Daily
যত এগোচ্ছে সময়, ততই সার্বিকভাবে উন্নতি হচ্ছে দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরের। এই উন্নতির অন্যতম হাতিয়ার টেকনোলজি বা প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে অনেকের কাজ হয়ে যাচ্ছে এক নিমেষে। কৃষিক্ষেত্রেও সেই টেকনোলজির প্রভাব পড়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিনে দিনে বাড়ছে। যারা আগে কোনদিন কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, আজ তাঁরাও প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করছেন এবং নামছেন কৃষিকাজে। যেমন শিলিগুড়ির সেবক রোডের দুই ব্যবসায়ী- অনিল কুমার আগারওয়াল এবং প্রদীপ সিংহাল। কী করলেন তাঁরা?
আমরা সকলেই জানি, করোনা পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে বহু মানুষের জীবন জীবিকার পথ। অনেকেই অভাবের তাড়নাতে পাল্টেছেন নিজেদের পেশা। তবে উত্তরবঙ্গের দুই ব্যবসায়ী অনিল কুমার আগারওয়াল এবং প্রদীপ সিংহাল। এঁরা করোনা পরিস্থিতির পর যেভাবে নিজেদের পেশা পাল্টালেন, সেটা কার্যত নজির তৈরি করেছে। পাল্টেছে তাঁদের ব্যবসায়িক চিন্তাধারা। কিরকম? বেশ কয়েক বছর আগে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার জন্য ১৫ একর জমি ক্রয় করেছিলেন তাঁরা। জমিটা ছিল শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের রাধাজোত এলাকায়। কিন্তু সেখানে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা হল কই? বরং শুরু হয়েছে জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজ। এক একর জমিতে তাঁরা তৈরি করেছেন পলি হাউজ। আর সেখানেই তাঁরা চাষ করছেন ক্যাপসিকামের। তাও আবার এক, দুই প্রজাতির নয়। বরং বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাপসিকাম চাষ করছেন তাঁরা। আর সেটা তাঁরা করছেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে। আর এই চাষে না প্রয়োজন মাটির, না প্রয়োজন মজদুরের। সবই হচ্ছে প্রযুক্তির দয়ায়।
ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করে। পলি হাউজের ভেতরে সাবস্ট্রেট ব্যবহার করে কোকোপিট দিয়ে চাষ করা হচ্ছে এই ক্যাপসিকাম। পলি হাউজের ভেতরে ন’হাজার গাছের চারা লাগানো হয়েছে। যা আনা হয়েছে সুদূর নেদারল্যান্ড থেকে। আপাতত দুই ধরণের বীজ আনা হয়েছে। আর এখন চাষ করা হচ্ছে দুই প্রজাতির ক্যাপসিকাম। পুরোটাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি হবার কারণে এখানে শ্রমিকের প্রয়োজন প্রায় নেই বললেই চলে। পুরোটাই প্রযুক্তি নির্ভর। আর যেহেতু এটা একেবারে নতুন প্রযুক্তি, তাই ঠিকঠাক রিসার্চ করে এই ফিল্ডে নামলে ভালো রকম এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট হতে পারবে। একইসঙ্গে যে সকল কৃষক যারা সাবেকি প্রথায় কাজ করছিলেন, তাদের এই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করাতে পারলে, তাঁরাও লাভবান হবেন।
তবে হ্যাঁ, গ্রিন হাউজ তৈরির জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে মোটা অঙ্কের খরচ রয়েছে। যেমন এই পলিহাউজটা তৈরি করতেই খরচ হয়েছে প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকা মতন। বর্তমানে লাল এবং হলুদ ক্যাপসিকামের চাষ করা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি আরও তিন ধরণের গাছ লাগানো হবে। সত্যি বলতে ফলন হচ্ছে বেশ ভালোই। তবে এঁরা ক্যাপসিকাম রিটেলের জন্য দেন না। মূলত এক্সপোর্ট আর হোলসেল- এই দুটো ওয়েতেই ক্যাপসিকাম বিক্রি করছেন তাঁরা। তবে চাষবাস থেকে একেবারে বিক্রি- এইসবের মধ্যে থাকে থার্ড পার্সন। যারা আসল লাভটুকু নিয়ে যায়। সেক্ষেত্রেও কৃষকরা যাতে বঞ্চিত না হন, তার জন্য ভালোরকম পরিকল্পনা সেরে ফেলেছেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই প্রত্যেকটা গাছে ফলন আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। গাছ পিছু ফলন হয়েছে আট থেকে দশটি ক্যাপসিকামের। এখানে চাষের কাজের জন্য নিযুক্ত রয়েছেন মোট ১৭ জন কর্মী। যাঁদের ছাড়া এই সুবিশাল কর্মকাণ্ড ফলানো অসম্ভব। আর সবচেয়ে বড় কথা এই ১৭ জনের মধ্যে আবার ৬ জন গ্রামের মহিলাও রয়েছেন। একেবারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই চাষবাস নিঃসন্দেহে আধুনিক কৃষিকাজের ছবিটাই তুলে ধরছে। যার সঙ্গে আমাদের ছোট থেকে দেখে আসা চিরাচরিত কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে কোনরকম মিল নেই। ফলন হচ্ছে দারুণভাবে। সুতরাং সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিকাজ ভালো লাভদায়ক হয়ে উঠছে। সুতরাং নতুন জেনারেশনের এগিয়ে আসার মধ্যে তো কোন বাধা নেই। একইসঙ্গে কর্মসংস্থান, সেটাই বা কম কী? একদিকে যখন সাবেকি প্রথায় কাজ করা কৃষকদের মধ্যে একটা অনিহা দেখা যাচ্ছে, তখন একেবারে অন্য মেরুতে দাঁড়িয়ে, প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেই কৃষিকাজ যেন দিনে দিনে উন্নত ভারতের ভিত মজবুত করছে। তাই আপনাদের কাছে প্রশ্ন, প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিকাজ কি ভারতের ভবিষ্যৎ হতে চলেছে? জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে নজর থাকুক বিজনেস প্রাইম নিউজে।
অরূপ পোদ্দার
শিলিগুড়ি