Trending
জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল হবার পরেই অনেক চেঞ্জেস লক্ষ্য করা গিয়েছে। একদিকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বেহাল অবস্থা, আর অন্যদিকে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে লাগাতার উন্নয়ন। এই উন্নয়ন সার্বিক। শিক্ষা, হাসপাতাল এ সব তো রয়েছেই। একইসঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকার মান অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। এই নিয়ে বিরোধী দলের নেতারা সমক্ষে কোন টিপ্পনী না-কাটলেও ৩৭০ ধারা বাতিল আজও ন্যাশনাল পলিটিক্সে অন্যতম চর্চিত একটি বিষয়। আবার দেখুন, অনেকেই মনে করেন, ৩৭০ ধারা বাতিল হবার পরেই যেন জম্মু-কাশ্মীরের ওপর থেকে আতঙ্কের ছায়াটা সরে গেল। আর তাতেই রেকর্ড পরিমাণ পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম সাত-আট মাসেই নাকি ১ কোটির বেশি মানুষ ঘুরে গিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর থেকে। এদিকে পাকিস্তান সরকার ভারতের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারে নি। এখনো পর্যন্ত লাগাতার ইন্টারন্যাশনাল মঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণের কাজটা করে চলেছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষরাই বলছেন, ৩৭০ ধারা বাতিল আসলে শাপে বর এনে দিয়েছে। সত্যিই কি তাই? ৩৭০ ধারা আসলে কী? এই নিয়ে অনেকের মনেই কোন ক্লিয়ার ছবি নেই। তাই আজকের প্রতিবেদনে বলব সেটাই। জানতে হলে স্কিপ না করে দেখুন সম্পূর্ণ প্রতিবেদন।
প্রথমেই নজর দেওয়া যাক ইতিহাসে। জম্মু-কাশ্মীরের শেষ স্বাধীন রাজা ছিলেন হরি সিং। ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাস। এতদিনে স্বাধীন হয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে বেশ কিছু উপজাতি গোষ্ঠী তখন হামলা চালাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায়। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খুব বিশৃঙ্খলভাবে তারা কাশ্মীরে অত্যাচার বাড়াচ্ছিল। চলছিল তাদের ধ্বংসলীলা। অকারণে মৃত্যুযজ্ঞ চালানোর বর্বর প্রয়াস তারা জারি রেখেছিল। এমনকি যুবতী মেয়েদের ধরেও নিয়ে যাচ্ছিল তারা। নিজের শাসনকালে এমন অবনতি দেখে কার্যত হতচকিত হয়ে পড়েন রাজা হরি সিং নিজেও। কাশ্মীরে যতজন মানুষ বসবাস করেন তাঁদের অধিকাংশ ছিলেন মুসলিম। এদিকে শাসকের সিংহাসনে রাজা হরি সিং যিনি নিজে হিন্দু। তিনি তখন পড়লেন ধন্ধে। বুঝতে পারলেন না তাঁর হাত ধরা উচিৎ কার সঙ্গে? হিন্দু নাকি পাকিস্তান? আসলে তিনি নিজে দুটো দেশের মধ্যেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আক্রমণকারীদের এই ভয়াবহ অত্যাচার রাজা হরি সিং-এর মধ্যে পাকিস্তান বিরোধি মনোভাব তৈরি করে। এবং তিনি ভারতে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন। কাশ্মীরকে নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সেই যে বিরোধ শুরু হল তা এখনো মেটার নয়। অনেকেই মনে করেন যে, উপজাতিদের যে এই বর্বর আক্রমণ ঘটেছিল আসলে সেটা ছিল পাকিস্তানের অঙ্গুলিহেলন। শান্ত কাশ্মীরকে অশান্ত করে দেবার জন্য পাকিস্তানের ইন্ধন আর পাকিস্তানের অর্থ দুটো কাজ করেছিল। তারপর থেকেই কার্যত ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হয় বিবাদ। যা আজও মেটে তো নিই। বরং দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এদিকে কাশ্মীরে শান্তি ফেরানোর জন্য ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ ধারা নিয়ে আসা হয়। জম্মু-কাশ্মীরকে দেওয়া হয় বিশেষ মর্যাদা। দেওয়া হয় নিজেদের সংবিধান। অধিকার দেওয়া হয় আলাদা পতাকা ব্যবহারের। এবার বলা যাক ৩৭০ ধারা আসলে কী?
সংবিধানের ২১ নম্বর পরিচ্ছেদে ৩৭০ ধারার উল্লেখ রয়েছে। এই পরিচ্ছেদে নানা অস্থায়ী ব্যবস্থা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়। সংবিধানের প্রত্যেক ধারা অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও সেটা জম্মু-কাশ্মীরের জন্য নয়।
৩৭০ ধারা বলছে, জম্মু-কাশ্মীরকে নিজস্ব সংবিধান রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের সরকার প্রতিরক্ষা, বিদেশ এবং যোগাযোগ বাদে সব ব্যপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
১৯৪৭ সালে যখন কাশ্মীরকে ভারতভুক্তি করানো হয়, তখনই ৩৭০ ধারা জারি করা হয়। এই ধারা বলছে কেন্দ্রীয় সরকার যদি কোন পলিসি বা সাংবিধানিক ক্ষমতা কার্যকর করতে চায় তাহলে বিধানসভার অনুমতি অবশ্যই নিতে হত।
এখানেই একটা ব্যপার। ৩৭০ ধারার সঙ্গে আরেকটা বিতর্কিত ধারা হল ৩৫ এ। এই ধারা বলছে, রাজ্যের বিধানসভা স্থির করতে পারবেন কে স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারবেন জম্মু-কাশ্মীরে আর কে নন। স্থায়ী বাসিন্দারা সেখানে সবরকমের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বলা হয়, জম্মু-কাশ্মীরে যদি স্থায়ী বাসিন্দা না হন, তাহলে তাঁরা অস্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারবেন না। এমনকি স্থায়ীভাবে বসবাস করতেও পারবেন না। এমনকি এই রাজ্যের অস্থায়ি বাসিন্দাদের সরকারি চাকরি দিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ সেটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে সংবিধানের ৩ নং অনুচ্ছেদে। অনেকেই বলেন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথাই আসলে বলা হয়েছে। তাঁদের মতে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার অর্থ আসলে অভিন্নতার প্রসঙ্গকেই অগ্রাধিকার দেওয়া।
এখানেই জানিয়ে রাখি ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয় ২০১৯ সালে। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ পায়। আলাদা আলাদা দুটো কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়, জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ। খেয়াল আছে, সেই বছরেই পুলওয়ামা অ্যাটাক হয়। সিআরপিএফ কনভয়ে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জইশ জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলা চালায়। নয়া দিল্লির সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে তারপর। কয়েকদিন আগে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মুখে একটা বক্তব্য শোনা যায়। সেটা কিছুটা ভূতের মুখে রামনাম বলার মতনই। ভারতের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হচ্ছে ততক্ষণ ভারতের তরফ থেকে তারা কোনভাবেই আশাবাদী নয়। কিন্তু পাকিস্তান যাই বলুক না কেন, ৩৭০ ধারা বাতিল হবার কারণে জম্মু-কাশ্মীরের যে সামগ্রিক উন্নয়ন লক্ষ্য করা গিয়েছে, সেটাকে অস্বীকার করার জায়গা নেই। তার একটা ছোট উদাহরণ দিই। কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ২০২০ সালের বাজেটে বরাদ্দ করেছিল ৩০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর লাদাখের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই জম্মু-কাশ্মীর আজ সবদিক থেকেই সার্বিক উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি। আপনাদের কি মনে হয়? ৩৭০ ধারা বাতিল নিয়ে আপনাদের মতামত কী? জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে শেয়ার করুন, লাইক করুন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করে নিন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ