Daily

আলিপুরদুয়ার জেলা বলতেই প্রথমে মনে আসে বক্সার ঘন জঙ্গল। এই জঙ্গলের আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ছোট ছোট গ্রাম। গ্রামবাসীদের অধিকাংশই কৃষিকাজ করে সংসারের হাল ধরেন। তেমনই একটি গ্রামের নাম ছিপ্রা। যা অবস্থিত আলিপুরদুয়ার জেলার ২ নং ব্লকে। এই গ্রাম মূলত কৃষি প্রধান অঞ্চল হলেও বক্সার জঙ্গল থেকে হাতির অত্যাচারে তিতিবিরক্ত গ্রামবাসীরা।
ছিপ্রা গ্রামের অধিকাংশ মানুষই চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বুনো হাতির দল মাঝেমধ্যেই নষ্ট করে দেয় ক্ষেতের ফসল। যে কারণে কৃষিকাজ করে সংসার চালানোটা বড়সড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। আর সেই কারণে সংসারের হাল ধরতে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন তাঁরা। মূলত গ্রামের মহিলারা বিকল্প আয়ের জন্য বেছে নিয়েছেন বাঁশের তৈরি পর্দাকে। এই অঞ্চলে প্রচুর বাঁশ গাছ হয়। আর এই বাঁশ থেকেই পর্দা তৈরি করছেন তাঁরা।
গ্রামের মহিলারা প্রথমে বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ কেটে নেন। তারপর সেই কাটা বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন নির্দিষ্ট মাপের বাতা। তারপর এই বাতাগুলোকে রোদে ভালো করে শুকোনো হয়। তারপর সেগুলিকে সংগ্রহ করা হয় একে একে। এরপর সুতোর সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট ছন্দাকারে সেলাই করা হয় বাঁশের সেই বাতা বা টুকরো গুলো। আর এভাবেই তৈরি হয় বাঁশের পর্দা। প্রসঙ্গত, এই বাঁশের পর্দার চাহিদা কিন্তু ভালোরকম বৃদ্ধি পাচ্ছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। ফলে উপার্জনের পথটাও অনেকটা মসৃণ হচ্ছে। আর যে কারণে ব্যস্ততাও বেড়েছে অনেকটা।
বর্তমানে বাঁশের তৈরি এই পর্দা রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে। মূলত দিল্লি, রাজস্থান, গুজরাত, হরিয়ানার মতন রাজ্যে এই অঞ্চলের তৈরি বাঁশের পর্দার কদর রয়েছে ভালোরকম। সাধারণত খড়খড়ি এবং ঢালাইয়ের কাজে এই বাঁশের পর্দা ব্যাবহার করা হয়। প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মহিলাদের তৈরি এই পর্দাই এলাকায় বিকল্প আয়ের পথ দেখিয়েছে। যে কারণে বুনো হাতির অত্যাচারে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হলেও সংসারের চাকা বন্ধ হয়ে যায়নি। বেড়েছে ব্যস্ততা, বেড়েছে উপার্জন।