Trending
চিন আর আমেরিকার মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
তাইওয়ানকে ইস্যু করেই এই খেলা
যুদ্ধের পর ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা দুই দেশের।
বেজিং জিতলে ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়াবে ভারতও
সুতরাং, বিনা যুদ্ধে নাহি দিব, সুচাগ্র তাইওয়ান। বিষয়টা অনেকটা তেমনই বলতে পারেন। যুদ্ধের ডঙ্কা বাজল বলে। ২০২৫ এর শুরুতেই রণদামামা বাজাতে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই দেশ- চিন এবং আমেরিকা। তাইওয়ানকে গিলতেই কি আক্রমণ শানাবে চিন? খড়ের গাদায় ছাইয়ের মতো এখনও যুদ্ধ চলছে রাশিয়া-ইউক্রেনে। গোটা বিশ্বকে ঘিরে ফেলেছে মূল্যস্ফীতি আর অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। এরই মধ্যে নতুন করে কোন যুদ্ধের আশঙ্কা? গোটা বিশ্ব তো বটেই। আশঙ্কা সত্যি হলে ফাঁপরে পড়তে পারে ভারতও।
তাইওয়ানকে নজরে রেখে দীর্ঘদিন ধরে চিনের আগ্রাসী মনভাব বেড়েই চলেছিল। চিন্তার ভাঁজ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছিল দক্ষিণ চিন সাগরে টহল দেওয়া মার্কিনী নৌবহরের কপালে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চিন আমেরিকা সম্মুখসমরের আশঙ্কা স্পষ্ট করেছেন মার্কিন বিমানবাহিনীর জেনারেল। আর এই আশঙ্কা সামনে আসার পর কার্যত ঝড় উঠছে বিশ্বমহলে। তবে, তিনি যখন আশঙ্কার কালো মেঘ দেখেছেন, তখন হাওয়ায় কোন কথা বলেননি। চিন কীভাবে তাইওয়ানে আক্রমণ হানবে তার একটা ডিটেইল্ড ব্লু প্রিন্টও পেন্টাগনের কাছে জমা করেছে মার্কিনী এই বায়ুসেনা। চিন থেকে বহু আগেই বিচ্ছিন্ন হয়েছে তাইওয়ান। আর এই বিচ্ছিন্ন তাইওয়ানকে গিলতেই চিনের লক্ষ্য ২০২৫। কেন ২০২৫? কীভাবেই বা যুদ্ধ হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা? আর এই যুদ্ধের আঁচ ভারতকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? জানতে হলে আজকের প্রতিবেদনটি দেখতে হবে শেষ পর্যন্ত।
স্ট্র্যাটেজিস্ট শি জিন পিং। মস্তিস্ক তো নয়। চতুর বুদ্ধির আঁতুড়ঘর। চিনের নজরে ২০২৪-এ তাইওয়ানের নির্বাচন। জিং পিং আপ্রান চেষ্টা করবে নিজের পছন্দের সরকার গড়তে। সফল হলে চুক্তি করে দোসর বানানো আর না হলে হামলা। মানে সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বেকাতে দুবার ভাববেন না চীনা সরকার। চীনা আগ্রাসন থেকে তাইওয়ানকে বাঁচাতে পারবে না আমেরিকা, এমনটাই সতর্কবার্তা রয়েছে মার্কিনী জেনারেলের তরফেও। ইতিমধ্যেই চীনা সরকারের নজরদারিতে রয়েছে দক্ষিণ চিন সাগর আর জাপান সাগরে থাকা মার্কিনী নৌবহর। প্রয়োজনে সেখানে এয়ার স্ট্রাইক চলবে। মোট কথা তাইওয়ানকে হাসিল করতে যা করা দরকার, যেভাবে করা দরকার সেভাবেই এগোবে চিন। পথে কাঁটা আসলে সাফাই করে ফেলবে তাদের। আর তাছাড়াও ২০২৪ এ ভারতে রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। আমেরিকাতেও তখন নির্বাচনের ব্যস্ততা। সুতরাং, থাবা বসানোর এটাই সঠিক সুযোগ বলে মনে করে চিন।
আচ্ছা, তাইওয়ান তো একটা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে কেন নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করছে চিন? ভেবে দেখেছেন কখনও? ইতিহাস বলছে, সপ্তদশ শতকে চিনে কিং রাজবংশের শাসনকালে প্রথমবার চিনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল তাইওয়ান। ১৮৯৫ সালে, প্রথম চিন-জাপান যুদ্ধে পরাজিত হয় চিন। সেই সময় দ্বীপটির দখল নিয়েছিল জাপানিরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর, ১৯৪৫ সালে চিন ফের তাইওয়ানের দখল নিয়েছিল। কিন্তু তাইওয়ানও নাছোড়বান্দা। তারা কিছুতেই সহমত পোষণ করতে নারাজ। ইতিহাসের উল্লেখ করে, তাইওয়ান যুক্তি দেয় যে, তারা কখনই আধুনিক চিন রাষ্ট্রের অংশ ছিল না। আর তাছাড়া সেখানকার সিংহভাগ মানুষই চিনের শাসনে আসতে নারাজ।
তাইওয়ানকে সমস্তরকম সাহায্যও করতে প্রস্তুত আমেরিকা। আসলে, চিনের এই আগ্রাসী মনভাব যদি আমেরিকার স্বার্থে কোন আঘাত না হানত, তাহলে হয়তো আমেরিকা এইভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাইওয়ানকে সাহায্যও করতে এগিয়ে আসত না। আমেরিকার ঠিক কোন স্বার্থে আঘাত হানছে চিন? চিন যদি তাইওয়ান দখল করে নেয়, সেই ক্ষেত্রে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যের অবসান ঘটবে। বদলে যাবে এই অঞ্চলে আমেরিকার ক্ষমতার সমীকরণ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট ইতিমধ্যেই আমেরিকার বিশ্বনেতা হিসেবে গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার অবস্থানকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাইওয়ানও কিন্তু মার্কিন নেত্রিত্বের কাছে আরও বড় একটা চ্যালেঞ্জ। চিনের কাছে তাইওয়ান হারানো মানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ বড়সড় হুমকি।
এবার আসা যাক, ভারতের বিষয়ে। চিন যদি তাইওয়ান অধিগ্রহনে সফল হয়, তাহলে এশিয়া মহাদেশের ম্যাক্সিমাম জায়গায় চীনা আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। আমেরিকার মতই হুমকির মুখে পড়বে ভারতের স্বার্থ। আরও একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। মানচিত্রে নজর রাখলে বোঝা যাবে, চিন থেকে আমেরিকা বহু দূরে অবস্থিত। কিন্তু ভারত? ভারতের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে চিন। তাই তাইওয়ানের প্রতি চিনের এই আগ্রাসন আমেরিকার কাছে যত না বড় দুশ্চিন্তা, ভারতের কাছে তার চেয়ে ঢের গুণ বেশি দুশ্চিন্তার কারণ। চিন-পাকিস্তান জোড়া সিদ্ধান্তে তীব্র চাপের মুখে পড়বে নয়া দিল্লি। এ বিষয়ে অনেকে মনে করেন ভারত মহাসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যেই তাইওয়ান দখল করতে মরিয়া চিন। আর একবার লক্ষ্যপূরণ হয়ে গেলে ভারত মহাসাগরে চিনের সামরিক উপস্থিতি বাড়বে। ভারতের জন্য যেটা ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে, যে বিষয়টা ডিফোকাসড হয়ে যাচ্ছে সেটা হল তাইওয়ানের অর্থনীতি। ফোন থেকে ল্যাপটপ, ঘড়ি অথবা গেম কনসোল – বিশ্বের বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম চলে তাইওয়ানে তৈরি কম্পিউটার চিপ দিয়ে। গোটা বিশ্ববাজারে অর্ধেকেরও বেশি মার্কেট তাইওয়ানের দখলে। বেজিং যদি সেই মার্কেটের মালিকানা হাসিল করে নেয়, তাহলে শুধু ভারত নয়, কোণঠাসা হবে আমেরিকা বা ফ্রান্সের মতো একাধিক দেশ। এছাড়াও ইন্দো-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্যের পরিবেশ বজায় রাখাতেও, চীনা দখল থেকে তাইওয়ানকে মুক্ত রাখা আবশ্যক বলে মনে করেন অনেকেই।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়। উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। একটা যুদ্ধ মানে শুধু জয়-পরাজয় নয়। বরং পরাজয়ই বেশি হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই দিকেই আঙ্গুল দেখাচ্ছে। কোটি কোটি টাকার আর্থিক নয়ছয়, শেয়ার মার্কেটে হুলুস্থুলু, মূল্যস্ফীতি, শিক্ষার পরিবেশের অবনতি, প্রচুর মানুষের প্রাণহানি। আর? আর বিশ্বজুড়ে ঘৃণার বাতাবরণ। একটা যুদ্ধ মানে উন্নয়নের দৌড় থেকে প্রায় বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে পড়া। তাই আর যাই হোক। যুদ্ধ পরিস্থিতি কারও কাছেই অভিপ্রেত নয়। কিন্তু যে দুই দেশ যুদ্ধের ডঙ্কা বাজানর দিকে এগিয়ে চলেছে, তারা কি এসব ভাবছে? কারণ, মার্কিনী বায়ুসেনার সেই কর্তা কিন্তু ইতিমধ্যেই মার্কিন নৌবহরগুলোকে চোখ-কান খোলা রাখার নির্দেশ পাঠিয়েছে। কীভাবে চীনা আগ্রাসনের সঙ্গে যুঝিয়ে চলা যায়, সে বিষয়ে অগ্রিম সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। মানে যুদ্ধপ্রস্তুতিই চলছে। আপনাদের কী মনে হয়, চিন আমেরিকা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে ভারত আরও কতটা বিধ্বস্ত হতে পারে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।