Trending
টাইটানিক দেখতে গিয়ে ভরাডুবি টাইটানের। আটলান্টিকের গভীরে হয়ত এখন পড়ে রয়েছে তার ছিন্নভিন্ন অংশ। মৃত্যু হয়েছে সাবমেরিনে থাকা প্রত্যেকের। কেন টাইটানের এমন ভরাডুবি হল এই নিয়ে আমরা একটা বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছি। প্রয়োজনে আই বটনে ক্লিক করে সেটা দেখে নিতে পারেন। তবে আজ আমরা কথা বলব টাইটানের নিজস্ব কিছু ফিচার নিয়ে। আরেকটু সংক্ষিপ্ত আকারে। মানে টাইটানের ভেতরে কতটা জায়গা ছিল, যদি টাইটান না ডুবে যেত তাহলে আদৌ কি সেখানে পাঁচজন আরাম করে বসে টাইটানিক দেখতে পারতেন? যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে কতটা নজর ছিল কর্তৃপক্ষের? এই সব নিয়েই ছোট্ট করে একটা আলোচনা আমরা সেরে নেব। চলুন শুরু করা যাক আজকের প্রতিবেদন।
টাইটানে চরে টাইটানিক দেখার ইচ্ছে যদি হয়, তাহলে গ্যাঁটের কড়ি ভালোই খসাতে হবে। ভারতীয় মুদ্রায় যাত্রী পিছু খরচ প্রায় ২ কোটি টাকা। অভিযাত্রী ছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানের ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ এবং তাঁর পুত্র সুলেমান দাউদ, টাইটানিক বিশেষজ্ঞ পল হেনরি নারজিওলেট এবং পাইলট কেবিনে ওশানগেটের সিইও স্টকটন রাশ। এদের নিয়েই আটলান্টিকের গভীরে ডুব দিয়েছিল টাইটান। কিন্তু মৃত্যু এভাবে অপেক্ষা করছে সেটা কি আর কেউ জানতে পেরেছিলেন? হিমশৈলে ধাক্কা খাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে আটলান্টিকের ১২ হাজার ফুট গভীরে। বলা হয় টাইটান ডুব দেবার ক্ষমতা রাখে ১৩ হাজার ফুট পর্যন্ত। কিন্তু অত গভীরে জলের চাপ সহ্য করতে পারবে কিনা সেটা কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়নি। এখন আর হাজার কথা বলেও ফিরিয়ে আনা যাবে না টাইটানকে, টাইটানের পাঁচ অভিযাত্রীর জীবন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, টাইটানে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য কেমন ছিল?
টাইটান অত্যাধুনিক একটি সাবমেরিন। ওজন ছিল ২০ হাজার পাউন্ড বা ৯ হাজার কিলোগ্রাম মতন। যা সি-ফ্লোরে পৌঁছনোর পর নিজেকে ঠিক ভাসিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখত বলে মনে করা হয়েছিল। টাইটানে যেখানে যাত্রীরা বসেছিলেন, সেটা তৈরি করা হয়েছিল কার্বন ফাইবার এবং টাইটেনিয়াম দিয়ে। আয়তনের দিক থেকে যদি বলতেই হয়, তাহলে বলতে হবে টাইটান একটি মিনিভ্যানের থেকে কোন অংশে কম ছিল না। তারপরেও প্যাসেঞ্জারদের জন্য খুব হাত-পা ছড়িয়ে বসার জায়গা তৈরি করতে পারেনি। অভিযাত্রীদের এই টিউবের মতন স্ট্রাকচারে তৈরি টাইটানের ফ্ল্যাট ফ্লোরে বসতে দেওয়া হয়েছিল। ঠেসান দিয়ে বসতে হত সাবমেরিনের কার্ভ শেপ দেয়ালে। ছিল না ন্যূনতম হেডস্পেস, ছিল না চেয়ার। খুব বেশি নড়াচড়া করার সুযোগ কোন অভিযাত্রীকেই দেওয়া হয়নি। কারণ একটাই জায়গার অভাব। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য টাইটানকে বাইরে থেকে বোল্ট দিয়ে ভালোরকম সিল করা হয়েছিল। সুযোগ সুবিধে বলতে স্যান্ডউইচ, জল এবং টয়লেটের নামমাত্র একটা ব্যবস্থা ছিল। একেই অক্সিজেনের অভাব, তারপর ভেতরে এমন আঁটসাঁট ব্যবস্থা, জায়গার অভাব। সবমিলিয়ে অন্ধকার যে বাইরের মতন ভেতরেও চেপে বসছিল, সেটা হয়ত প্রত্যেকেই বুঝতে পেরেছিলেন।
টাইটান যেভাবে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টাইটানিক দেখাতে নিয়ে গেছিল, সেটা কার্যত হতাশ করে দেবার মতনই। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ হোক আর যাই হোক এতো এতো টাকা খরচ করে তাঁরা যখন নিজেদের সিট বুক করলেন, তখন কি যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাননি? টাইটান কর্তৃপক্ষ-ই বা কেন অবহেলা করেছিল? সেই অবহেলার শিকার হতে হল ওশান গেটের সিইও-কেও। প্রচুর প্রশ্ন, প্রচুর তর্ক-বিতর্ক। কিন্তু ১১২ বছর আগে ডুবে যাওয়া জাহাজে যে সকল অভিযাত্রী ছিলেন, আজ সেই টাইটানিক দেখতে গিয়ে টাইটানের অভিযাত্রীদের খানিক সেই মৃত্যুর অভিজ্ঞতাই তাঁদের করতে হল। চারিদিকে শুধু জল আর জল। গভীর আটলান্টিকে ডুব দেওয়া টাইটানের অভিযাত্রীদের সেই মুহূর্তের অভিজ্ঞতা ডাঙায় থাকা যে-কোন মানুষের হৃৎপিণ্ড কাঁপিয়ে দেবেই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ