Story
আজ রাজাও নেই, রাজ্যও নেই। নেই রাজ্যপাটও। বালুচর গ্রাম আজ জলের তলায়। কিন্তু বালুচরী শিল্প বেঁচে আছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের কয়েকশো তাঁতিদের মধ্যে দিয়ে। ধরে রেখেছেন ঐতিহ্যের পরম্পরাও। অতিমারি গ্রাস করল এই ঐতিহ্যবাহী বাংলার শিল্পকেও।
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের খ্যাতি টেরাকোটা মন্দিরের জন্য। প্রতিবছরই দেশি, বিদেশি পর্যটকদের পা পড়ে বিষ্ণুপুরে। কিন্তু এখানেই যে একেবারে আড়ালে বছরের পর বছর ধরে সাড়ে চার হাজার তাঁত শিল্পীর হাত দিয়ে তৈরি হচ্ছে বালুচরী শাড়ি, তার কথা ক’জনই বা মনে রেখেছেন?
অভাব ছিল না কাঁচামালের। অভাব ছিল না পারিশ্রমিকের। তাঁতিদের মুখে লেগে থাকত চওড়া হাসি। কিন্তু সব যেন ওলটপালট হয়ে গেল গত বছর থেকেই। অনিশ্চয়তার গভীর সংকট এসে বসল তাঁতিদের এই বুনন যন্ত্রে।
কমেছে চাহিদা। কমেছে বিক্রি। সরকার থেকেও তাঁদের দরজায় কেউ কড়া নাড়েন নি। সরকারি সাহায্য বলতে শুধু দুয়ারে রেশন।
শুধু তাঁতিরাই নন। একটি শাড়ি তৈরি করার জন্য তাঁতিদের সঙ্গে গোটা পরিবার যুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বিক্রি কমে আসায় আজ তাঁতিদের মজুরিও কমে গেছে অনেকটাই। ফলে সংসার চালানোও যেন প্রতিদিনই কষ্টকর হয়ে উঠছে। একেবারে নিরুপায় হয়ে তাঁরা তাকিয়ে রয়েছেন সরকারের দিকেই।
শোনা যায়, কয়েক শো বছরের প্রাচীন এই বিষ্ণুপুরের রেশম শিল্প। আজ যাকে আমরা বালুচরী শাড়ি বলে জানি তা মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রাম থেকে তৈরি হত। কালের প্রভাবে নদীগর্ভে সেই বালুচর গ্রাম। কিন্তু শিল্প এখনও বেঁচে আছে। বালুচরী শাড়ির প্রধান কেন্দ্র আজ বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর। যেখানে পড়েছে অতিমারির ছায়া। এখন প্রশ্ন, যেভাবে সময়ের সাথে বালুচর গ্রামটা বিলীন হয়ে গেছে, সেভাবেই প্রশাসনিক উদাসীনতায় এই তাঁত শিল্পও বিলীন হয়ে যাবে নাতো? সেই আতঙ্ক সঙ্গে নিয়েই বিষ্ণুপুরে তাঁত শিল্পীরা আজও বুনে চলেছেন বালুচরী শাড়ি।
আব্দুল হাই, বাঁকুড়া