Trending
হেরে গিয়েও জিতে গেলেন সন্দেশখালির মুখ রেখা পাত্র। এই জয় নির্বাচনের আঙ্গিক থেকে নয়। এই জয় এসেছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসার পরেই। কিছু বিজেপি সমর্থকদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারকে নাকি কষিয়ে থাপ্পর মেরেছে শীর্ষ আদালত। তাই যে ভয় এবং অস্বস্তি রেখা পাত্র সহ সকলেরই ছিল, তাদের মধ্যে এখন স্বস্তির হাওয়া। অনেকেই বলছেন তাই রেখা পাত্র যেন হেরে গিয়েও জিতে গিয়েছেন। কিন্তু শীর্ষ আদালত কী এমন রায় দিল যে রাজ্য সরকারের মুখ পুড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে?
আসলে সন্দেশখালি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কেন? সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান এবং তাঁর অনুগামিদের বিরুদ্ধে জোর জবরদস্তি জমি দখল, মহিলাদের উপর নির্যাতনের মত সব অভিযোগের তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই শীর্ষ আদালতে যায় রাজ্য সরকার। তারপরই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। শুনানি চলার সময় শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বিআর গভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিলেন, একজন ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য কেন আবেদন জানাচ্ছে রাজ্য সরকার? কলকাতা হাইকোর্টের কাছেও এই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় রাজ্য সরকারকে। শীর্ষ আদালতকে রাজ্য সরকারের আইনজীবি অভিষেক মনু সিংভি এবং জয়দীপ গুপ্ত জানান, রেশন দুর্নীতি সহ বিভিন্ন মামলায় রাজ্য পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করলেও রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে হাইকোর্টের রায়ে। সেই কারণেই তাঁরা শীর্ষ আদালতে এসেছেন।
সিঙ্ঘভি আরও সওয়াল করেন, ইতিমধ্যেই সন্দেশখালি নিয়ে ৪৩টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। রেশন দুর্নীতি নিয়েও এফআইআর রয়েছে শাহজাহানের বিরুদ্ধে। মহিলাদের সুরক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। মোতায়েন করা হয়েছে মহিলা পুলিশ। অন্যায় কোথাও নেই। ইচ্ছে করে এখানে রাজনীতির রং লাগানো হচ্ছে। এরপরেই বিচারপতি বিআর গভাই আক্ষেপ করেন। তিনি জানতে চান, রাজ্য একজন ব্যক্তির স্বার্থরক্ষার জন্য কেন এতো তৎপর? এরপরেই রাজ্য সরকারের আইনজীবিরা যে জবাব দেন তা বিচারপতিদের সন্তুষ্ট করতে পারে নি। আর যে কারণে তাদের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ সিবিআই-এর তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখে দিল শীর্ষ আদালত। এরপরেই সন্দেশখালির মহিলাদের মধ্যে শীর্ষ আদালতের রায় নিয়ে চরম স্বস্তি দেখা দেয়। কেউ বলেন, যাদের জমি শেখ শাহজাহান দখল করে নিয়েছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি হবে এবার। তাদের জন্য এই রায় শান্তির। আবার কেউ বলেছেন, শীর্ষ আদালতের কাছে চড় খেল রাজ্য সরকার। চলতি বছরের শুরুর দিকেই শাহজাহান বাহিনীর কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্ত করতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডির আধিকারিকরা। তারপরেই শাহজাহান, শিবু হাজরা বা উত্তম সর্দারদের দাপটের কথা সামনে চলে আসে। এরপর বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, রাজ্য সরকার থাপ্পর খেয়েছে। রাজ্য যে নির্লজ্জভাবে শেখ শাহজাহানকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, সেটা সর্বোচ্চ আদালতের নজর এড়ায় নি। তবে এই বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, সিবিআইকে চালনা করছে বিজেপি। সুপ্রিম কোর্ট তাদের হাতে তদন্তভার রাখলে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। তাই কুণাল ঘোষের প্রশ্ন, সিবিআই গঙ্গাধর কয়ালকে হেফাজতে নিয়ে কি আদৌ জিজ্ঞাসাবাদ করবে?
এই প্রশ্নের উত্তর এখন নেই। তবে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যদি অন্যরকম হত তাহলে হয়ত রেখা পাত্রের মুখ পুড়ত। কিন্তু যেভাবে শীর্ষ আদালত সিবিআই তদন্ত বহাল রাখল, মনে করা হচ্ছে তাতে আদতে হেরে গিয়েও জিতে গেলেন রেখা পাত্র। আপনারা কি মনে করেন জানান কমেন্ট বক্সে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ