Daily
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লার রাজ্য সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই বিএসএফ ইস্যুটিকে সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে দুই কক্ষেই তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য এক ঢিলে দুই পাখি মারা। একদিকে যেমন সর্বভারতীয় স্তরে সংসদের উভয় কক্ষে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর মোদি সরকারের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরা। অন্যদিকে, বিএসএফ ইস্যুতে সংসদে মোদি বিরোধী দলগুলির মধ্যে আরো একবার ফ্লোর কো-অর্ডিনেশন করা।
গতকাল নবান্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা মূলত রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের কাছে সীমান্ত পরিকাঠামো উন্নয়ন ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের মনোভাব সবিস্তারে আলোচনা করেন। কেন্দ্র-রাজ্য ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই রাজ্যের সাতটি জায়গায় ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট তৈরি করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। যা স্থলবন্দরের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
উৎসবের মরসুমে রাজ্যের সঙ্গে কোনো রকম আলাপ আলোচনা ছাড়াই যেভাবে কেন্দ্র এককভাবে পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও পাঞ্জাবে বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে তা রীতিমতো যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী বলেই মনে করে তৃণমূল কংগ্রেস। বিষয়টিকে লোকসভায় তুলে ধরতে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছেন তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। একপ্রস্থ আলোচনাও সারেন ফারুক আব্দুল্লাহ সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। রাজ্যের ২৩ টি জেলার মধ্যে ১০ টি জেলার নিয়ন্ত্রণ সরাসরি চলে যাবে বাহিনীর হাতে। ৪২ টি লোকসভার মধ্যে একুশটি লোকসভার আসন নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এখানেই আপত্তি তৃণমূল কংগ্রেসের। তৃণমূলের অভিযোগ, রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করতে না পেরে বিজেপি ঘুরপথে রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, বিএসএফ হল এমন একটা সর্বভারতীয় ইস্যু যা কোনমতেই হাতছাড়া করতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাস হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গও চলতি মাসেই বিধানসভায় এর বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করাতে চলেছে। ২০২৪ এর দিকে তাকিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিষয়টি তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্যমত্য তুলে ধরতে চাইছে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে এই বিরোধী জোটের প্রধান মুখ হতে চাইছে তৃণমূল।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যগুলি সরব হয়েছিল রাজ্যের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করার জন্য। সেভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কোন সার্বিক বিরোধী জোট গড়ে না উঠলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বভারতীয় পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে আরো একবার বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর কাজ শুরু করে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। ইস্যু এবার অবশ্যই বিএসএফ।
ব্যুরো রিপোর্ট, বিজনেস প্রাইম নিউজ