Trending
সর্বনাশা টাইটানিক থেকে মাত্র হাজার ফুট দূরে মিলল নিখোঁজ সাবমেরিনের হদিশ
অতিরিক্ত জলের চাপ সহ্য করতে না পেরে বিস্ফোরণ?
১২ হাজার ফুট গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সাবমেরিন ১৩ হাজার ফুট দূরত্ব পেরল কীভাবে?
মাঝে পেরিয়ে গেছে ১০০ বছরেরও বেশি সময়। আটলান্টিকের অশুভ হাতছানিতে তলিয়ে গেছে টাইটানিক। তবু টাইটানিক নিয়ে এক বিন্দুও কৌতূহল কমেনি মানুষের মধ্যে। গ্যাঁটের করি খরচ করে তাই একবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে ছুটে যান তারা। আর ঠিক এই কৌতূহলের কারণেই টাইটানিককে ঘিরে জাঁকিয়ে বসেছে পর্যটন ব্যবসা। কিন্তু এবার সেই টাইটানিক দর্শন ঘিরেই তৈরি হল যত বিপত্তি। বারবার একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ঠিক কী হল?
ওশিয়ান গেট এক্সপেডিশন নামের একটি সংস্থার তরফে আটলান্টিকের নীচে পর্যটন ব্যবসা চালানো হয়। রবিবার পর্যটকদের নিয়ে আটলান্টিকে নেমেছিল তাদের একটি ডুবোজাহাজ। নাম, ‘টাইটান সাবমার্সিবল’। পর্যবেক্ষণ বলছে, সমুদ্রতল থকে টাইটানিক অবধি পৌঁছতে সময় লাগার কথা ৮ ঘণ্টা। কিন্তু, যাত্রা শুরুর মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন! ডুবোজাহাজে ছিলেন ব্রিটেনের ধনকুবের হ্যামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানের ধনকুবের শাহজাদা দাউদ, তাঁর ছেলে সুলেমান, প্রাক্তন ফরাসি ডুবুরি পল হেনরি নারজিওলেত এবং ওশিয়ানগেট সংস্থার সিইও স্টকটন রাশ। পার হেড খরচ কত জানেন? ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি। তথ্য বলছে, পাঁচ সওয়ারিকে নিয়ে একটানা ৯৬ ঘণ্টা রওনা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ডুবজাহাজটির। তাহলে? যান্ত্রিক গোলযোগ? নাকি সাবমেরিন তৈরিতেই লুকিয়ে রয়েছে গলদ?
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, যান্ত্রিক গোলযোগ নয়। সমস্যা তৈরি হয়েছে জলের চাপ নিয়ে। তারা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অস্বাভাবিক গভীরে চলে যাওয়ার কারণেই বিপদে পড়ে সাবমেরিনটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩ হাজার ফুট গভীরে রয়েছে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। আর সাবমেরিনটি খুঁজে পাওয়া যায় জাহাজ থেকে মাত্র হাজার কিলোমিটার দূরত্বে। কীভাবে পৌঁছল এখানে সাবমেরিনটি? এক্সপার্টদের মত শুনে বললে বলব, সমুদ্রপৃষ্ঠের এই অংশের নাম মিডনাইট জোন। যেখানে কোনভাবেই সূর্যের আলোর দেখা মেলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে অভিশপ্ত টাইটানিক দীর্ঘদিন জলের তলায় থেকে ক্ষয় হচ্ছে। পরিত্যক্ত হচ্ছে আশপাশের জল। জল ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার কারণেই হয়তো দিশা পায়নি সাবমেরিন চালক। তাই দিকভ্রান্ত ডুবজাহাজ। অতলান্তিক খুঁড়ে তন্নতন্ন করে খুঁজে পাওয়া গেল পাঁচ পাঁচটা মৃতদেহ। মৃত্যুর কারণ, সর্বনাশা বিস্ফোরণ।
বিজ্ঞান বলছে, আউটসাইড এবং ইনসাইড প্রেশার ব্যালেন্স না হলে বিস্ফোরণ ঘটে। প্রতি ৩৩ ফুট গভীরে গেলে ১ অ্যাটমস্ফেরিক প্রেসার বাড়তে থাকে সমুদ্রের তলায়। আর ১২ হাজার ফুট গভীর মানে? আন্দাজ করতে পারছেন? একটা ডুবজাহাজের উপর ১১০ টা বয়িং এবং ৭৫০ তা জেট প্লেন স্তরে স্তরে সাজালে যতটা প্রেসার অনুভব হয়, তার চেয়েও বেশি।
এখনও পর্যন্ত সমুদ্রের সবথেকে গভীরে পৌঁছনো গেছিল ২০১২ সালে। প্রশান্ত মহাসগরের সেই মারিয়ানা খাদে প্রায় ৩০ হাজার ফিট অবধি পৌঁছেছিল সেই সাবমেরিন। আর সেখানে আটলান্টিকে টাইটেনিক মাত্র ১৩ হাজার ফুট গভীরে আছে। তাহলে ব্যর্থতা কেন? কারণ সাবমেরিনের ডিজাইন। জেমস ক্যামেরনের এই সাবমেরিনটি ছিল ভার্টিকাল। যেখানে প্রেশারটা এক জায়গাতেই কেন্দ্রীভূত। আর হরাইজন্টাল হলে প্রেসারটা ডিস্ট্রিবিউটেড হয়ে যায় পুরো সারফেস জুড়ে।
আরও একটা বিষয় নজরে আসার মতো। সেটা হচ্ছে ম্যাটেরিয়াল। জেনারেলি জলের গভীরতা কম হলে স্টিল ব্যবহার করা হয়। আর বেশি গভীর জলে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় টাইটানিয়াম। কিন্তু টাইটান সাবমেরিন বানানর ক্ষেত্রে মিশ্র উপকরণ ব্যবহার করা হয়। টাইটানিয়াম আর কম্পজিট কার্বন ফাইবার। টাইটানিয়াম এমন একটা ধাতু যার ইলাস্টিসিটি অনেক বেশি। অন্যদিকে কার্বন ফাইবারের ইলাস্টিক প্রপার্টি নেই বললেই চলে। সুতরাং স্ট্রেচ করার কোন প্রশ্নই আসছে না। কাজেই এই দুটো উপকরণ দিয়ে কেন সাবমেরিনটি তৈরি করা হল, সেটা নিয়ে একটা প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে। (HYDRAULIC PRESS VS TITANIUM AND CARBON FIBER PIPE ভিডিও দেখান হবে)
তবে এতকিছুর পরেও মানুষের মৃত্যু বা জাহাজডুবির মত এমন মর্মান্তিক ঘটনা কখনও অভিপ্রেত নয়। ওশিয়ান গেট সংস্থার বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৮ সালেও আঙ্গুল উঠেছিল। সংস্থার আগের একটা মিশনে। তারপরেও সংস্থার দায়িত্ববোধ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। আপনাদের কি মনে হয়? জানান আমাদের কমেন্টবক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।