Trending
যায় যদি যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান। প্রাণ না গেলেও মাথা গোঁজার ঠাইটা গেছে। রামরাজত্বে কোণঠাসা গরিবরা!
প্রধানমন্ত্রী তাঁর কথা রেখেছেন। এখন রামভক্তিতে মত্ত দেশ। উন্নয়নের ছোঁয়া অযোধ্যাজুড়ে। তৈরি হচ্ছে সব রকম নাগরিক পরিষেবা। বিলাসবহুল হোটেল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থাও। কখনও ১৫ কোটি তো কখনও ৩০ কোটি- আসছে বিপুল বিনিয়োগ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই উন্নয়নের যজ্ঞে গরীবদের জায়গা কোথায়?
রামমন্দির তৈরি করতে এদেশের ১১ কোটি গ্রামবাসী অনুদান দিয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকেরই সংসার চলে সরকারী অনুদানে। এ তো গেল আর্থিক অনুদানের কথা। এবার আসা যাক, ঐ রামমন্দির এবং তার করিডোর তৈরির জন্য যারা তাদের বাড়ি-ঘর হারিয়েছেন, যে সমস্ত চাষিরা তাদের চাষের জমি হারিয়েছেন, আর যে সমস্ত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান-ঘর হারিয়েছেন তাদের কথায়।
গত চার দশক ধরে অযোধ্যায় রামলালাকে দেখতে যাওয়ার রাস্তায় পুজোর নানা সামগ্রী বিক্রি করছেন সেখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অপেক্ষা করেছেন, কবে রামমন্দির তৈরি হবে! তাদের ব্যবসাও ফুলে ফেঁপে উঠবে। এখন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের তৈরি দোকান লিজ নিতে ২৫ লক্ষ টাকা দিতে হচ্ছে। মাসের পর মাস ২৫০০-৩০০০ হাজার টাকা ভাড়া গুণে থাকতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের, যাদের ঘর ভাঙা পড়েছে রামমন্দিরের সৌন্দর্যায়নের জন্য। সবই হচ্ছে, কিন্তু এই গরীব মানুষগুলো তাদের হারান জমি ফিরে পাচ্ছেন না কেন?
অন্যদিকে, ২০২৪-এর নির্বাচনের আগে অযোধ্যার উন্নয়ন আর রামমন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে সরকার এতটাই ব্যস্ত, যে উন্নয়নের যজ্ঞে কোণঠাসা হচ্ছে গরিবিয়ানা, সেটা তার নজরে পড়ছে না। এদিকে গলা সমান ঋণে ডুবে অযোধ্যার কৃষকরা। যারা লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে চাষবাস শুরু করবেন ভেবেছিলেন, কিন্তু তাদের ভাবনায় এবং রুজিরুটিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রামমন্দিরের সৌন্দর্যায়ন। সরকারের ভাবনায় তাদের জায়গা কোথায়?
২০৩১ সাল অবধি অযোধ্যার উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান একেবারে রেডি। প্রায় ৮৫ কোটি টাকার বিনিয়োগে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে কমকরে ২৫০টা প্রোজেক্ট তৈরি হচ্ছে অযোধ্যায়। মানে বিপুল কর্মসংস্থান হবে, এটা আশা করা যায়। কিন্তু স্থানীয় যে ছোট ব্যবসায়ীরা ছিলেন, রামমন্দিরের জন্য যারা আশায় বুক বাঁধছিলেন, তাদের কী হবে? এইমুহূর্তে তারা কার্যত অসহায়। তবে, এত জল গড়িয়ে গেলেও, ম্যাজিকের মতো অযোধ্যার ডেভলপমেন্ট হলেও, স্থানীয় গ্রামবাসীরা কিন্তু তাদের হারান ঘর ফিরে পাননি। স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিপূরণও পাননি। আর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানঘরও পাননি। কবে পাবেন, সেসব কিছুই তারা জানেন না। সরকারের কোন প্রতিক্রিয়াও মেলেনি।
অযোধ্যা এখন একটা ব্র্যান্ড। সেখানে এখন বাণিজ্যে বসতে রাম। সেখানকার ধুলোও এখন সোনার মতই দামি। শুধু গরীবমানুষ, যারা ঋণে ডুবে- তারাই বড্ড সস্তার হয়ে গেছেন। আধপেটা খেয়ে তারা কোনমতে মাথা গোঁজার ঠাই খুজছেন। তবে, রামমন্দির নিয়ে তাদের উৎসাহের শেষ নেই। হাজার হোক, স্বাধীনতা আন্দোলনের থেকেও বড়ো এই আন্দোলনের মীমাংসা হচ্ছে অবশেষে। তবে, একটা বিষয় মনে করিয়ে দেওয়ার- খালি পেটে কিন্তু আর যাই হোক, ধর্মটা হয়না।
দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।