Trending
বর্তমান কাজের বাজারের দিকে যদি লক্ষ্য রাখতে হয়, তাহলে বলতে হবে আজ গোটা বিশ্ব নিজেই একটি বিশাল বড় কাজের বাজারে পরিণত হয়েছে। দক্ষতা থাকলে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়েও বিদেশ বিভূঁই-এর মাটিতে গিয়ে দারুণ ভাবে কাজ করা সম্ভব। তারপর সেই টাকা নিজের দেশে পাঠানো সম্ভব। সত্যি বলতে কি, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স একটা দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য দারুণভাবে কাজ করে চলেছে। সেই লিস্টে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছি আমরা। গোটা বিশ্বের মধ্যে ভারত সরকার রেমিট্যান্স হিসেবে আয় করেছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আজ আমরা ভারত নিয়ে কথা বলব না। বরং ভারত লাগোয়া আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলব। আজকের প্রতিবেদনে বলব, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাংলাদেশের কত? আর বাংলাদেশের মানুষরা বিদেশের কোন কোন জায়গায় সবচেয়ে বেশি কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের কথা বলতে যদি হয়, তাহলে বলতেই হবে যে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশীদের কাজের সুযোগ খুব একটা কম নয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বছর বছর প্রচুর বাংলাদেশীরা কর্মসংস্থানের আশায় পাড়ি দেন। ভালো চাকরি পাবার পর সেই টাকা পাঠান বাংলাদেশে। রেমিট্যান্স হিসেবে সেই টাকা বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করে। সৌদি আরব, ব্রিটেন, মালয়শিয়া, মিডল ইস্ট, ইতালি, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সাউথ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুরের মতন এমন বহু দেশ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশীদের কাজের সুযোগ রয়েছে। তাঁরা ছড়িয়ে রয়েছেন বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশে। কিন্তু আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, এদের মধ্যে কোন দেশে বাংলাদেশীদের কাজের সুযোগ রয়েছে? তাহলে প্রথম পাঁচটি দেশের কথা তো বলতেই হবে। যেখানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে আজ বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবে নিজের দেশের অর্থনীতিকে খানিকটা হলেও সাপোর্ট করতে পারছে। কী কী সেই দেশ?
৫। কাতারঃ
২০০৬ সাল পর্যন্ত কাতারের বাজারে বাংলাদেশীদের তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ছাপ ছিল না। কিন্তু কাতার ধীরে ধীরে বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রফতানি করার দেশ হিসেবে পৌঁছে গিয়েছে প্রথম পাঁচে। কাতারে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ। কিন্তু সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল বহু আগে। আর সেই কারণে বাংলাদেশীদের চাহিদা ঐ দেশে দারুণভাবে বেড়েছে, কারণ প্রচুর পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। কাতারে প্রায় ৮ লক্ষ ১১ হাজার বাংলাদেশী নিশ্চিন্তে কাজ করছেন।
৪। জর্ডানঃ
এই দেশেও বাংলাদেশীদের জন্য কাজের বাজার বেশ ভালোরকম তৈরি হয়েছে। একটি তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে জর্ডানের উদ্দ্যেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন ৩ হাজারের বেশি কর্মী। সেখানে ২০১৯ সালে ২০ হাজারের বেশি কর্মী পাড়ি দেন জর্ডানে। জর্ডান এমনই একটি দেশ, যে দেশে ভূ-প্রকৃতি মূলত মরুভূমির মত ঊষর। এই দেশে মূলত পোশাক, নির্মাণ খাতে সবথেকে বেশি বাংলাদেশী শ্রমিকদের নেওয়া হয়।
৩। সিঙ্গাপুরঃ
২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দ্যেশ্যে যে সকল কর্মীরা বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন, তার মধ্যে সিঙ্গাপুর উল্লেখযোগ্য। ঐ বছরে দেশটিতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বাংলাদেশী কর্মী পাড়ি দিয়েছিলেন। সিঙ্গাপুরে সাধারণত গার্ডেনিং, টাইলস, পাইপ ফিটিং এবং মেকানিক্যাল কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রতি বছর বহু সংখ্যক বাংলাদেশের নাগরিক কাজের খোঁজে পাড়ি দেন এই দেশে।
২। ওমানঃ
বাংলাদেশ থেকে যত সংখ্যক কর্মী বিদেশে যান, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওমান। এই দেশে যত সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক রয়েছেন তাঁদের সিংহভাগ হলেন বাংলাদেশী। একটি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এই দেশে প্রায় ৮ লক্ষ বাংলাদেশী রয়েছেন। এই দেশে বাংলাদেশীদের সবথেকে বেশি কাজের সুযোগ রয়েছে নির্মাণ খাত এবং ওয়ার্কশপ খাতে। কিন্তু একটা সমস্যা হচ্ছে ফ্রি ভিসার। আসলে ওমানে বাংলাদেশীদের একটা বড় অংশ ফ্রি ভিসায় গেছে। যে কারণে কোন মালিকের মাধ্যমে না-যাবার ফলে সেই দেশে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা নাকি ক্রমশই বাড়ছে।
১। সৌদি আরবঃ
সৌদি আরবে বাংলাদেশীদের কাজের সুযোগ থাকে সবচেয়ে বেশি। হাজার হাজার বাংলাদেশের নাগরিক কর্মভাগ্যকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রতি বছর পাড়ি দেন এই দেশে। বিবিসি-র একটি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২০ সালে সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছিলেন ১ লক্ষ ৩৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশী নাগরিক। আর সেই সংখ্যাটা ২০১৯ সালে আরও অনেকটা বেশি ছিল। একটি তথ্য বলছে, ঐ বছর সৌদি আরবে বাংলাদেশের নাগরিকদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ লক্ষ মতন। মূলত এই দেশে কনস্ট্রাকশনের কাজে সবচেয়ে বেশি কর্মীর প্রয়োজন পড়ে। আর যে কারণে বাংলাদেশী নাগরিকদের কাজের বাজার সবসময় এখানে অনেকটাই বেশি থাকে।
এবার আসা যাক আরেকটি প্রসঙ্গ। সেটা বলেই শেষ করব আজকের প্রতিবেদন। একটি সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে যে ব্যপক পরিমাণ কর্মী প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করছেন, তাদের অধিকাংশই যাচ্ছেন নার্স, ক্যাটারিং বা কেয়ারগিভারের ভিসায়। এছাড়া প্রচুর অদক্ষ কর্মীরা কাজ করতে যাচ্ছেন ছোট ছোট খাতে। তার মধ্যে রেস্তোরাঁ, নির্মাণ খাত বা পোশাক খাত রয়েছে। এই সকল খাতে বাংলাদেশী নাগরিকদের কাজের বাজার সবচেয়ে বেশি থাকছে। সত্যি বলতে কি একটা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বের ১৭২টি দেশে বাংলাদেশের মানুষগুলো কর্মভাগ্য সুনিশ্চিত করতে পাড়ি দেন। এবং এভাবেই বাংলাদেশের প্রবাসী নাগরিকদের রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু একটাই বিষয়। আমাদের দেশ ভারত থেকেও প্রচুর মানুষ বিদেশে কাজের জন্য পাড়ি দেন। রেমিট্যান্স প্রবাহের দিক থেকে ভারত রয়েছে এখন এক নম্বরে। ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী ভারতীয়দের থেকে আয় করেছে ভারত সরকার। কিন্তু আমাদের দেশে শুধু ছোট খাত নয়। আইটি থেকে শুরু করে বিশ্বের সকল বড় বড় খাতে আজ ভারতীয় দক্ষ কর্মীরা নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে পারছে। একইসঙ্গে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে দিনদিন নিজের কর্মদক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলেছে। এবার সময় এসেছে বাংলাদেশের মানুষদের। তারাও নিজের দেশের মানুষদের প্রত্যেকটা খাতে দক্ষ করে তুলুক। তবেই তো বিদেশে গিয়ে শুধু ছোট খাত নয়। প্রত্যেকটা বড় খাতে ছড়ি ঘোরাতে পারবে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক। এর ফলে সেই দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে আরও বেশি।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ