Daily
রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম
ভক্তরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
না, এবারের রথের সঙ্গে এই লাইনগুলো যেন বড়ই বেমানান। জগন্নাথ চলেছেন মাসির বাড়ি আর ভক্তরা দুই ধারে প্রণাম করছেন এমন দৃশ্য অন্তত এইবার আর দেখা যাবেনা রথের আসরে। পুরীতে যেমন শেষ হল ভক্তশূন্য রথযাত্রা তেমনি মায়াপুর থেকে মালদা অথবা মাহেশ থেকে ওপার বাংলায় ঢাকা- উন্মাদনা থাকলেও ভক্তরা আজ উপস্থিত নেই। অতিমারি কেড়ে নিয়েছে সকল জৌলুস।
মায়াপুরে সম্পন্ন হল রথযাত্রা। কিন্তু উধাও ভক্ত। অন্যান্যবার যেমন মায়াপুরের রাজাপুর থেকে তিনটি রথে চড়ে যাত্রা শুরু করেন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। রথে করে পৌঁছে যান চন্দ্রোদয় মন্দিরে। কিন্তু অতিমারিতে পাল্টে গেছে সেই অভ্যাস। তাই এই বছর আর তিনটি নয়, একটি রথে চড়েই তিন ভাইবোন যাত্রা করবেন। আর সেই যাত্রাও সশরীরে দেখতে পারলেন না ভক্তরা। জানালেন ইসকনের জন-সংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস।
পঞ্চতত্ত্ব মন্দিরের সামনে শেষ হবে রথযাত্রা। এক সপ্তাহ সেখানেই থাকবেন তাঁরা। তারপর ২০ জুলাই উল্টো রথের দিন আবার ফিরে আসবেন গদাভবনে।
নবদ্বীপের রথযাত্রা তো এবারে রইল একেবারে আড়ম্বরহীন। ৮০ বছরের বেশি এখানে জগন্নাথ দেবের রথ বের হয়। কিন্তু অতিমারির থাবা এসে পড়ায় গত দু’বছর বন্ধ রইল রথযাত্রা। প্রশাসনের কাছে রথ বেরনোর কথা বলা হলেও পাওয়া যায়নি পারমিশন।
ভক্তরা দূর থেকেই মন্দিরের মধ্যে অধিষ্ঠিত জগন্নাথকে দর্শন করবেন। মাসির বাড়ি যাওয়ার কথা হলেও, জগন্নাথ শুধুই পাল্টাবেন ঘর। নিচের ঘর থেকে তিনি গেলেন ওপরের ঘরে।
মাহেশে আবার জমিয়ে হল রথযাত্রা। এখানে অপেক্ষাকৃত ভিড় দেখা গেলেও অন্যান্যবারের মত ভিড় নেই। তবে খুশির খবর রয়েছে এখানেও।
যেখানে একের পর এক ব্যবসা, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেখানে জগন্নাথের আশীর্বাদ নিয়ে আবারও ফিরবে কর্মসংস্থান।
আর মালদায় তো জগন্নাথের যাত্রা হল একেবারে অভিনব পদ্ধতিতে। সেখানে তিনি রথে নয়। একেবারে এসি গাড়িতে চেপে তিন ভাইবোন মিলে যাত্রা করলেন মাসির বাড়ি। প্রশাসনের তরফ থেকেও রইল কড়া নজরদারি।
সবশেষে যাওয়া যাক ওপার বাংলায়। সেখানেও রয়েছে লকডাউনের গুঁতো। কিন্তু তা বলে কি মাসির বাড়ি যাওয়া হবেনা? নিশ্চয়ই হবে। আর সেভাবেই অতিমারির বিধিনিষেধ মেনে যাত্রা করলেন জগন্নাথ দেব।
অতিমারিতে বদল এসেছে মানুষের অভ্যাসে। কিন্তু অভ্যাস বদলের এই ছবি যে স্বয়ং ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য! আর বিধিনিষেধ মেনে জগন্নাথ দেবের ভাইবোনের সঙ্গে মাসির বাড়ি যাত্রার টুকরো ছবিই ফুটে উঠলো আমাদের ক্যামেরায়।
নদিয়া থেকে রনি চ্যাটার্জী, হুগলি থেকে বিক্রম লাহা, মালদা প্রশান্ত দাস এবং বাংলাদেশ থেকে ঋদি হকের রিপোর্ট