নির্বাচনের আঁচ ঠাণ্ডা হতেই নজর এবার বাজেটে। গত ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কথা ছিল ভোটের পর পেশ করা হবে পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আর ভোট উৎসব মিটতেই এবার বাজেট নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সকলেই। বাজেট কবে? মধ্যবিত্তের জন্য কোন ভাগ থাকছে কী? কোন কোন সেক্টরে ফোকাস রয়েছে সরকারের? কী কী চমক দেখতে চলেছে সাধারণ মানুষ? উঠছে হাজার একটা প্রশ্ন।

শুরু হয়েছে মোদী ৩.০। একেবারে হ্যাট্রিক হাঁকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ফের নরেন্দ্র মোদী। মন্ত্রীদের মন্ত্রকের দায়িত্ব বরাদ্দ করার কাজও শেষ। অর্থমন্ত্রকের ঝাঁপি সামলাচ্ছেন ফের নির্মলা সীতারামন। আর ভোট উৎসব মিটতেই নজরে বাজেট। শীঘ্রই ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে, জানা যাচ্ছে এবারের বাজেট নাকি বেশ চ্যালেঞ্জিং! কী, কেন, কীভাবে? জানব বিস্তারিত।

ব্যাপক চাপানউতোর সামলে মোদীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে এনডিএ সরকার। জল্পনা চলছিল, আগামী ১ জুলাই হয়ত বাজেট পেশ করতে পারেন অর্থমন্ত্রী। তবে, সূত্রের খবর, আগামী ১ জুলাই বাজেট পেশ না হলেও জুলাইয়ের মাঝামাঝি সপ্তাহেই বাজেট পেশ করা হতে পারে। এবং এর জন্য আগামী সপ্তাহ থেকে চলবে ম্যারাথন প্ল্যানিং। লোকসভার দ্বিতীয় অধিবেশনে বাজেট পেশ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। লোকসভার প্রথম অধিবেশন চলবে ৩ জুলাই অবধি। আর দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে তারপরেই। কাজেই ১ জুলাই যে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করা হচ্ছে না, সেটা নিশ্চিত। আর দ্বিতীয় অধিবেশনের সময়সীমা মেনে চললে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়েই রয়েছে বাজেটের সম্ভাবনা।

এবারের বাজেটে মূলত হেলথ, এডুকেশন, এমএসএমই এবং ইনফাস্ট্রাকচার সেক্টরকে ফোকাসে রাখতে চাইছে কেন্দ্র। মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব কমানোর ইস্যুতে এবার বাজেটে থাকছে নতুন চমক। হেলথ সেক্টরে বর্ধিত বাজেট বরাদ্দ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। ওষুধ এবং ভ্যাক্সিনেশনের সুবিধে সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়াও জোর দেওয়া হবে শিক্ষায়। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে থাকা পড়ুয়ারা যাতে ডিজিটাল এডুকেশনের আলো পায়, নজর রাখা হবে সেদিকে। লক্ষ লক্ষ এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট করে যেই সেক্টর, অর্থাৎ রিয়েল এস্টেট সেক্টরকে আরও দৃঢ় করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী গরীব আবাস যোজনার মাধ্যমে যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ উপকৃত হন, সেদিকেও নজর দেওয়া হবে।

নজরে থাকছে ইনফাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট। হাইওয়ে এক্সপানশন থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে এবারের বাজেটে। দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াতে আমূল বদল আনতেই হয়তো চমক থাকতে পারে ইনফাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে। আর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ড্রাইভিং ফোর্স মানে এমএসএমই সেক্টরকে বুস্ট করার মাস্টারপ্ল্যান তো রয়েছেই। তবে অনেকেই মনে করছেন, মোদীর থার্ড টার্মে পেশ করা এই বাজেট বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে তাঁর কাছে। সেটা কেন?

দেখুন, থার্ড টার্মে কিন্তু বিজেপি সরকার গঠিত হয়নি। হয়েছে এনডিএ সরকার। হ্যাঁ সেটা মোদীর নেতৃত্বেই। তবে এবারে কিন্তু জোট সরকার। আর নির্বাচনী ফলাফল থেকে এটুকু একেবারে স্পষ্ট যে ভারতের জনগণের উপর থেকে মোদী ম্যাজিক খানিকটা হলেও ফিকে হতে শুরু করেছে। বারানসী থেকে মোদী জিতলেও কমেছে ভোটের ব্যবধান। অযোধ্যায় রামমন্দিরের মাস্টারপ্ল্যান একেবারে ফ্লপ। হাতছাড়া হয়েছে উত্তরপ্রদেশ। যা কিনা যেকোনো রাজনৈতিক দলের জন্য একটা অ্যাসেট। ওদিকে নীতিশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডু-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে গঠিত হয়েছে জোট সরকার। এমনিতেই ক্যাবিনেট এবং মন্ত্রীত্বের দাবিদারিতে দুজনকেই গলা হাঁকিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে শোনা গিয়েছিল। স্পীকার পদের দাবিদারিত্বে রীতিমত সরব ছিল দুইপক্ষ। পরে যদিও সমঝোতা হয়ে যায়। তবে বাজেটে সেই জোটের প্রভাব কতটা পড়বে তা এখনই স্পষ্ট না হলেও বিষয়টা যে বেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও হতে পারে, তা বোধ হয় আঁচ করা যায়।

যদিও অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব নির্মলার কাঁধেই। কাজেই তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই শেষ কথা। এখন জোট সরকারের সমঝোতাতেই হোক বা নিজের সিদ্ধান্তেই হোক- বাজেটে কী চমক রাখেন নির্মলা সীতারামন, এখন সেটাই দেখার।

দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।