Trending
শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নাশেষ ‘পরে
ওরা কাজ করে…’
এদেশে সবচেয়ে সস্তায় যদি কিছু মেলে, তাহলে সেটা শ্রমিকের জীবন। না আছে সিকিউরিটি, না কোন লাইফ ইন্সিওরেন্স পলিসি। তবুও… নিজের জীবন বাজি রেখে, আসমুদ্রহিমাচল-ওরা কাজ করে।
সমীক্ষা বলছে, কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ জন মানুষ প্রাণ হারান। কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি, এগ্রিকালচারের পর এই কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম এমপ্লয়মেন্ট জেনারেটের। আচ্ছা, ১৩০০ কোটি টাকা বাজেটের এই প্রজেক্টের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া ঐ ৪১ জন শ্রমিক এবং উত্তর কাশী টানেল লাইমলাইটে আসত? নাকি, যেমন ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হল, সেভাবেই ব্যাপারটা মিটিয়ে নেওয়া যেত? অবশ্য সেই এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ক’জনই বা পান?
বদ্ধ সুরঙ্গে টানা ১৭ দিন- ৪০০ ঘন্টা- ৪১ টা প্রাণ। উত্তর কাশীর অন্ধকার সুরঙ্গে আলো থাকলেও আশার আলো দেখা যাচ্ছিল না। অবশেষে নিষিদ্ধ পন্থাতেই মিলল সাফল্য। আটকে পড়া শ্রমিকদের প্রাণ বাঁচাল র্যাট হোল মাইনিং। অভিশপ্ত উত্তর কাশী টানেলের অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরলেন ৪১ জন শ্রমিক।
আজ গোটা দেশ ওনার মতোই খুশি। আনন্দের মুহূর্ত তো বটেই। বাট, কিন্তু, পরন্তু… কিছু প্রশ্ন থাকছে। প্রশ্ন থাকছে যে, র্যাট মাইনিং পদ্ধতিতে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হল, সেই দলকে আনা হয়েছিল ২৭ নভেম্বর। মানে উদ্ধারকার্যের মাত্র এক দিন আগে। আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল না কেন? শুধুমাত্র ট্যুরিজমকে বুস্ট করতে ভঙ্গুর হিমালয়ে এত বড় একটা পরিকল্পনা- কতটা যুক্তিযুক্ত? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এত রিস্কি একটা প্রজেক্টে কোন একজিট টানেলের প্ল্যানিং ছিল না কেন?
প্রকৃতি, প্রতিরক্ষা এবং পর্যটন- এই তিনটে বিষয়কে মাথায় রেখে শুরু নয় বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। চীনের সীমান্ত ঘেঁষে তৈরি করা এই টানেল, ভারতের এক কৌশলী পদক্ষেপ বলেও মনে করা হচ্ছে। যাতে জরুরী অবস্থা তৈরি হলে, ভারত দ্রুত বাহিনী পাঠাতে পারে। তাছাড়া, যেহেতু রাস্তাটা চওড়া হবে, তাতে সাধারণ পর্যটকদের ঝুঁকির আশঙ্কা কমবে এবং পাশাপাশি ১ ঘন্টা সময় সময় সাশ্রয় হবে, দাবি পর্যটনের। যদিও পরিবেশবিদরা প্রথমেই আপত্তি জানান। তাদের প্রশ্ন ছিল, যেখানে কিছুদিন আগেই যশী মঠে এত বড় বিপর্যয় নেমে আসে, সেখানে ভঙ্গুর হিমালয়ে এমন এক রিস্কি প্রকল্প বাস্তবায়িত করার চিন্তাভাবনা সরকার কীভাবে করেন? বিতর্ক পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্টে। রায় বেরোয় কন্সট্রাকশনের পক্ষেই। শুরু হয় ৮২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ তৈরির কাজ।
যথারীতি প্রকৃতির বিপক্ষে যাওয়া এবং বিপর্যয়। বিগবাজেটের প্রোজেক্ট। সুতরাং, বিপর্যয়ের খবর সামনে আসলে সেটা নিয়ে তোলপাড় হবেই। কাজেই জোরকদমে শুরু হল উদ্ধারকাজ। টানেলের ডায়ে, বাঁয়ে, উপরে নীচে- চারিদিক থেকে শুরু হল খননকার্য। এক্ষেত্রে নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যারা উদ্ধারকার্য সামলেছেন তাদের কুর্নিশ। কারণ তাদের পথেও কোন বিপদ আসলে বেঁচে ফেরার উপায় ছিল না। কারণ এই প্রোজেক্টে কোন একজিট টানেলের প্ল্যানিং-ই ছিল না।
কেন বারবার একজিট টানেল নিয়ে এত কথা হচ্ছে? কারণ সুবিশাল হিমালয়ের বুকে প্রাণ হাতে নিয়ে এই পাইলট প্রোজেক্টে যারা কাজ করেন, তাদের জন্য একটা প্ল্যান বি রাখাটা জরুরী- যাতে শেষ মুহূর্তে কোন বিপদ আসলে তাদের প্রানে বাঁচান যায়। এক্ষেত্রে ৪১ জন ফিরে এসেছেন, সেটা ভালো কথা। কিন্তু প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে মাত্র এক ঘন্টার সময় বাঁচাতে এত বড় প্রোজেক্টের সিদ্ধান্ত ঠিক কতটা জরুরী? যদি সত্যিই গুরুত্ব থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে এর সঙ্গে যথার্থ সিকিওরিটি নেওয়া ছিল না কেন?
দিনের পর দিন ইকো সেন্সিটিভ জোনে মাইনিং চলছে, কন্সট্রাকশন চলছে এবং অ্যাক্সিডেন্ট বাড়ছে- কোন সলিউশন ছাড়াই জাস্ট এগোচ্ছে। প্ল্যানিং-এ কোন ডেভলপমেন্ট নেই। যদি থাকতই, তাহলে এই প্রজেক্টে এত বড় বিপর্যয় নেমে আসল কেন? পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো এবং সেখানে বিপর্যয় নেমে আসা- এই ঘটনা তো নতুন নয়। দেশ তো বিশ্বগুরু হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে। তাহলে বিশ্বের সামনে দেশের এই ফোঁপরা ছবিটা সঠিক মেসেজ দিচ্ছে তো? নাকি সত্যিই যতদিন যাচ্ছে ততই সাধারণ মানুষের জীবনের দাম সস্তা হচ্ছে এই দেশে…?
দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ