Academy
বাংলায় হাজার হাজার স্কুল রয়েছে। তাতে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক নেই। থাকবে কী করে? পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগটাই যে নেই। আপনারা প্রশ্ন করবেন, পশ্চিমবঙ্গে কি তা বলে কিছুই নেই? আছে। বাংলায় নিয়োগ নিয়ে কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারি আছে। তদন্ত, মামলা মোকদ্দমা আছে। বেআইনি নিয়োগের ফলে যোগ্যদের চাকরি হারানর ভয় আছে। কিন্তু নিয়োগ নেই। তবে, এটা ঠিক, ভোটের আগে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু জানিয়েছিলেন তাঁর কাছে ১০ লক্ষ চাকরি একেবারে রেডি আছে।
মাসখানেকের ব্যবধানে ফের বিহারমুখী বাংলার হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী
১০ লক্ষ চাকরি তো কোন ছাড়। নির্বাচনের ঘোর কাটতে না কাটতেই বড়ো বড়ো করে ঘোষণা করা হল যে, পশ্চিমবঙ্গে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ যাবতীয় সরকারী চাকরির নিয়োগ। একটা রাজ্যে সরকারী চাকরির নিয়োগ বন্ধ। অনির্দিষ্টকালের জন্য। ভাবতে পারছেন এটা কত বড়ো থ্রেট? কতটা নির্মম সিদ্ধান্ত! বাংলায় আশা নেই। অতয়েব বিহারের দিক তাকাই। নবম দশমের টেটের পর এবার একাদশ-দ্বাদশের টেটের জন্য বিহারমুখী হয়েছিলেন বাংলার হাজার হাজার চাকরি-প্রার্থী। চাকরির আশায় পরিযায়ী হতে হয়েছে বাংলার শিক্ষিত বেকারদের।
কেন বিহারমুখী চাকরিপ্রার্থীরা?
হবে নাই বা কেন বলুন? ২০১৬-র পর বাংলায় আর এসএসসি টেট পরীক্ষা হয়নি। বাম আমলের শেষের দিকে প্রতিবছর এসএসসি-র নিয়োগ হত। আর তৃণমূল আমলে? তৃণমূল সরকারের আমলে মাত্র দুবার এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছে। ২০১৪-র টেটের পর আর কেউ নিয়োগপত্র পাননি। ২০১৭, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে নাম কে বাস্তে প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ? না, হয়নি।
বেকারত্বের জ্বালা বড়ো বালাই
বিভিন্ন সভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গলা হাকিয়ে বলেছেন, প্রচুর বি.এড এবং ডি.এলএড কলজ হয়েছে। তৃণমূল আমলে সত্যিই প্রচুর বি.এড এবং ডি.এলএড কলেজ হয়েছে। সেখান থেকে প্রতি বছর প্রচুর পড়ুয়া পাশ করে বেড়িয়েছেন। কিন্তু কোন চাকরি হয়নি। কেউ ৩, কেউ ৫ কেউ কেউ আবার ১০ বছর ধরে নিয়োগের আশায় বসে রয়েছেন। নিয়োগ হয়নি। আবারও বলছি, ১০ বছর ধরে নিয়োগ হয়নি এই রাজ্যে। বাধ্য হয়েই বিহার গিয়েছেন তারা। নিজেদের ভাগ্যপরীক্ষা করতে।
মাথা হেঁট হল বাংলার শিক্ষামহলের
মাসখানেক আগে বিহার রেলস্টেশনের এই ছবিটা ভাইরাল হয়েছিল। বাংলার হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী গিয়েছেন বিহারে। খোলা স্টেশনে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। ছবিটা লজ্জাজনক হলেও এটাই যেন ভবিতব্য। আসলে বেকারত্বের জ্বালা বড়ো বালাই। অবশ্য, নিজের তরফে এর একটা যুক্তি খাড়া করেছে বাংলার শাসকদল।
নিয়োগে দুর্নীতি আছে, নিয়োগ নেই!
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে টাকার পাহাড় দেখেছে রাজ্যবাসী। গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষাকর্তা থেকে শিক্ষামহলের একাধিক ব্যক্তি। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই দিনের পর দিন ধরমতলায় ধর্না দিয়ে বসে রয়েছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। রোদ-জল-ঝড় গায়ে মাখছেন একটা চাকরির আশায়। বাংলা হতাশ করেছে। তাই পড়শি রাজ্য বিহারই ভরসা। বিহারে গত মে মাসে বিহার টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট হয়। নবম এবং দশম শ্রেণীর নিয়োগের জন্য। সেখানে নিজেদের ভাগ্য-পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন হাজার হাজার প্রার্থী। আবার ১১ জুন থেকে শুরু হয়েছে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়োগ প্রক্রিয়া, বিহারে। তাই, মালদা, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার থেকে কাতারে কাতারে প্রারথ গিয়েছেন বিহারের উদ্দেশ্যে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন
হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস ইট টুমরো! বাংলা আজ যা ভাবে, গোটা ভারত কাল তা ভাবে। এই তো ছিল এককালের চলতি কথা। আর আজ দেখুন কীভাবে একটু একটু করে নেই রাজ্যে পরিনত হচ্ছে বাংলা। চাকরি নেই, শিক্ষক নেই, শিক্ষিত যুবকদের ভবিষ্যৎ নেই। দুর্নীতির পাহাড় আছে। কাদা ছোড়াছুঁড়ির রাজনীতি আছে। আর আর আগামীর জন্য একটা বড়ো প্রশ্নচিহ্ন আছে। ভাবুন, ভাবুন। ভাবা প্র্যাক্টিস করুন। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।