Agriculture news
প্রাণিসম্পদ সুরক্ষায় কতটা এগিয়ে রাজ্য? গরু, ছাগল, কুকুর বা বেড়ালের হাসপাতাল- শুনলে অনেকে আবার প্রথমেই মুখটা কুঁচকে ফেলতে পারেন। মনে হতেই পারে, বিজনেস প্রাইম নিউজে হঠাৎ এই প্রসঙ্গ কেন? তার কারণ একটাই। খেয়াল রাখবেন, এই বাংলার বহু মানুষের রুজিরুটি নির্ভর করে এই প্রাণী সম্পদের ওপর। সুতরাং, তাদের অসুস্থতায় যদি ঠিকঠাক পরিষেবা না-পাওয়া যায় তাহলে কি প্রাণী সম্পদের যারা মালিক, তারা কি নিজেদের আর্থিক সুরক্ষার দিকটায় সেন্ট পারসেন্ট কনফিডেন্ট হতে পারবে? একেবারেই না। বরং দিনের শেষে ক্ষতির বোঝা তাদের বাড়বে। ভুলে গেলে চলবে না যে, কৃষিকাজের পাশাপাশি প্রাণী সম্পদ কিন্তু গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য খুব ভাইটাল একটা বিষয়। তাই আজকের প্রতিবেদনে খোঁজ করা যাক সেটা নিয়েই। আর সেই খোঁজ করতে গিয়েছিলেন বিজনেস প্রাইম নিউজের প্রতিনিধি সুব্রত সরকার। বাকিটা জানতে হলে ভিডিও স্কিপ করবেন না। বরং পুরো প্রতিবেদনটা দেখুন।
গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষিকাজের পরেই অবস্থান করছে প্রাণী সম্পদ। আর প্রাণীদের মধ্যে গ্রামের ইকোনমিতে মেজর কন্ট্রিবিউশন কাদের জানেন? গরু, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, হাঁস, খরগোশ। এটা হচ্ছে চিরাচরিত প্রথা। তবে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে আজ বদল এসেছে প্রাণী সম্পদকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে। আর সেখানে বড়সড় কন্ট্রিবিউশন রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি কুকুর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বেড়ালের। কিন্তু বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, যেভাবে প্রাণী সম্পদ একটা রাজ্যের অর্থনীতির খুব বড় দাবিদার হয়ে উঠছে, সেই প্রাণী সম্পদ পরিষেবাটি কিন্তু এই রাজ্যে বড় দুর্বল। একটা হিসেব দিচ্ছি। পশ্চিমবাংলায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে পশু চিকিৎসা কেন্দ্র কটি রয়েছে? কর গুণে বলা যেতে পারে ২৬৫২টি মতন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে, এই সকল পশু চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। সঙ্গে অভাব রয়েছে চিকিৎসকদের। ফলে বাইরে থেকে পশু চিকিৎসা কেন্দ্র শক্তপোক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে বলা গেলেও, পরিষেবা দিতে গিয়ে কার্যত হিমসিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। একদিকে যখন অভাব, অভিযোগের এই বিষয়টা প্রবল চওড়া হচ্ছে, ঠিক তখনই একেবারে বিপরীত একটি ছবি ধরা পড়ল বিজনেস প্রাইম নিউজের প্রতিনিধি যখন পৌঁছে গেলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি হাসপাতালে। গিয়েই তো ধরা পড়ল চমকে যাবার মত ছবি। এখানে রয়েছে পশু চিকিৎসার সবধরণের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রেডিওলজি, এন্ডোসকপি, ইউএসজি, ইসিজি, এবং অত্যন্ত উন্নতমানের অপারেশন ইউনিট।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজ্যে অত্যাধুনিক দুটি পশু চিকিৎসা হাসপাতাল আছে। একটি বেলগাছিয়ায়, যা অত্যন্ত পুরনো, আরেকটি নদীয়ার মোহনপুরে যা তৈরি হয়েছে ২০১৫ সালে। যেখানে পশু পালকদের চাহিদা অনুযায়ী সমস্ত পরিষেবা মেলে। এই হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পরিষেবা দেওয়া হয়। রয়েছে মেডিসিন, সার্জারি এবং গাইনোকোলজি সেকশন। ওপিডি সপ্তাহে ছ’দিন খোলা থাকে। পরিষেবা পাওয়া যায় সকাল দশটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত। আচ্ছা দর্শকদের জন্য একটা তথ্য। এখানে প্রাণী বিশেষে ওপিডি পরিষেবা পেতে মূল্য নির্ভর করে। ওপিডি পরিষেবা মূল্য ছাগল- ৫ টাকা, গরু- ১০ টাকা, বেড়াল- ১০ টাকা, দেশি কুকুর- ১৫ টাকা, বিদেশি কুকুর- ৩০ টাকা, পাখি- ৫ টাকা, খরগোশ- ৫ টাকা, শুকর ৫ টাকা। এছাড়াও যদি জটিল অপারেশনের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে দেশি কুকুর- ৬২৫ টাকা, বিদেশি কুকুর- ১০০০ টাকা, এবং ছাগলের জন্য ৫০ টাকা চার্জ নেওয়া হয়।
শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেয় এই হাসপাতাল থেকে। অর্থাৎ বহু পড়ুয়ার লার্নিং সেন্টার এটা। এই ভেটিরিনারি হাসপাতালে আছে অত্যন্ত আধুনিক অপারেশন থিয়েটার, আছে সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিকস ল্যাবরেটরি, এন্ড্রোসকপি, রেডিওলজি, ইউ এস জি, ইসিজি পরিষেবা। প্রতিদিন এতো এতো প্রাণি আসে, তাদের দেখভালের দায়িত্ব নিতে গেলে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ থাকাটা জরুরি। তবে এখানকার পড়ুয়াদের মধ্যে সেই উদ্দীপনা ভালোভাবে লক্ষ্য করা গেল। কী বলছেন এখানকার পড়ুয়ারা?
তবে হ্যাঁ, একটা বিষয়। পরিষেবা পাওয়া গেলে যে ভিড় হয় না এটা ভুল কথা। এখানে প্রতিদিন অনেকেই আসেন। এবং তাঁরা যে এখানকার পরিষেবা পেয়ে যথেষ্ট খুশি সেটা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।
সত্যি বলতে কী, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কিন্তু রাজ্যে ভেটেরিনারী হসপিটালের প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদা দুইই ঊর্ধ্বমুখী। কারণ বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় উন্নত মানের হাসপাতালের অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণিসম্পদ মরছে। এতে প্রাণীপালকদের লোকসানের শেষ থাকেনা। তাই শুধু সরকারিভাবে নয়। বেসরকারি ক্ষেত্রেও অত্যাধুনিক হাসপাতাল তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ খেয়াল রাখবেন, আমাদের রাজ্যের অর্থনীতির ভিত মূলত গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত মজবুত হয় প্রাণী পালনের জন্যই। তাই প্রাণী সম্পদ এবং প্রাণী পালকদের সুরক্ষায় প্রাণী সম্পদ হাসপাতালের প্রয়োজন রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
সুব্রত সরকার
নদিয়া