Trending
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট। যে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকে গোটা বিশ্ব। যেহেতু বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও ধনী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাই এই দেশের নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করে নানান আন্তর্জাতিক বিষয়বস্তু।তবে আপনারা জানেন কি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের থেকে অনেকটাই আলাদা আজকের।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়াটি ভীষণভাবে জটিল। জনগণের পরোক্ষ ভোটের ভিত্তিতে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। আজকের প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে।
আপনারা যদি নতুন হন তাহলে এখনই সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল Business Prime News. আর বেল আইকনে ক্লিক করতে ভুলবেন না।
এবার আসি মূল প্রতিবেদন। আমাদের দেশের আইনসভা কে যেমন বলা হয় পার্লামেন্ট, ঠিক তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কে বলা হয় কংগ্রেস। ভারতের পার্লামেন্টের দুইটি কক্ষ। উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষ লোকসভা। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট অর্থাৎ কংগ্রেস ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট একটি আইনসভা। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ যার নাম হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ যার নাম সেনেট।এই হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সদস্য সংখ্যা ৪৩৫ আর সেনেটের সদস্য সংখ্যা ১০০ জন।ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থায়, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ লোকসভায় যে দলের সদস্য সংখ্যা বেশি থাকে তারাই সরকার গঠন করে এবং তাদের নির্বাচিত দলনেতাই প্রধানমন্ত্রী পদ পান। এক্ষেত্রে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্য সভার সদস্যদের ভোটাধিকারের তেমন কোন গুরুত্ব থাকেনা। কিন্তু এখানেই ব্যতিক্রমী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫ জন সদস্য এবং উচ্চকক্ষ সেনেটের ১০০ জন সদস্য সর্বমোট ৫৩৫ জন সদস্যের যৌথ সংখ্যাগরিষ্ঠে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বমোট রাজ্যের সংখ্যা ৫০। এই ৫০টি রাজ্যে দুটি করে সেনেটের সদস্যপদ রয়েছে অর্থাৎ ৫০*২= ১০০। আমাদের দেশ ভারতবর্ষে সদস্যদের যেমন সাংসদ বলা হয় সেইরকম ভাবেই, কংগ্রেসের এই দুই কক্ষের ৫৩৫ জন সদস্যকে বলা হয় কংগ্রেসম্যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যকালীন মেয়াদ ৪ বছর। একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন থাকতে পারেন না। কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্যদের কার্যকালীন মেয়াদ ২ বছর। অপরদিকে উচ্চকক্ষ সেনেটের সদস্যদের কার্যকালীন মেয়াদ ৬ বছর।
এবার আপনাদের কে জানাবো ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির বিষয়।প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এই ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরা।এর সদস্যদের বলা হয় ইলেকটর। প্রতিবেদনের শুরুতেই আপনাদের বলেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জনগণের পরোক্ষ ভোটদানে নির্বাচিত হন। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য অর্থাৎ ইলেকটররা।এরপর ইলেকটরদের সমন্বয়ে গঠিত ইলেকট্রনাল কলেজের সরাসরি ভোটে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। এক্ষেত্রে মূলত কংগ্রেসের সদস্যরাই ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হন।আগেই আপনাদের বলেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা অর্থাৎ কংগ্রেসের মোট সদস্য সংখ্যা ৫৩৫। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির আলাদা করে নিজস্ব ৩টি ভোট রয়েছে। সুতরাং ৫৩৫+৩= ৫৩৮ জন সদস্য নিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ গড়ে ওঠে।আর এই ৫৩৮ জনের মধ্যে যে প্রার্থী সবথেকে বেশি ভোট পায় সে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়।এক্ষেত্রে ম্যাজিক ফিগার হলো 270।প্রসঙ্গতি উল্লেখযোগ্য যে রাজ্যের জনসংখ্যা যত, সেই রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যাও বেশি।আমাদের দেশ ভারতবর্ষে যেমন সব থেকে বেশি লোকসভার আসন রয়েছে উত্তর প্রদেশে, যার আসন সংখ্যা ৮০। ঠিক একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবথেকে বেশি ইলেক্টোরাল আসন রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, যার আসন সংখ্যা ৫৫। আর এখানেই চলে আসে আর একটি পদ্ধতির কথা, যার নাম WINER TAKE ALL. এই পদ্ধতিটি ভীষণভাবেই বিতর্কিত।বিষয়টা আপনাদের সহজ করে বুঝিয়ে বলি। ধরে নেওয়া যাক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবথেকে বেশি আসন বিশিষ্ট রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া। সেই রাজ্যে ক্যান্ডিডেট নাম্বার ওয়ান তিনি ভোট পেয়েছেন ৩৮ টা এবং ক্যানডিডেট নাম্বার টু তিনি ভোট পেয়েছেন ১৭টা, সেক্ষেত্রে সমস্ত ভোটে জয়ী হবেন ক্যান্ডিডেট নাম্বার ওয়ান।আর এই পদ্ধতিকেই বলা হয় WINER TAKE ALL
যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন পদ্ধতিটি ভীষণভাবেই জটিল, তাই এক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় ব্যয় হয়।প্রায় এক বছর ধরে চলে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া। আর যে বছরে এই নির্বাচন হয় সেই বছরটিকে বলা হয় Election Year.একটি ইলেকশান ইয়ারের নভেম্বর মাসে প্রথম সোমবারের পরের মঙ্গলবার নির্বাচন সংঘটিত হয়। এই নির্বাচনকে বলা হয় পপুলার ভোট।তবে এই পপুলার ভোটের মধ্যে দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় না, নির্বাচিত হন কংগ্রেসের সদস্যরা। আর এই কংগ্রেসের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ইলেক্টোরাল কলেজ। আর এই ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে যে ক্যান্ডিডেট জয়ী হয় তিনি নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একজন ভোটার ডাক যোগের মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালটের মধ্য দিয়েও ভোট দান করতে পারেন। এবং এই পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার ভোটারের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। আবার যদি কোন প্রাপ্তি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলেন, সেক্ষেত্রে সেই নিয়ে তদন্ত করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আর এর জন্যই নির্বাচনী ফল প্রকাশে দীর্ঘসুত্রিতা দেখা যায়। জানুয়ারি মাসের ছয় তারিখে এই সমস্ত ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয়।এরপরই ঘোষণা করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম। ফলাফল প্রকাশের পর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন এবং ২০শে জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটাল বিল্ডিং-এ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। অতীতে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতো। কিন্তু পরে এই নিয়ম বদল হয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে আলাদা ব্যালট করা হয়েছে।
এই হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পক্রিয়া।তবে এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার বেশ কিছু বিতর্কিত দিক রয়েছে। প্রথমত উইনার টেক অল পদ্ধতি।দ্বিতীয়তঃ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণের ভোটের থেকে ইলেক্টোরাল ভোটের অধিক ক্ষমতা।যার ফলে অনেক সময় কোন একজন প্রার্থী জনগণের থেকে বেশি ভোট পেয়েও নির্বাচনে পরাজিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,২০১৬ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন পপুলার ভোটে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে বেশি ভোট পেয়েও নির্বাচনে পরাজিত হন।কারণ সেই WINER TAKE ALL পদ্ধতি। জনগণের ভোট বেশি পেলে তিনি ইলেক্টোরাল ভোট কম পেয়েছেন।তবে এই ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি নিয়ে নানান বিতর্ক থাকলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এই পদ্ধতিটি থেকে গিয়েছে। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, যাতে ছোট জনসংখ্যার রাজ্যকে বড় জনসংখ্যার রাজ্য কোন রকম ভাবে উপেক্ষা করতে না পারে সেই কারণেই এই পদ্ধতি।
এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। লড়াইয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেট প্রাপ্তি কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিক প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন দেখার কথা এই নির্বাচনে কে জয়ী হয়? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আপনাদের কি মত, কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। উক্ত নির্বাচনে আপনারা কাকে জয় হিসেবে দেখতে চান সেটাও কমেন্ট করে জানাবেন। এছাড়াও এই ধরনের আরও নানান তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদন পেতে SUBSCRIBE করুণ Business Prime News।
জীবন হোক অর্থবহ