Trending
রাশিয়া পাশে চাইছে ভারতকে। আমেরিকাও পাশে চাইছে ভারতকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে রাশিয়া এবং আমেরিকার এই ভারত নিয়ে টানাটানি করার কারণ কি? রাশিয়ার ফায়দা কি? আমেরিকার ফায়দাই বা কি? এমন তো নয় যে, আমেরিকা এবং রাশিয়া ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই মজবুত দেখছে। হ্যাঁ, ডিজিটাল ইন্ডিয়া বা স্টার্ট আপ সহ ভারতের বেশ কিছু প্রোগ্রেস অবশ্যই নজর কাড়ছে গোটা বিশ্বের। কিন্তু ভারত এখনো উন্নয়নশীল দেশ। উন্নত হতে সময় লেগে যাবে অনেকটাই। তারপরেও কেন ভারতকে মধ্যিখানে রেখে দড়ি টানাটানি করতে চাইছে হোয়াইট হাউজ এবং মস্কো? আসুন, ছোট্ট একটি আলোচনার মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।
প্রথমেই বলি, রাশিয়া যখন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তারপর থেকেই মস্কোর ওপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা বসিয়ে দেয় আমেরিকা। আমেরিকার পথে হাঁটে ইউরোপের অন্যান্য দেশও। তাদের বক্তব্য পরিষ্কার ছিল যে রাশিয়ার থেকে তেল কেনা একেবারে বন্ধ করতে হবে। সেই আর্জি পৌঁছয় বিশ্বের প্রতিটি দেশের কাছেই। কিন্তু ভারত তাদের কথা শুনলে তো?
বিদেশমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট যে ভারত কিন্তু রাশিয়ার তেল কিনছে না। ভারত শুধুমাত্র তেল কিনছে। যুদ্ধের জন্য যখন গোটা বিশ্বে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তখন রাশিয়া নিজে থেকেই ভারতের কাছে কম দামে তেল বেচার প্রস্তাব দেয়। স্বাভাবিকভাবেই, দেশের স্বার্থে কম দামে তেল কিনতে আগ্রহী হয় ভারত। মাথায় রাখতে হবে, রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি করার ব্যপারে ভারত রয়েছে সেকেন্ড পজিশনে। একটি সমীক্ষা বলছে, এই বছর মার্চ মাসে ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করত প্রয়োজনের ০.২%। কিন্তু অক্টোবরে আমদানির পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। জানা যাচ্ছে, রাশিয়ার থেকে ভারত তেল আমদানি করছে প্রায় ২২% মতন। মানে চলতি বছরের প্রথম কোয়ার্টারে যেখানে প্রতিদিন ৬০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করা হত, এখন অক্টোবরে আমদানি করা হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ ব্যারেল। শুধু তাই নয়। সামরিক ইকুইপমেন্ট কেনার ক্ষেত্রেও রাশিয়ার অর্থনীতিকে অক্সিজেন দিয়ে আসছে ভারত। তার অন্যতম কারণ ভারত চায় নিজের সামরিক ক্ষমতাকে আরও মজবুত করতে। আর যে কারণে, সামরিক খাতে ভারত খরচাও করে অন্যান্য দেশের থেকে অনেকটাই বেশি। তবে সেটা কখনই আমেরিকার মত নয়। যদি ২০০০-২০২০ সাল পর্যন্ত ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে, ভারতে আমদানি হওয়া অস্ত্রশস্ত্রের প্রায় ৬৬% এসেছে শুধু রাশিয়া থেকেই। শুধু রাশিয়ার অস্ত্র কেনার জন্য ভারত খরচ করেছে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে, রাশিয়ার অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার পেছনে ভারতের ভূমিকা রয়েছে অনেকটাই। কিন্তু আমেরিকা ঠিক এখানেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে।
বাইডেন প্রশাসন চাইছে, ভারত যেভাবে রাশিয়ার থেকে অস্ত্রশস্ত্র কিনছে এবং নিজের মিলিটারি বেসকে মজবুত জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, এখন সেই জায়গাটা দখল করুক আমেরিকা। আর যে কারণে ভারতের পাশে দাঁড়াতে চায় মার্কিন মুলুক। আমেরিকা যদি ভারতে জন্য এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কেনার বরাত পায়, তাহলে রাশিয়ার অর্থনীতি অনেকটাই ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে করছে আমেরিকার কূটনৈতিক মহল। চলতি বছরে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি বলছে, ভারত হচ্ছে বন্ধু। চিন হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী এবং রাশিয়া হচ্ছে থ্রেট বা বিপদ সংকেত। খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, বাইডেন প্রশাসন চিনকে থ্রেট হিসেবে না-দেখে বরং ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে রাশিয়াকে সরাসরি থ্রেট হিসেবেই দেখছে আমেরিকা। মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে রাশিয়ার এই ব্যবসা বৃদ্ধি, সঙ্গে প্রভাব খাটানোর বিষয়টা একেবারেই মেনে নিতে চাইছে না বাইডেন গভর্নমেন্ট। কিন্তু এখানেই রয়েছে একটা আয়রনি। যেটা উল্লেখ না-করলেই নয়। এখন আমেরিকা ভারতকে সামরিক দিক থেকে মজবুত করার আগ্রহ দেখালেও, একটা সময় ছিল যখন আমেরিকা সহ পশ্চিমি দেশগুলোই মুখ ফিরিয়ে থাকতে পছন্দ করত। মানে, এমন অনেকটা সময় কেটেছে, যখন পশ্চিমি দেশগুলো ভারতের কাছে অস্ত্র পাঠানোর ব্যপারে একেবারে উদাসীন থেকেছে। কিন্তু রাশিয়া বরাবরই ভারতের পাশে দাঁড়াতে দেখিয়েছে ভালোরকম আগ্রহ। অর্থাৎ, আমেরিকার উন্নাসিকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে রাশিয়া। ফলে বহুদিন ধরেই ভারতে অস্ত্র পাঠানোর ব্যপারে রাশিয়া এগিয়ে এসেছে এবং নিজের অর্থনীতি মজবুত করেছে।
এখন বিষয়টা হচ্ছে, মোদী সরকার আসার পর ভারত তার নিজের মিলিটারি বাজেট অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। একদিকে যখন গোটা বিশ্ব অর্থনীতি করোনার হানা এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কার্যত বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে, তখন রাশিয়ার ইকোনমিক গ্রোথের পতন কিছুটা হলেও আটকাতে পেরেছে ভারত। এখন সেই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চাইছে আমেরিকা। অতীতের মুর্খামি আজ ভালোরকম চোকাতে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। আপনার কি মনে হয় তেল বা সামরিক অস্ত্রশস্ত্র রাশিয়ার থেকে কেনার ক্ষেত্রে লাগাম টানা উচিৎ ভারতের? সামরিক খাতে শক্তি বাড়ানোর জন্য কি রাশিয়ার হাত ছেড়ে ধরা উচিৎ আমেরিকার হাত? মতামত জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ