Trending
চিনের কূটনীতিকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে আরও বেশি করে সাধুবাদ জানাতে হয় ভারত সরকারকে। এসসিও-র মিটিং শেষের পর যেভাবে ভারত চিনের বিরুদ্ধে একরোখা মনোভাব ধরে রাখল, সেটা থেকে পরিষ্কার ভারত আবারও পাশ কাটিয়ে দিল চিনের স্ট্র্যাটেজিকে। মোদী বনাম জিংপিং যেন নয়া উচ্চতায় দিনে দিনে পৌঁছতে চলেছে। এশিয়ার এই দুই বাঘের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক লড়াইটা পৌঁছে যাচ্ছে একেবারে ওপরে। আর মাঝখান থেকে খানিক চিঁড়ে চ্যাপ্টা হচ্ছে বেচারা পাকিস্তান। যদিও পাকিস্তান ভারতের থেকে চিনকেই তাদের আয়রন ব্রাদার মনে করে। অবশ্য ভারত এসবে বিশেষ পাত্তা-টাত্তা তেমন দেয় না। বরং চিনের সঙ্গে কূটনীতির খেলাটা খেলতে চায় সেয়ানে-সেয়ানে। কিভাবে চিনের কৌশল ধরতে পেরে কার্যত চিনকেই খানিক সংশয়ের মধ্যে ফেলে দিল ভারত, সেটাই বলব আজকের প্রতিবেদনে।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই- এটা কি জানেন? এর আরেকটি নামও আছে। ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড। এটির দুটি পার্ট। একটি সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট- একটি ট্রান্স কন্টিনেন্টাল প্যাসেজ যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, সেন্ট্রাল এশিয়া, রাশিয়া এবং ইউরোপের হাত ধরতে সাহায্য করবে চিনকে। আর একটি মেরিটাইম সিল্ক রোড। যা চিনের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোকে যুক্ত করে দেবে সাউথ-ইস্ট এশিয়া, সাউথ এশিয়া, সাউথ প্যাসিফিক, মিডল ইস্টকে। এই বিআরআই প্রোজেক্টটি আসলে বিশ্ববাজারে চিনের হুঙ্কার বলা যেতে পারে। এই রাস্তার মাধ্যমেই চিন সহ অন্যান্য দেশের পণ্য আমদানি-রফতানির কাজটা আরও মসৃণগতিতে হবে। এটা জিংপিং-এর একটি স্বপ্নের প্রোজেক্ট বলা যেতে পারে। যেখানে চিনের বিনিয়োগ থাকবে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে বেশ কিছু দেশ বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েও দেয়। অর্থাৎ চিনের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা প্রত্যেকটা দেশই এই বিআরআই-তে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। এখানেই জানিয়ে রাখি, চিন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মোটা টাকা বিনিয়োগ করতে শুরু করে। তার মধ্যে অন্যতমঃ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে। এখানেই জানিয়ে রাখি, এইসব দেশে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে চিন। তারপরেও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কিছুটা এগোলেও বিপুল অর্থের কারণে সেই গতি অল্প হলেও ধাক্কা খাচ্ছে। তবে জিংপিং-যে স্বপ্নপূরণের জন্য বিআরআই নিয়ে পড়ে রয়েছেন, সেই স্বপ্ন কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে ভারতের সম্মতি ছাড়া?
এসসিও মিটিং-এর সময় জিংপিং এই বিষয়ে যা বলেছেন তা কিছুটা তাজ্জব বানিয়ে দিয়েছে বিশেষজ্ঞ মহলে। তাদের দাবি চিনের এই সর্বময় কর্তাটি যে কথা বলেছেন, তার সঙ্গে কাজে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেমন এক বড়সড় ফাঁক ধরা পড়তে চলেছে। আর এই ফাঁকটা অন্য দেশ বুঝতে না পারলেও বুঝে গেছে ভারত। কারণ চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে ভারতের কাছ থেকে মিলল চরম আপত্তি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যখন অন্যান্য দেশ বিআরআই-এর পাশে দাঁড়িয়ে চিনকে সমর্থন করে চলেছে একটানা, সেখানে কার্যত এই স্বপ্নের বেলুনে ফুটো তৈরি করে দিয়েছে ভারত সরকার। কিভাবে সেটা বলছি। সদ্য সমাপ্ত এসসিও মিটিং-এর পরেই পুরো বিষয়টা প্রকাশ্যে আসে। কিভাবে বিআরআই নিউ দিল্লিকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিল সেটাই জানিয়ে দেওয়া যাক। আপনারা সকলেই জানেন, এবার প্রথম বারের মতন এসসিও-র মিটিং-এর ক্যাপ্টেন্সি করে ভারত। রাশিয়া, পাকিস্তান, চিন, ইরানের মতন দেশ এই মিটিং-এ অংশ নেয়। তবে পুরো মিটিংটাই হয় ভার্চুয়ালি। সম্মেলন শেষ হবার পর একটি যৌথ ঘোষণাপত্র রাখা হয়। যেখানে বলা হয় চিনের এই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নেই কারুর কোন আপত্তি নেই। সেটা সত্যি নাকি? ভেবে দেখুন, এই পত্রে যদি ভারত একবার সম্মতি দিয়ে দিত তাহলে কিন্তু বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ভারতের জন্য ভালোরকম থ্রেট তৈরি করতে পারত। একইসঙ্গে কুয়াশার আড়ালে চলে যেত পাকিস্তানের হাত থেকে কাশ্মীর ছিনিয়ে আনার স্বপ্ন। আসলে, চিনের এই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পটি চলে গিয়েছে পাকিস্তান অধিকৃত গিলগিট-বালতিস্তানের ভেতর দিয়ে। যা রয়েছে, অবশ্যই, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে। আর ভারত তো পিওকে নিয়ে সটান জবাব দিয়ে আসছে। ভারত পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের জবরদখল করা কাশ্মীর ছাড়া আর কিছুই মনে করে না। কাশ্মীর যা ভারতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে। আর যে কারণে বিআরআই নিয়ে পাকিস্তান, রাশিয়াকে সই দিলেও ভারত স্বাক্ষর করা থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখল।
এবার বলি কেন নিউ দিল্লি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এসেছে। চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর বা সিপিইসি এই রাস্তাটি চলে যাবে চিনের উইঘুর এলাকার শিনজিয়াং প্রভিন্স দিয়ে। এই মহাসড়কের একটি অংশ আবার পাকিস্তানের গোয়াদর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে মিলে গেছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালটিস্থানের সঙ্গে। আর পাকিস্তানের অধিকৃত এই কাশ্মীরকে তো ভারত স্বীকারই করে না। সুতরাং, সই-সাবুতের কোন প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেনি ভারত। বরং কেন্দ্র সাফ জানিয়ে দিয়েছে এভাবে ভারতের সার্বভৌমত্বে আঘাত করার চেষ্টা করছে চিন। আর চিনকে যোগ্য সম্মতি দিচ্ছে পাকিস্তান। তাহলে কি ভারতের সিগনেচার না পেলে অধরা থাকবে জিনপিং-এর স্বপ্নপূরণ? আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই বিআরআই প্রোজেক্ট একটি বিশাল অঙ্কের প্রোজেক্ট। খরচ পড়তে পারে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এখনো পর্যন্ত নেপালে বিনিয়োগ করা হলেও বিআরআই প্রোজেক্ট সেভাবে শুরুই করা যায়নি। ভারতের সই থাকলে হয়ত জিংপিং-এর স্বপ্ন পূরণ একটু গতি পেত। কিন্তু ভারতের সই না-করাটা সঠিক সময়ে চিনকে স্ট্র্যাটেজিকালি মোক্ষম জবাব দেওয়া হল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আপনার কি মতামত, সেটা জানান। সঙ্গে শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। আর নজর থাকুক আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজে।
জীবন হোক অর্থবহ