Trending
প্রচারের সকল আলো শুষে নিতে চান তিনি নিজেই।
কাজে কম, আড়ম্বর ষোল আনা।
জি২০ বৈঠকে বিশ্বনেতাদের ইমেজ ফিকে হয়েছে তাঁর জৌলুষে।
আর এই জৌলুষ নিয়ে আসার জন্য খরচ কত? ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা?
বরাদ্দ ছাপিয়ে বিজেপি সরকারের এমন দেদার খরচের যৌক্তিকতা কতটা?
জি২০ সম্মেলন শেষ হবার পর কার্যত এমনই নানা প্রশ্ন ধেয়ে আসছে কংগ্রেস সরকারের কাছ থেকে।
পুরোটা বলছি আজকের প্রতিবেদনে।
মণিপুর জ্বলছে। উত্তর ভারতে পরিকাঠামোর অভাব। গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া। অগ্নিমূল্য বাজারদর। সাধারণ মানুষের স্বস্তি নেই। গোটা দেশে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজার গরম। ডলারের দাম কমছে না। বেকারত্বের হাত থেকে সুরাহা দেবার কোন নির্দিষ্ট প্ল্যানিং নেই। গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোয়ার নেই। তারপরেও বিশ্ববন্দনা একজনকে ঘিরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জি২০ সম্মেলন শেষ হবার পর যে আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখে নিজের নিজের ঘরে ফিরেছেন রাষ্ট্রনেতারা, তারপর ভারত নিয়ে আশাবাদী আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স, আফ্রিকান ইউনিয়ন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, জার্মান বাদ নেই কেউ। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গিয়েছে সুবিশাল ইকোনমিক করিডরের। সবই হচ্ছে কিন্তু গরিবিয়ানা কি কমছে? সাধারণ মানুষের হাতে কি মাসের শেষে টাকা থাকছে? কাজের পরিধি বাড়ছে? নাকি দিনে দিনে এভাবেই সাধারণ মানুষকে গ্রাস করবে হতাশা?
হ্যাঁ, জি২০ বৈঠকের পর একশো শতাংশ কনসেনসাস পাওয়া গিয়েছে। গোটা বিশ্বে মোদী ডিপ্লোম্যাসি এখন নতুন টার্ম। দিল্লি দুর্দান্ত কূটনৈতিক চাল চেলে উল্লেখ করেছে, War in Ukraine। কোথাও ভারত বলেনি যে ওয়ার এগেন্সট ইউক্রেন। যা রাশিয়ার জন্য বড় স্বস্তি। মোদী এবং রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী লাভরভের একটি মুহূর্ত ভাইরাল হয়েছে। দুজনকেই যেখানে খুব হাসিখুশি লক্ষ্য করা গিয়েছে। অনেকেই বলছেন, মোদী যা চাল দিয়েছে তাতে সাপ মরেছে আবার লাঠিও ভাঙে নি। একদিক থেকে রাশিয়ার জয়, অন্যদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সবাইকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ভারতের স্ট্যান্ডপয়েন্টের প্রশংসা করেছেন। কংগ্রেস এমপি শশী থারুর ভারতের জি২০ সম্মলেনে যে ডিপ্লোম্যাসি দেখিয়েছে তার প্রশংসা করেছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। সবই ঠিক আছে। তবু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে দিনের শেষে। গোটা বিশ্বে মোদীবন্দনা এখন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু দেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নাকি একেবারেই সুবিধের নয়। কংগ্রেসের বক্তব্য, দেশের ইকোনমির যা হাল তারপর মোদী সরকারের এই স্ট্যান্ডপয়েন্ট দেখে মনে হচ্ছে আসলে পুরোটাই চমক। আর এই চমক দেখেই রাষ্ট্রনেতারা কার্যত অবাক হয়ে গিয়েছেন। কংগ্রেসের অভিযোগের আঙুল ঠিক কোনদিক লক্ষ্য করে?
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ১ ফেব্রুয়ারি যখন বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সেই সময় বলেছিলেন জি২০ উপলক্ষ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে ৯৯০ কোটি টাকা। কারণ ভারত জি২০ সভাপতিত্ব করছে। সুতরাং মুখের কথা নয় সেটা। এই খরচ তো করতেই হবে। কিন্তু কংগ্রেস যা অভিযোগ নিয়ে এলো তারপর তো চক্ষু চড়কগাছ। দেশের প্রধান বিরোধী দল বলছে, মোদী সরকারের জি২০-র সম্মেলন করার বাজেট ৯৯০ কোটি ছাপিয়ে পৌঁছে গিয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকায়! কারণ একটাই দিল্লিকে সাজাতে কোনরকম কার্পণ্য করা হয়নি। বিষয়টা নজরে এনেছেন কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল। তিনি বলছেন, ইন্দোনেশিয়া যখন জি২০ সম্মেলন করে, সেই সময় বালিতে অনুষ্ঠিত গোটা সম্মেলনের বাজেট ছিল মাত্র ৩৬৪ কোটি টাকা। আর ভারত যখন করল তখন খরচের অঙ্কটা কিভাবে ১০ গুণ ছাপিয়ে গেল? একই বক্তব্য শোনা গেল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকারজুন খড়্গের গলায়। তিনি বললেন, জি২০ তো শেষ হয়ে গিয়েছে এবার দেশের আভ্যন্তরীণ টালমাটাল পরিস্থিতির দিকে নজর দিক মোদী সরকার। তাঁর বক্তব্য, অগাস্ট মাসে দেশে খাবারের থালির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪%। বেকারত্বের হার ৮ শতাংশ। একেবারেই ভালো নেই দেশের আর্থিক পরিস্থিতি। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এই বিপুল অঙ্ক খরচ করে জি২০-র সেন্ট্রাল ক্যারেক্টার হয়ে উঠেছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। শুধু কি আত্মগরিমায় ভুগছেন তিনি? কেন এই কোটি কোটি টাকা খরচ? প্রত্যুত্তর দিয়েছে বিজেপি।
কংগ্রেসের ছোঁড়া বক্তব্যের শাণিত জবাব এসেছে বিজেপি শিবির থেকে। স্পেশ্যালি জেপি নাড্ডা, অমিত শাহের মতন একেবারে হেভিওয়েট প্রথম সারির নেতামন্ত্রীরা কংগ্রেসের যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা এসেছে ভারতের এই আয়োজন দেখে। তাঁরা সর্বসমক্ষে প্রশংসা করেছেন নরেন্দ্র মোদীর। সুতরাং ভারতের প্রেসিডেন্সিতে জি২০ সফল। যার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এক এবং একমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। একইসঙ্গে তাঁরা বলছেন, কংগ্রেস যে পরিমাণ টাকা খরচের হিসেব দিচ্ছে সেটা সম্পূর্ণটাই বিভ্রান্তিকর। কারণ বাজেট বরাদ্দের ৩০০ শতাংশ বেশি যে টাকা খরচ করা হয়েছে সেটা কোন অস্থায়ি পরিকাঠামোর পিছনে হয়নি। তার ব্যবহার জি২০ শেষ মানেই বাতিলের খাতায় চলে যায়নি। ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্থায়ী পরিকাঠামোর পিছনে খরচ করা হয়েছে। ফলে বাজেটে যা বরাদ্দ ছিল শুধুমাত্র জি২০ নিয়ে, বাজেটের অঙ্ক সেটা ছাপিয়ে যায়নি।
কংগ্রেস বলছে দুর্নীতির চরম সীমায় ধীরে ধীরে পৌঁছে যাচ্ছে বিজেপি। তাদের নতুন তীর জম্মু-কাশ্মীরে বিরাট অঙ্কের দুর্নীতি করেছে বিজেপি। জম্মু-কাশ্মীরে জল জীবন মিশনে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সেই টাকা গেল কোথায়? একে সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি আবার বিশ্ব পুঁজিপতিদের কাছে নিজের ইমেজ তুলে ধরার জন্য আরও হাজার হাজার কোটির বিনিয়োগ। কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, মোদী যেভাবে দেশ চালাচ্ছেন তারপর আর দেশ নয়। আসলে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদী চান পৃথিবীর সব আলো তাঁর কাছে আসুক। গোটা বিশ্ব মোদী বন্দনায় মুখরিত হোক। আর এটাকেই কঠোরভাবে আটকাতে চায় কংগ্রেস। তাই চরম বিরোধিতা করে আসন্ন লোকসভা ভোটে কেল্লা ফতে করতে চাইছে কংগ্রেস। কিন্তু তাতে দিনের শেষে কি মোদী ম্যাজিক ফিকে হবে? তার উত্তর দেবে সময়।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ