Trending
১৬ জুলাই, ১৯৫০। রিও ডি জেনেরিও, ব্রাজিল। মারাকানা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি ব্রাজিল উরুগুয়ে। বিধ্বংসী ৯০ মিনিট। আড়াই লাখ দর্শকের নিস্তব্ধতা। ঘটল ফুটবলের ঐতিহাসিক বিপর্যয়। ভবিষ্যতে ফুটবলের ইতিহাসে যা মারাক্যানাজো ম্যাচ হিসেবে পরিচিত হয়। যে বিপর্যয়ে, ব্রাজিল, সেবারের হোস্ট কান্ট্রি এতটাই বিধ্বস্ত হয় যে, খেলা শেষে তারা চরমতম সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হল জার্সি বদলের। ঐ ম্যাচের পরই সাদা-নীল জার্সিতে ফুটবল জার্নি শেষ হল ব্রাজিলের। নতুন জার্সি ডিজাইনের দায়িত্ব পড়ল বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান স্পোর্টস গুড ম্যানুফ্যাকচার ব্র্যান্ড অ্যাথলেটার কাঁধে। দীর্ঘদিনের রিসার্চ শেষে সকলের সামনে এল ব্রাজিলের ব্র্যান্ড নিউ হলুদ সবুজ শার্ট আর নীল সাদা শর্টসের কিংবদন্তী জার্সি। অদ্ভুতভাবে সেই জার্সিতে খেলে পাঁচ পাঁচটা বিশ্বকাপ ঘরে আনল লাতিন আমেরিকার এই দেশটি। কী ভাবছেন? আজ হঠাৎ এই জার্সির কথা কেন বলছি? কারণ, এই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে জাতীয় দলের জার্সি স্পন্সরশিপ একটা বড়সড় ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে চলে মারাত্মকরকমের প্রতিযোগিতা। কীভাবে? জানাবো আজকের ভিডিওতে।
আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স- মাঠে লড়াই চলছে ‘কাপ অফ লাইফ’-কে ঘরে তোলার। আর ওদিকে মাঠের বাইরে নীরব সংঘর্ষ চলছে অ্যাডিডাস, নাইকি, পুমা, রিবকের মধ্যে। এখন আপনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন যে, ব্র্যান্ডের মধ্যে আবার কীসের কম্পিটিশন? দেখুন, শার্টের ডানদিকে, শর্টসের বাঁ দিকে কিংবা সক্সের মধ্যে ব্র্যান্ডের লোগো দেখানোটাই তো আর উদ্দেশ্য হতে পারে না। এর পিছনে রয়েছে অন্য খেলা। শেয়ার প্রাইসের খেলা। বিশ্বকাপের কোন ম্যাচে কোন দল জিতল বা কোন দল টুর্নামেন্ট থেকে এলিমিনেট হয়ে গেল, এই সবটার উপর ডিপেন্ড করে জার্সি ব্র্যান্ডের শেয়ার প্রাইস। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত জার্সিতে স্পন্সরড ব্র্যান্ডের লোগো বসানোর কোন চল ছিল না। ১৯৭৮ সালে প্রথম আর্জেন্টিনার জার্সিতে ব্র্যান্ডের লোগো দেখা যায়। শুরু হয় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্পোর্টস বিজনেস মার্কেটে ব্র্যান্ড ভার্সেস ব্র্যান্ডের খেলা। প্রথমত, এই স্পোর্টস কিট স্পন্সর করতে গেলে টিমের সঙ্গে ডিল করতে হয়। যেখানে ব্র্যান্ডগুলোর মোট মুনাফার একটা ভালো পারসেন্টেজ পায় জাতীয় ফুটবল দলগুলো। ভাবলে অবাক হবেন যে এই কিট ডিল থেকে একটা ফুটবল দেশ, সবচেয়ে বেশি আয় করে। যেমন ধরুন, বিগত ৬৫ বছর ধরে জার্মানির অফিসিয়াল কিট স্পন্সর অ্যাডিডাস। আর এই ডিল থেকে জার্মানি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন প্রতি বছর কত টাকা পায় জানেন? প্রায় ৬০ মিলিয়ন ইউরো। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫৩০ কোটি টাকারও বেশি।
কোন টিম জিতলে সেই টিমের স্পন্সরড ব্র্যান্ডের শেয়ার প্রাইস হবে আকাশছোঁয়া। আর টিম এলিমিনেট হয়ে গেলে স্পন্সরড ব্র্যান্ডের শেয়ার প্রাইসেও আসে ডাউনফল। বুঝতে পারলেন না? দাঁড়ান বুঝিয়ে বলছি। যেমন ধরুন, লাস্ট ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়ার অফিসিয়াল জার্সি স্পন্সর ছিল নাইকি। সেবার ওয়ার্ল্ড কাপ ঘরে তোলে ফ্রান্স। তবে সবুজ মাঠে জয় ফ্রান্সের হলেও, জার্সি মার্কেটে জয় হয় নাইকির। নাইকির শেয়ার দর বাড়ে ৪%। বিক্রি বাড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কার্টসি হিসেবে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনকে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৫০ মিলিয়ন ইউরো দেওয়ার চুক্তিতে সই করে নাইকি। অন্যদিকে, জার্মানির হারে মার্কেটে ৬% শতাংশ শেয়ার লস দেখে অ্যাডিডাস। কিন্তু ২০১৪-র ছবিটা একেবারে অন্যরকম। বছরটা যেন অ্যাডিডাসেরই ছিল। ফিনালেতে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা এবং জার্মানি। আর এই দুই দলেরই জার্সি স্পন্সর করছে অ্যাডিডাস। আর্জেন্টিনার হারে শেয়ারমার্কেটে ডাউনফল দেখার কথা থাকলেও, জার্মানির জয় সবটা সামলে নিয়েছে। পুমা, নাইকি, রিবককে পেছনে ফেলে শেয়ার মার্কেটে রীতিমত রাজ করেছে অ্যাডিডাস। এবছরেও কিন্তু জার্মানির এলিমিনেশনের কারণে শেয়ার প্রাইসে বেশ বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে অ্যাডিডাস। বিক্রি কমেছে ৩.৮ শতাংশ মতো।
কাজেই আপাতদৃষ্টিতে ফুটবল, ২২ জন খেলোয়াড়ের একটা সহজ গেম মনে হলেও, জাতীয় ফুটবল দেশগুলোর ইকোনমিক গেমটাও কিন্তু এই ফুটবলের উপরেই ডিপেন্ডেন্ট। সেই দেশের ইকোনমিক সিনারিওটা আসলে কেমন হবে, সেটা ঠিক করে এই ফুটবল টুর্নামেন্টগুলোই। আর ওয়ার্ল্ড কাপ এমন একটা গেম যেখানে অংশ নেওয়া দলগুলোর মতই ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যেও চলতে থাকে নীরব প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যা ফুটবল বিশ্বকাপের ব্যবসাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ