Trending
বাপ-দাদার চৌদ্দপুরুষের ব্যবসায় গত বছর থেকেই শুরু হয়েছিল জৌলুসের খামতি। এবার তো বন্ধ হবার উপক্রম হল বাংলার ঐতিহ্যবাহী শোলা ব্যবসা।
করোনা থাবা বসিয়েছে বাংলার সামাজিক অনুষ্ঠানে। ক্রমশ ছোট হতে হতে বাংলার সামাজিক অনুষ্ঠানগুলি আজ সম্পন্ন হচ্ছে খুবই ছোট্ট পরিসরে। বিয়ে, পৈতে থেকে পূজা-অর্চনা। সবেতেই জড়িয়ে থাকেন শোলা শিল্পীরা। সেই শোলাশিল্পে এখন চলছে রাহুর দশা।
হাওড়ার মুন্সিরহাটের রামেশ্বরপুরের মালাকার গ্রাম। এখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করেন প্রায় ৪০ ঘর শোলা শিল্পী। যারা বছরভর বিভিন্ন দেবদেবীর অঙ্গসজ্জা থেকে শুরু করে বিয়ে, পৈতে সহ শোলার টোপর বানিয়ে দিন গুজরান করেন। গত বছর থেকেই বরাত কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু এ বছর এসে সেই বরাত ঠেকেছে তলানিতে। এখানকার শিল্পীরা ভাবতে শুরু করেছেন হয়তো এমন দিন আসছে, ছেড়ে দিতে হবে বাপ-দাদার আমলের এই ব্যবসাকে।
কেউ করছেন প্রতিমার অঙ্গসজ্জা। কেউ বানাচ্ছেন চাঁদমালা। কেউবা ডাকের সাজ। প্রতিবছর ব্যস্ততা থাকলেও এই বছর ব্যস্ততার লেশমাত্র নেই এখানকার মালাকার গ্রামে।
প্রতিবছর এই গ্রামের সোনার শিল্পীদের রীতিমতো লোকলস্কর ভাড়া করতে হতো কাজ তোলবার জন্য। এবছর সম্পূর্ণ অন্য চিত্র হাওড়া জেলার বিখ্যাত গ্রামে। সরকার যদিও পুজো কমিটিগুলোকে সাহায্য করেছে কিন্তু সাহায্য পাননি এখানকার শোলাশিল্পীরা। পুজো কমিটিগুলি ঠাকুরের বরাদ্দ কমানোয় বরাত কমেছে শিল্পীদের ঘরে। একরাশ হতাশা, ক্লান্তি। আর দেনায় জর্জরিত গোটা শিল্পটাই। বাড়ির মহিলাদের নিয়ে চলছে এখন বরাত ডেলিভারি দেওয়ার কাজ।
মহামারী আর লকডাউন গ্রাস করেছে জীবনের অধিকাংশ দিকগুলোকে। তার মধ্যে যেটুকু বেঁচে-বর্তে রয়েছে সেগুলি আদৌ আর বেঁচে থাকবে কিনা তা নিয়েই তৈরি হয়েছে প্রশ্নচিহ্ন। এখন শিল্পীদের শিল্পকর্ম বাঁচাতে সরকার কী পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার।
বিক্রম লাহা, হাওড়া