Story
চাল পুরনো হলে যেমন ভাতে বাড়ে। তেমনি গাছের চারার যত্ন নিলে সেও একদিন মাথা তুলে দাঁড়ায়। সেই গাছ শুধু পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণই করে না। বরং বহু মানুষকে আয়ের দিশাও দেখায়। আর ঠিক এই উদ্দ্যেশ্যেই আর্থিকভাবে একেবারে পিছিয়ে পড়া আদিবাসী মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হল বিভিন্ন ধরণের চারা গাছ। যা আজ থেকে দশ, পনেরো বছর পরে আদিবাসী মানুষগুলোর অর্থনৈতিক ভিত অনেকটাই মজবুত করবে।
সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য শামুকতলা, কোহিনূর, মাঝেরডাবরী এবং তুরতুরী অঞ্চলের ৩০০ আদিবাসী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হল গোলমরিচ, মেহগনি, লিচু, কাগজী লেবু, বা চিকরাশির মত বিভিন্ন গাছের চারা। আর এই গোটা কর্মকাণ্ড যার নিরলস প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব হত না, তিনি সান্তালপুর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ডিরেক্টর সদানন্দ চক্রবর্তী। যিনি নিজের গোটা জীবনটাই উৎসর্গ করে দিয়েছেন আদিবাসী মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলার ক্ষেত্রে। আর তাঁকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচবিহার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচবিহার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের ট্রাইবাল সাব প্ল্যানের অধীন আদিবাসীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে চলেছে। তার মধ্যে যেমন গুরুত্বপূর্ণ পশুপালন, তেমনি গাছ।
পশুপালনের দরুন আর্থিক ভিত আদিবাসীদের মধ্যে কিভাবে আরো মজবুত করা যায় সেদিকেও খেয়াল রেখেছে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। সেই নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিও নেওয়া হয়। তার মধ্যে যেমন রয়েছে মধু চাষ, তেমনি রয়েছে হাঁস, মুরগি ও ছাগল প্রতিপালন।
প্রান্তিক আদিবাসী মানুষগুলির না আছে মজবুত আর্থিক ভবিষ্যৎ, না আছে অর্থনীতির স্পষ্ট মানচিত্র। ব্যাঙ্কের সঙ্গেও তাঁরা তেমন একটা সড়গড় নন। ফলে আজকের চারা গাছ আগামীতে হয়ে উঠবে তাঁদের মহামূল্যবান পুঁজি। ফিক্সড ডিপোজিটের মতন এখন লক্ষ্য এই গাছগুলিকে বড় করে তোলা।
একই কথা শোনা গেল আরেক উপভোক্তা ইমানুয়েল টুডুর গলায়। তিনি তো সরাসরি বলেই দিলেন আজ থেকে ১৫-২০ বছর পর বাড়ির ছোট ছেলে মেয়ে গুলো যখন বড় হবে তখন তাদের পড়াশোনা বা বিয়ে -শাদীর সময় এই গাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থই কাজে লেগে যাবে।
প্রকৃতির একেবারে কাছাকাছি থাকেন এই আদিবাসী মানুষরা। আর্থিক উন্নয়নের ঘোরদৌড়ে এরা থাকেন পিছিয়ে। ফলে নিঃস্ব বা বঞ্চিত থাকাটা যেমন অস্বাভাবিক নয় তেমন কাম্যও নয়। তাই আদিবাসী মানুষের স্বার্থে আপাতত নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন সান্তালপুর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ডিরেক্টর সদানন্দ চক্রবর্তী। আর তাঁকে সাহায্য করছে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচবিহার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। আজকের চারা আগামীতে বনস্পতি হয়ে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই উন্নত করবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।
অভিজিৎ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার