Daily
পরিযায়ী পাখিদের ক্যামেরাবন্দি করতে পাখিপ্রেমীরা ছুটে যান সাঁতরাগাছির ঝিল। রং-বেরংয়ের সেসব পাখি উড়ে উড়ে আসে। শীতের দিনগুলোয় এখানেই আনন্দে কাটায়। পাখিপ্রেমীদের কাছে তাই এই সময়টা অত্যন্ত ক্রুশিয়াল। তাঁরা রেডি থাকেন, ঐ সকল পরিযায়ী পাখিদের অন্তত একবারের জন্য ক্লোজ শট বা লং শটে ধরে রাখতে। তবে আমাদের বাংলায় সাঁতরাগাছির ঝিল ছাড়াও এমন বহু ঝিল রয়েছে, যেখানে পরিযায়ী পাখিদের শীতকালটা আনন্দে কাটাতে দেখা যায়। এবার সেই ছবিটা ধরা পড়ল উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের একটি জলাশয়ে।
তুন্দ্রা বিন গুজ। পাখিটা মূলত মঙ্গোলিয়ার। চট করে এদিক পানে তার আসা হয় না। কিন্তু পাখির ঝাঁকের সঙ্গে কোনভাবে সেও চলে এসেছে এখানে। এখানে মানে রায়গঞ্জের পানিশালা এলাকার দীপরাজার দীঘি নামক একটি জলাশয়ে। ব্যস, আর যায় কোথায়! খবর পেতেই পক্ষীপ্রেমীরা ক্যামেরা নিয়ে দিলেন ছুট। রাজ্যের দূর দূরান্ত থেকে তাঁরা আসতে শুরু করেন। কেউ দক্ষিণ দিনাজপুর তো কেউ সটান কলকাতা থেকে। এমনিতে প্রত্যেক বছর এই জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণ গ্রেল্যাগ প্রজাতির হাঁসের দেখা পাওয়া যায়। গ্রেল্যাগ সাধারণত সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে। রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় শীতকালে ভয়ঙ্কর ঠাণ্ডা নামে। যেকারণেই গ্রেল্যাগ গুজের ঝাঁক উড়ে আসে এদিকে, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য। তবে অন্যান্য বছর গ্রেল্যাগ গুজের দেখা পাওয়া গেলেও, এই বছরে তুন্দ্রা বিন পাখিপ্রেমিদের মধ্যে আলাদা আনন্দ এনে দিয়েছে। কারণ এই হাঁসটির দেখা ভারতে মিলেছে হাতে গোনা কয়েকবার। জানা যাচ্ছে, তুন্দ্রা বিনকে শেষবারের মত দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালে গজলডোবায়। ফের ছ’সাত বছর পর দেখা পাওয়া গেল এই হাঁসটির। সুতরাং পাখিপ্রেমীদের মধ্যে যে তুন্দ্রা বিন নিয়ে আলোড়ন তৈরি হবে, সেটা আর নতুন কী?
এতো এতো পাখিদের মধ্যে এই তুন্দ্রা বিনকে আলাদা করে চেনার উপায় কী? হাঁসটির ঠোঁট কালো এবং ঠোঁটের মাঝে রয়েছে একটা কমলা দাগ। সঙ্গে শরীরটি কালচে রং-এর। মূলত জলাশয়ের উদ্ভিদ খেয়েই এরা বেঁচে থাকে। এই বিরল প্রজাতির পাখিগুলো যাতে নিশ্চিন্তে কয়েকটা দিন এখানে কাটাতে পারে, তার জন্য বন দফতর থেকে ভালোরকম নজরদারি চালানো হয়। পাখিটিকে দেখার জন্য ভিড় জমান গ্রামের মানুষরাও। তাঁরা উচ্ছ্বসিত তুন্দ্রা বিনের আগমন বার্তা পেয়ে।
বহু বছর ধরেই জলাশয়ে বিপুল পরিমাণ পাখির দেখা মিলেছে। তবে এবার ক্যামেরার সব লেন্স একাই নিজের দিকে টেনে নিল তুন্দ্রা বিন। এখন গ্রামবাসীরা চাইছেন, জলাশয়টিতে যেভাবে বছর বছর পাখিদের আনাগোনা বাড়ে, তাতে এই সুবিশাল জলাশয়টিকে যদি সরকারিভাবে বন দফতরের উদ্যোগ নিয়ে পাখিরালয় হিসেবে তৈরি করা হয়, তাহলে হয়ত পাখিরা আরও নিশ্চিন্তে এখানে নিজের ঠাঁই বদল করে চলে আসতে পারে। একইসঙ্গে পাখিদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হলে, এমনই বিরল প্রজাতির পাখি আসার সম্ভাবনা বাড়বে বই কমবে না।
অনুপ জয়সোয়াল
উত্তর দিনাজপুর