Daily
ক্ষেতে ফলন দেখে ওদের মুখে হাসি ফুটেছে। ওরা পুরুলিয়ার গন্ধবাজার গ্রামের চাষি। কৃষি দপ্তরের আতমা প্রকল্পের সহায়তায় এই প্রথমবার সূর্যমুখীর চাষ করেছেন তারা। এখানকার বিঘার পর বিঘা জমিতে একটা সময় তারা বিনা সেচে আখের চাষ করতেন। কিন্তু এই চাষ বেশ খানিকটা ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে পড়ায় আখ চাষ থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেন তারা। অভাব ঘোচাতে গুড় বিক্রিও শুরু করেন। কিন্তু লাভের গুড় সেই পিঁপড়েতেই খেয়ে গিয়েছে। তবে শেখার বিষয় এটাই যে, এত কঠিন পরিস্থিতেও ভেঙে পড়েননি তারা। আসলে, এখনকার চাষিরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং রীতিমত প্ল্যানিং করে নিজের জমিতে ফসল ফলান। বিস্তর পড়াশুনো করে, প্ল্যানিং করে এবং কৃষিকর্মকর্তাদের সহায়তায় নিজস্ব জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেন তারা। এমনই একজন চাষির সাথে কথা বলেছিলেন বিজনেস প্রাইম নিউজের প্রতিনিধি।
বিদ্যুৎ দত্ত। ইনিও সেই চাষিদের মধ্যে একজন। যিনি আখ চাষের অনিশ্চয়তা থেকে রেহাই পেতে নিজের তিন বিঘা জমিতে এই প্রথম সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছেন । রবি ফসল হিসেবে অনান্য তৈলবীজের তুলনায় সূর্যমুখী অনেক বেশি লাভজনক। এর ফলনও অনেক বেশি। আর মানুষ এখন হেলথ কনশাস হওয়ায় সূর্যমুখী তেলের গ্রহণযোগ্যতাও বেড়েছে।
এর পাশাপাশি ১৮ বিঘা জমিতে টমেটোর চারাও লাগিয়েছেন বিদ্যুৎবাবু। তবে টমেটো চাষ করতে গেলে মূল সমস্যা হচ্ছে রোগ পোকার আক্রমণ। এই সমস্যার কারণে ফলন কমে যাওয়ার পরিমাণ নেহাতই কম নয়। এর ফলে কৃষকবন্ধুরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন। কিন্তু রোগপ্রকার আক্রমণ কমাতে এই চাষিভাই কোনরকম রাসায়নিক প্রয়োগের পথে হাঁটেননি। বরং সমস্যার সমাধানে ফাঁদ ফসল হিসাবে টমেটোর জমির পাশেই ও চারপাশে এই সূর্যমুখীর চাষ কে বেছে নিয়েছেন একেবারে পরীক্ষামূলক ভাবে।
কিন্তু পুরুলিয়া জেলা, যেখানে জলের অভাবের কারণে বেশিরভাগ কৃষি জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে, সেখানে সূর্যমুখী চাষ করার বিষয়ে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে চাষিভাইদের। সেগুলো কী? শুনব জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট টেকনোলজি ম্যানেজার বিশ্বনাথ বাবুর কাছ থেকে।
সূর্যমুখী চাষ করে বিদ্যুৎবাবু এতটাই উৎসাহিত যে আগামী বছর তিনি তার সম্পূর্ণ জমিতেই সূর্যমুখী চাষ করার কথা ভাবছেন। এবং যেহেতু ফুলের বাগানে মৌমাছির ভিড় হওয়াটা স্বাভাবিক তাই, মৌমাছি প্রতিপালনের প্ল্যানিংও রয়েছে তার। আর সত্যি বলতে সবুজ মাঠের মাঝখানে একটুকরো হলুদ সূর্যমুখী ক্ষেত আর সেখানে ভিড় করে আসা শয়ে শয়ে টিয়াপাখি যে এলাকায় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াবে, সেবিষয়েও খানিক নিশ্চিত তিনি। তাই চাষের পাশাপাশি পর্যটনের কথাও ভেবে রেখেছেন বিদ্যুৎবাবু।
কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বাবুর এই ম্যাজিক উৎসাহিত করেছে আশেপাশের চাষিভাইদেরকেও। তারাও আসছেন তার থেকে এই অর্থকরী ফসলের চাষ সম্বন্ধে বিশদে জানতে। আর সুর্যমুখী চাষের সাফল্য থেকে উৎসাহিত হয়ে আগামীদিনে গোটা ব্লক জুড়ে যে কৃষকরা উৎসাহিত হবেন, সে বিষয়ে আশাবাদী কৃষি দপ্তরের অধিকারিকরাও।
সন্দীপ সরকার
পুরুলিয়া