আমেরিকার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। বিশ্ব অর্থনীতির সবেধন নীলমণি খোদ আমেরিকা নাকি পড়তে চলেছে আর্থিক মন্দার কবলে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ অথবা আগামি বছরের শুরুতেই আর্থিক দুর্যোগ কাবু করতে পারে মার্কিন মুলুককে। যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে বেশ কিছু দেশে। কিন্তু আমেরিকায় আর্থিক মন্দা কেন? তাহলে কি এই মন্দা আমেরিকার গ্রেট ডিপ্রেশনের স্মৃতিকে ফের উসকে দেবে? এতটাই ভয়াবহ হতে চলেছে? জানার চেষ্টা করা যাক আজকের প্রতিবেদনে।

আমেরিকার অর্থনীতি যে খুব একটা মজবুত জায়গায় নেই, সেই আলোচনা ছড়িয়ে পড়ছিল খোদ আমেরিকার অভ্যন্তরেই। অনেকেই আর্থিক মন্দা আসার এই ইঙ্গিতের জন্য সরাসরি আঙুল তুলে দিয়েছেন অশীতিপর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দিকেই। বহু মার্কিন নাগরিক মনে করছেন, আমেরিকা এখনো নিজের দাদাগিরি দেখাবার জন্য লাগাতার যুদ্ধে মদত দিয়ে চলেছেন এবং জলের মত টাকা খরচ করছেন। এমনিতেই বাইডেনের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা ক্রমশই ফিকে হচ্ছে। তার কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বয়সের কারণেই আগের মত আর শক্ত নেই। একদিকে রয়েছে তাঁর আলটপকা মন্তব্য, আবার অন্যদিকে রয়েছে খেই হারিয়ে ফেলা। অতি সম্প্রতি তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি-কে হঠাৎ পুতিন সম্বোধন করে বসেছিলেন। কমলা হ্যারিসকে আহ্বান জানাতে গিয়ে ট্রাম্পের নাম মুখে এনে ফেলেন। এসবই ধীরে ধীরে বাইডেনের প্রতি মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে একটা অবিশ্বাসের জায়গা যে তৈরি করছে, সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। আর আমেরিকার অর্থনীতি যে হোঁচট খাচ্ছে তার অন্যতম কাণ্ডারি নাকি জো বাইডেন- এমনটাই মনে করছেন অনেকে। তবে এই শোচনীয়তার জন্য কি শুধু জো বাইডেনের ওপর দায় বর্তায়? নাকি রয়েছে অন্য কারণ?

আমরা সকলেই জানি বিশ্ব অর্থনীতিকে চালনা করছে মার্কিন মুদ্রা ডলার। কোন দেশ যদি হঠাৎ বিপদে পড়ে তখন ত্রাতা হিসেবে পাশে দাঁড়ায় সেই ডলার। তবে সম্প্রতি আমেরিকায় বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। মার্কিনী প্রশাসনকে অর্থনীতি সামাল দেবার জন্য ভালোরকম হোঁচট খেতে হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে যে, এই মুহূর্তে কোন বড়সড় বিপদ ঘনিয়ে না এলেও ভবিষ্যতের জন্য সেটা ভালোরকম চিন্তা বাড়াচ্ছে মার্কিন মুলুকে। যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে গ্রেট ডিপ্রেশনের কথা আমরা কেউ ভুলে যাই না। ১৯২৯ সালে মার্কিন বাজারে চরম অঘটন ঘটে। ব্যপক আর্থিক মন্দার মুখে পড়তে হয় মার্কিনী প্রশাসনকে। টানা ১০ বছর সেই মন্দার প্রভাব ছড়িয়েছিল আমেরিকায়। বহু অর্থনীতি বিশারদ মনে করছেন, এবার তেমন কোন বড় মাপের মন্দা না এলেও আমেরিকার অর্থনীতি যে খুব একটা সুবিধেজনক জায়গায় থাকবে এমন কথা বলা যায় না। অনেকেই মনে করছেন যে, আগামি বছরের শুরুতেই মন্দা ভালোরকম গ্রাস করতে পারে আমেরিকার অর্থনীতি। সেখানে বেকারত্ব বাড়ছে। শেয়ার বাজার মন্দার মুখোমুখি হচ্ছে। ইউরোপ এবং চিনের আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খাওয়ায় সেই প্রভাব পড়ছে মার্কিনী অর্থনীতিতে। আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডেরাল রিজার্ভের নীতি নির্ধারণকারী সংস্থা ফেডেরাল ওপেন মার্কেট কমিটি জানিয়েছে যে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আমেরিকায় আর্থিক বৃদ্ধি হতে পারে মাত্র ১ শতাংশ! ফলে আমেরিকার আর্থিক বৃদ্ধি এখানে ভালোরকম ধাক্কা খেতে পারে। একই সঙ্গে অনেকে আবার ট্রেজারি নোটের দিকেও ইঙ্গিত করছেন।

এছাড়া আরও একটা কারণ হল ধর্মঘট। আমেরিকা গত বছর থেকে বেশ কয়েকটি ধর্মঘটের মুখোমুখি হয়েছে। তার মধ্যে গত বছর দেশের গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাগুলো ধর্মঘট ডেকেছিল। আর সেটা বহরে বৃদ্ধি পাওয়ায় মার্কিনী অর্থনীতি একটু টালমাটাল হয়ে পড়ে। অনেকেই মনে করছেন, শুধু গাড়ি নয়। আমেরিকার সামগ্রিক নির্মাণ শিল্পই আজ গোঁত্তা খাচ্ছে বারবার। ফলে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে অনেকটা। এদিকে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক সুদের হার ক্রমশই বাড়াচ্ছে যা অর্থনীতিবিদদের চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। এদিকে আমেরিকায় যদি মন্দা আসে তার প্রভাব ভারত সহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে খুব একটা সময় নেবে না। মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির মত একাধিক বিষয় অন্যান্য দেশের অর্থনীতির উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতি এগোতে পারে মন্দার দিকে। আপনারা কী মনে করেন জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন।
আর দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।

জীবন হোক অর্থবহ