Market
পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তাজপুর। এখানেই তৈরি হবে গভীর সমুদ্র বন্দর বা ডিপ সি পোর্ট। যা ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের দিশা যেমন দেখাবে। তেমনি এই বন্দরটি পশ্চিমবঙ্গের জন্য নিয়ে আসবে শিল্পে জোয়ার। হ্যাঁ বন্ধুরা। আজ আমরা কথা বলব তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে। যা বাংলার ব্যবসা বাণিজ্যের ভোল সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে। তার জন্য পুরো প্রতিবেদনটি দেখার অনুরোধ রইল আপনাদের কাছে।
তাজপুর বন্দর তৈরি হওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে মত বিরোধের কথা শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু যত যাই হোক তাজপুরে গভীর বন্দর তৈরি হচ্ছেই। আর এই কাজ শেষ হবে খুব বেশিদিন নয়। মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই সমাপ্ত হবে এই তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির কাজ।
দেশ থেকে বিদেশের বহু সংস্থাই আগ্রহ দেখিয়েছে তাজপুরে এই বন্দর নির্মাণে। পোর্ট অফ সিঙ্গাপুর, এসার পোর্টসের মত একাধিক সংস্থা চাইছে তাজপুরে এই গভীর সমুদ্র বন্দরটি তৈরি করতে। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তারা কথাও বলেছে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। হ্যাঁ। ঠিকই ধরেছেন। ভারতীয় শিল্পপতি এবং ধনকুবের গৌতম আদানি তাজপুরে এই গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নাকি মুম্বইতে আদানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছিলেন। তবে এই বন্দর তৈরির বরাত কে পেল সেটা এখনো পর্যন্ত আমাদের অধরা থাকলেও কিছুদিন আগে যে মার্চেন্ট চেম্বারের সভা হয়, সেখানেই শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রাজীব সিংহ জানিয়ে দেন, বন্দর কে তৈরি করবে সেটা নির্ধারণ করতে সময় লেগে যাবে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ মাস। যে সকল সংস্থা ইতিমধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে, তাদের সকলের ইচ্ছাপত্র আগে ভালোভাবে খতিয়ে দেখেই তারপর বন্দর নির্মাণে নামতে পারে সরকার।
সূত্রের খবর, এই বন্দর তৈরি হবে ১ হাজার একর জমির উপরে। আর এই গোটা কর্মযজ্ঞ সত্যি হবে যখন তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দরের ব্যস্ততা চরমে উঠবে। এই বন্দর তৈরি হয়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই। একইসঙ্গে মেঘালয়, অসম, ত্রিপুরা ছাড়াও লাভবান হবে উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড়ের মত রাজ্যগুলি। তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর এক ধাক্কায় প্রতিটি রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। এই বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে রেলপথ এবং সড়কপথের। যার দরুন পণ্য পরিবহনে তেমন একটা অসুবিধে তৈরি হবে না। এই গভীর সমুদ্র বন্দরটি নির্মাণে কত খরচ পড়বে জানেন? এখনো নির্দিষ্ট কিছু বলা না গেলেও মনে করা হচ্ছে বন্দরটি নির্মাণে খরচ হতে পারে ১৬ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে রাজ্য একাই। প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে এই বন্দর নির্মাণে। তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দরটি তৈরি হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে আশার আলো দেখছেন অনেক স্থানীয়রাই। তাঁরাও বিশ্বাস করেন এই বন্দর তাঁদের জন্য লাভবান হবে। কারণ মনে করা হচ্ছে, এই সমুদ্র বন্দরটি তৈরি হয়ে গেল প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ২৫ হাজার বেকার মানুষ কাজের দিশা খুঁজে পাবেন।
এতোদিন পর্যন্ত হলদিয়া বন্দরকেই গুরুত্ব দিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এই বন্দরের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ কমে আসছে। তার অন্যতম কারণ নাব্যতা। পলি পড়ে যাওয়ায় কমেছে হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা। যে কারণে বড় জাহাজ ঢুকতে বেশ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। একইসঙ্গে সমুদ্রের মাঝখানে শিপ টু শিপ ট্রান্সলোডিং করা হচ্ছে। ফলে বাড়ছে খরচ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই তাজপুর বন্দর হবে ৩৫০ মিটার প্রস্থে। ১৬ মিটার হবে এর নাব্যতা। তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হয়ে গেলে শুধু ভারত বলে নয়। গোটা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা বাণিজ্যে গতি আসবে। যার দরুন আমাদের বাংলার অবস্থান হবে এশিয়ার বাণিজ্যের মানচিত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়।
কেমন লাগল আজকের আমাদের এই প্রতিবেদন? শুধু তাজপুর বলে নয়। আমরা এমন অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরব বিভিন্ন প্রতিবেদনের মাধ্যমে। যার দরুন উপকৃত হবেন আমাদের দর্শকরাই। তাই তাজপুর বন্দরের মত এমন প্রতিবেদন দেখার জন্য আপনাদের চোখ থাকুক বিজনেস প্রাইম নিউজের পর্দায়। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।