Daily
একুশের নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নতুনভাবে বিধান পরিষদ আবারও তৈরি করবেন। ফিরিয়ে আনবেন ১৯৬৭ সালের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জির আমলের ঐতিহ্যকে।
বর্তমানে ভারতে ২৮ টি রাজ্যের মধ্যে মাত্র ৬ টি রাজ্যেই চালু রয়েছে রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ এই বিধান পরিষদ। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্যে এখনো অস্তিত্ব রয়েছে এই বিধান পরিষদের।
এবারের নির্বাচনে রাজ্যে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় বসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে উদ্যোগী হয়েছেন বিধান পরিষদ তৈরীর লক্ষ্যে। বিগত বিধানসভায় বাম কংগ্রেসের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে সরকারের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। এবার বিধানসভায় বাম কংগ্রেস শূন্য হলেও প্রধান বিরোধী দল বিজেপি কিন্তু কোমর বেঁধে নেমেছেন সরকারের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে।
বিধান পরিষদ এই মুহূর্তে রাজ্যের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের পক্ষে আদৌ যুক্তিযুক্ত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বিজেপির স্পষ্ট বক্তব্য, রাজ্য এখন দেনায় ডুবে আছে। সেখানে কোথা থেকে সরকার টাকার সংস্থান করবেন। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার এই খাতে বরাদ্দ করতে পারবে বলেই রাজ্য বিধানসভার উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদ গঠনের কাজে হাত লাগিয়েছে। তৃণমূল পরিষদীয় দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সমাজে এমন অনেক গুণী মানুষ আছেন যারা কখনও নির্বাচনে দাঁড়াননি অথচ আইনসভায় তাদের পরামর্শ সরকারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন অসংখ্য গুণী মানুষকে রাজ্য পরিচালনার কাজে যুক্ত করাটাই সরকারের আসল লক্ষ্য। অন্যদিকে, বিজেপি পরিষদীয় দলের পক্ষ থেকে সরকারের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে বলা হয়েছে, সরকার এই বিধান পরিষদ তৈরি করে পিছনের দরজা দিয়ে তৃণমূলের পরাজিত নেতাদেরকেই জায়গা করে দিতে চায়।
বিধান পরিষদ গঠন নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজার মধ্যেই বেরিয়ে আসছে অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের দিকটি। অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যের আর্থিক হাল বেশ শোচনীয়। সেখানে নতুন করে বিধান পরিষদ তৈরি করা হলে রাজ্য সরকারের খরচ বাড়বে বৈ কমবে না। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সরকারি ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় খরচে রাশ টানার কথা বলেছেন।
আসুন দেখে নেওয়া যাক রাজ্য বিধানসভায় প্রতিবছর বিধায়ক, মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা মিলিয়ে মাসে কত খরচ হয়। সেই খরচ বছরে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। আর পাঁচ বছরে তার পরিমাণ কত হয়।
এখন রাজ্যে বিধানসভার সদস্য সংখ্যা ২৯২। এরমধ্যে দুজন বিধায়ক পদত্যাগ করায় সেই সংখ্যা হয় ২৯০। এরমধ্যে শাসক তৃণমূলের ২১৫ জন ও বিরোধী বিজেপির ৭৫ জন। তৃণমূলের ২১৫ জনের মধ্যে ৪৩ জন মন্ত্রীসভায় জায়গা পাওয়ায় বিধায়কের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৭২ এ। এই ১৭২ জন বিধায়ক প্রতিমাসে বেতন ও ভাতা মিলিয়ে পান ৮১ হাজার ৮০০ টাকা। তাহলে তৃণমূলের বিধায়কদের মাসিক ভাতার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬০০ টাকা। আর বিজেপি ৭৫ জন বিধায়কের বেতন ও ভাতা মিলিয়ে মাসে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৬১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৪৩ জন মন্ত্রী মাসে বেতন পান ১ লক্ষ ১২ হাজার ৮০০ টাকা। তাহলে ৪৩ জন মন্ত্রী পিছু সরকারের মাসিক খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৪৭ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মাসিক বেতন ১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী তার নিজের বেতনের পুরোটাই সরকারি তহবিলে প্রতি মাসে দান করেন। মুখ্যমন্ত্রীর অংশটুকু বাদ দিলে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে বিধায়কদের পিছনে কমবেশি খরচ হয় বছরে ৩০ কোটি টাকার ওপর। আর পাঁচ বছরে শুধু বিধানসভায় বেতন-ভাতা মিলিয়ে সরকারের খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০ কোটি টাকার উপরে।
রাজ্যে এখনও করোনা কাবু হয়নি। চালু হয়নি সবকটি শিল্পক্ষেত্র। এখনো আসেনি আশানুরূপ শিল্পে বিনিয়োগ। তৈরি হয়নি নিত্যনতুন শিল্পতালুক।
তাহলে সরকার নতুন করে বিধান পরিষদ তৈরির টাকা যোগাবেন কোথা থেকে। এই প্রশ্নটাই তুলছেন রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির পরিষদীয় দল। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রের কাছে প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি কোটি টাকা এখনো বকেয়া পড়ে আছে। কেন্দ্র অবিলম্বে বিভিন্ন খাতে রাজ্যের বকেয়া আগে মিটিয়ে দিক।
বিধান ভবিষ্যৎ তৈরি হবে কি হবে না আর তা নিয়ে শাসক-বিরোধী দ্বৈরথের মধ্যেই গুগলে সার্চ করলেই বেরিয়ে পড়ছে রাজ্য সরকারের দেনার পরিমাণ। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, এই বিপুল দেনা তৃণমূল জামানায় তৈরি না হলেও দেনার দায় কিন্তু এসে পড়েছে মমতার সরকারের উপর।
এখন কিভাবে দেনা সামলে, রাজ্যের চালু করা প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদ করবেন সেটাই দেখার।
ব্যুরো রিপোর্ট, বিজনেস প্রাইম নিউজ