, জি-২০-র সঙ্গে সঙ্গে ইয়ুথদের ইন্সপায়ার করতে ওয়াই-২০ সামিটও সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয় ভারতে। আর জি-২০ তে তুর্কীর তরফে কোন প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকলেও ওয়াই-২০ মিটিং-এ তুর্কীর ১৮ জন ইয়ুথ কিন্তু রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কাজেই তুর্কী যে পুরোপুরিভাবে এই সামিট বয়কট কত্রেছে, সেটা কখনই বলা যাবে না।
দেখুন, ভারত প্রসঙ্গে যেকোনো উদ্যোগই যে পাকিস্তান সহজভাবে সমর্থন করবে না, সে বিষয়টা আমাদের কাছে পরিষ্কার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এত বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ হওয়া সত্ত্বেও চিন কিংবা সৌদি আরব- পাকিস্তানের সুরে সুর মেলাল? এবং অন্ধের মতো এতটাই পাকিস্তানপ্রেমী হয়ে গেল যে, জি-২০ মিটিং অ্যাটেন্ডই করলো না! ভারত অবশ্য এ বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে যে, এতে ভারতের কোন কিছু যায় আসে না। মিটিং অ্যাটেন্ড না করলে এটা নিজেদেরই ক্ষতি। আর এটা ভারতের ভুখন্ড। আর নিজের জমিতে সভাপতি হিসেবে ভারত যেখানে ইচ্ছে ভেন্যু সিলেক্ট করতে পারে। সেটা দিল্লি হোক বা দেরাদুন কিংবা কাশ্মীর। আর এক্ষেত্রে ভারতের সিদ্ধান্তই ফাইনাল। জি-২০ সামিট ভারতের ইকোনমিক এবং বিজনেস ডেভলপমেন্টের জন্য একটা সোনার চাবিকাঠি। ইয়ুথ ইনফ্লুয়েন্সের একটা স্ট্রং মিডিয়াম। কাশ্মীরকে প্রমোট করার একটা যোগ্য সুযোগ। কিন্তু এত কিছুর পরেও যে প্রশ্নটা থেকে গেল, সেটা হচ্ছে- জি-২০-কে ব্যবহার করে ভারত কি পাক অধিকৃত কাশ্মীর হাসিল করতে পারবে? আপনাদের কি মনে হয়? জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।