Trending
তালেবান মানেই যে ভয়, শাসনের অপব্যবহার। তালেবান মানেই যে নারীদের অধিকার একেবারে ছাড়খাড়। অচল অর্থনীতি, সচল শাসানি, চোখ রাঙানি আর কট্টর আইনের মারপ্যাঁচ। তাহলে কি তালেবান শাসনে ভালো নেই আফগানিস্তান? মোটেই না। বরং বাস্তব ছবিটা বিপরীত কথা বলছে। শরিয়ত শাসনের ঘেরাটোপে দাঁড়িয়েও ঘুরছে তালেবানের অর্থনীতি। বিস্তারিত জানতে হলে প্রতিবেদনটি দেখতে হবে একেবারে শেষ পর্যন্ত।
আফগানিস্তানের ক্ষমতা দু’বছর হল নিজেদের দখলে নিয়েছে তালেবান। যে সময় তালেবানের হাতে আফগানিস্তান পড়েছে তখন দেশের অবস্থা খানিক বিধ্বস্ত ছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো জোট না সরলে আফগানিস্তানের শাসন তালেবানের হাতে যেত না। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, চাপ সবকিছুই এসেছে। তারই মধ্যে কাবুলে বসেছে তালেবানি শাসন। বদলে গিয়েছে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং আর্থিক প্রেক্ষাপটের পুরো ছবিটাই। একেবারে টাটকা খবর, শরিয়ত মেনে আফগানিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সকল রাজনৈতিক দলকে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনচর্চা, নারীদের ধরাবাঁধা চলাফেরা, হিজাবের বাধ্যতামূলক ব্যবহার সবই এসেছে ফিরে। তারপরেও কি দাঁড়িয়ে রয়েছে আফগানিস্তান সেই পুরনো তিমিরেই? না। আফগান অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য পট পরিবর্তন হচ্ছে। অন্তত পাকিস্তানের থেকে অনেক ভালো। কেন এসব কথা বলছি জানেন?
সম্প্রতি বিশ্বব্যাঙ্কের তরফ থেকে উঠে এসেছে চমকে দেবার মতো তথ্য। সেখানেই বলা হচ্ছে, আফগানি মুদ্রার কদর বাড়ছে বিশ্ব বাজারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভ্যালু বেড়েছে আফগানি টাকার। একইসঙ্গে বলা হচ্ছে যে, আফগানিস্তানের রাজস্ব আয় অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আয় বাড়লে অর্থনীতি মসৃণ হবেই। আর সেখানেই ফারাকটা যেন আরও ধরা পড়ছে পাকিস্তানের সঙ্গে। বলা হচ্ছে, যেখানে মাসভর কাজ করার পরেও যেখানে পাকিস্তানের কর্মচারীরা বেতন পাবেন কিনা সেই নিয়ে তীব্র সংশয় জমা হচ্ছে, সেখানে আফগানিস্তানের সকল সরকারি কর্মচারীরা নিয়মিত স্যালারি পাচ্ছেন। আর এই গোটা বিষয়টা সম্ভব হয়েছে তালেবানের কঠোর শাসন ব্যবস্থার জন্য। খেয়াল রাখবেন, তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠা পাবার পর কিন্তু দেশের অর্থনীতি গোঁত্তা খাবে বলে ধরে নেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় বৈদেশিক সাহায্য। বর্তমানে আফগানিস্তানে রয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ। যাদের অধিকাংশই রয়েছেন দারিদ্র্য সীমার নিচে। তালেবান সরকার বলেছিল, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে তাদের একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি ছিল। সিকিউরিটি ব্যবস্থা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে চালনা করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এসব দেখেই জাতিসংঘ বৈদেশিক অনুদানের পথ অনেকটাই চওড়া করে দিয়েছিল। কিন্তু তালেবান নারীদের কাজ করা নিয়ে ভালোরকম নাক কুঁচকে রয়েছে। কারণ নারীদের তারা কাজ করতে দেবে না। শিক্ষার আলো তারা নারীদের মধ্যে ছড়াতে দেবে না। এদিকে নারীদের যদি এগিয়ে না-আসতে দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব নয়। এসবের কারণেই আফগান অর্থনীতি বেশ চাপেই পড়ে। তারপরেও দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তালেবানি শাসনে ভালো রকম ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি। কিভাবে?
গত বছর আফগানিস্তানকে ২০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিল ভারত। ভারতের এই আর্থিক সাহায্যকে তালেবান প্রশংসাও করেছে। তবে এবার নতুন খবর। তালেবান আজ অর্থনীতিতে অক্সিজেন জোগানোর জন্য লাগাতার কথা বলছে চিন এবং কাজাখিস্তানের সঙ্গে। কারণ একটাই। তালেবান চাইছে আন্তর্জাতিক স্তর থেকে বিনিয়োগ আরও স্মুদলি হোক। আর সেই বিষয়ে সবথেকে সাহায্য করতে পারে পাকিস্তানের বিগ ব্রাদার চিন। তাই চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তর তো বটেই। একইসঙ্গে বিভিন্ন ইকোনমিক পলিসি নিয়েও চিনকে পাশে চাইছে তালেবান প্রশাসন। তবে অবশ্যই শুধু চিন নয়। আমেরিকার সঙ্গেও কথা চলছে তালেবানদের। একইসঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গেও তারা নিয়মিত কথাবার্তা চালাচ্ছে। তালেবানের লক্ষ্য এখন যে সকল নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছিল, সেগুলো তুলে নেওয়া হোক। তাহলে কোটি কোটি ডলারের অর্থসাহায্য তারা পাবে।
তালেবানি শাসনে আফগান সিস্টেম এখন কতটা দুর্ভোগে রয়েছে, সেটা যেন লঘু করে দিচ্ছে তালেবানরা নিজেরাই। কারণ তারা সঙ্গ পাচ্ছে এশিয়ার দুই বাঘ ভারত এবং চিনকে। তবে হ্যাঁ, তালেবান যেভাবে নিজের দেশে শরিয়ত আইন চালু করে দেশের শাসন ব্যবস্থাকে নিজেদের হাতের তালুতে রাখতে চাইছে, সেটা ভবিষ্যতে কতটা ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট করতে সাহায্য করবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে আপাতত আন্তর্জাতিক ইকোনমিক মানচিত্রে আফগানি মুদ্রার ভ্যালু বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে খুব ইম্পরট্যান্ট। আপনাদের কি মনে হয়? শরিয়ত শাসন কি আফগান অর্থনীতির পথে বাধা হতে পারে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ