বঙ্গ বিজেপি বিপর্যয়ের দায় কার? প্রশ্নটা রাজ্য বিজেপির অন্দরেই উঠতে শুরু করেছে। দিলীপ ঘোষ, সৌমিত্র খাঁ-এর মত বিজেপি নেতারা এবার সরাসরি সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, তারপরই সেই আঙুলের অভিমুখ কোন না কোনভাবে চলে যাচ্ছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দিকে। তবে তার আগে দিলীপ ঘোষ এবং সৌমিত্র খাঁ কী বললেন সেটা আগে শুনে নিন।

এটা ঠিক যে বাংলায় যখন আতসকাঁচ দিয়েও বিজেপির দেখা পাওয়া যেত না, ঠিক সেই সময় থেকেই বিজেপির চমকপ্রদ উত্থান দেখিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর হাত ধরেই বলা যায় বিজেপির আসন সংখ্যা বাংলায় পৌঁছে গেছিল ২ থেকে ১৮-য়। তারপর ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি স্বপ্ন দেখে অন্তত ৩০টির। তার জন্য মোদী-শাহ বারবার বঙ্গভূমিতে এসেছেন, গিয়েছেন কথা বলেছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ তো হলই না উল্টে বিজেপির আসন সংখ্যা কমে গেল ভালোরকম। অন্যদিকে তৃণমূলের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেল একধাক্কায়। রাম মন্দির, সিএএ, একের পর এক রাজ্য সরকারের দুর্নীতি- এসব নিয়ে কত না কথাই তাঁরা বললেন। কিন্তু দিন শেষে বিজেপির স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। আর এসবের জন্য কিছুটা হলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর দায় চাপাচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির একাংশ। অনেকে আবার বেশ বিরক্ত।

তাঁরা মনে করছেন, দিলীপ ঘোষের মত প্রার্থীদের হঠাৎ করে জায়গা বদল, সাংগঠনিক দুর্বলতা এসব যেন বিজেপির অন্দরমহলে ছত্রে ছত্রে ধরা পড়েছে। আর এসবের দায় অন্তত বঙ্গ বিজেপির একাংশ মনে করছে চাপা উচিৎ শুভেন্দু অধিকারীর উপর। কারণ বিরোধী দলনেতা হিসেবে তিনিই প্রার্থী বাছাই, কোন আসনে কোন প্রার্থী দেওয়া যেতে পারে এসব সাজিয়েছেন তিনি। বঙ্গ বিজেপি কর্মীদের একাংশের মনে প্রশ্ন, কেন শুভেন্দু অধিকারীর উপর এতটা বিশ্বাস রাখল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? দিলীপ ঘোষ বা সৌমিত্র খাঁ সরাসরি কারুর নাম না নিলেও কাঠি করা বা অনভিজ্ঞ নেতা বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। আর এই সকল অভিযোগের তীর যে একবার শুভেন্দু আর একবার সুকান্ত’র দিকে সেটা বুঝতে পারছেন বঙ্গ বিজেপির সকলেই।

তবে অনেকে বলছেন যে, দিলীপ ঘোষ যদি নিজের জায়গায় থাকতেন তাহলে জিততেন। মানে তাঁর আসন বদল হল মানে বিজেপি দুটি সিট হারালেন। দিলীপ ঘোষের মত পোড় খাওয়া নেতা সবসময় যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথাতেই ‘হ্যাঁ’ ‘হ্যাঁ’ বলতেন এমনটা নয়। মুশকিল হচ্ছে, এখনকার বঙ্গ বিজেপির যারা শীর্ষে তাঁরা সবসময় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দেখানোর পথে হাঁটেন। সেখানে না বলার কোন কারণ নেই। অর্থাৎ দিলীপ ঘোষ যে পথে হেঁটেছেন, সেই পথে হাঁটছেন না এখনকার বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। এরপরেও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। এদিকে শুভেন্দু অধিকারীকে তলব করেছে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ফলে স্বাভাবিকভাবেই, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দায় নাকি বঙ্গ বিজেপির সেটা আপাতত প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল।

বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ