Daily

আলোর দিনেই দীপশিখা নিভল। প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাতেই হাসপাতালে মারা যান রাজ্যের এই পঞ্চায়েতমন্ত্রী। ৭৫ বছর বয়সে। আচমকা হৃদরোগে।
তাঁকে পরিচয় করানোর জন্য কোনও ভূমিকার প্রয়োজন নেই। রাজ্য রাজনীতিতে সবসময়ই তিনি অপরিহার্য। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রীসভায় তিনি ছিলেন জুনিয়র। মাত্র ২৬ বছর তিনি রাজ্যের মন্ত্রীসভায় গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই রেকর্ড আজও অক্ষত।
বঙ্গ রাজনীতিতে ছাত্রনেতৃত্ব থেকে উত্থান তাঁর। সেকালে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী, সোমেন মিত্রের সঙ্গে উচ্চারিত হত সুব্রতর নাম। বাগ্মীতায় তিনি প্রিয়রঞ্জনের থেকে কোনও অংশে কম ছিলেন না। রাজনীতির আঙিনায় তাঁর মন্তব্য সবসময় গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। একদিকে বিতর্কে যেমন থেকেছেন, তেমনি অসাধারণ প্রশাসক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতেও পেরেছেন। কলকাতার মেয়র থাকাকালীন কলকাতা পৌরসভাকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। একাধিক প্রকল্প তিনি সূচনা করেছিলেন, যা আজও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সুলভ শৌচালয় তাঁর আমলেই শুরু হয়েছিল। পরে বেড়েছে তাঁর ব্যাপ্তি। শহরবাসীকে ট্যাক্সের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আয়োজন করেছিলেন বিভিন্ন শিবিরের। শহরের নানা প্রান্তে এই শিবির বাড়িয়েছিলেন সচেতনতা। ওয়েভার স্কিম করে বহু মানুষকে নিয়ে এসেছিলেন ট্যাক্সের আওতায়। কিন্তু সেই পুরস্কার তিনি পাননি।
তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে টিকিট দিতে অস্বীকার করেছিলেন। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছিল দ্বিতীয়বার। ২০০৮ সালে ফের তিনি যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। সিঙ্গুরের সেই ধর্নামঞ্চে হাজির হন সুব্রত। দেখা করেন মমতার সঙ্গে। আমৃত্যু তৃণমূলের সৈনিক হিসেবে থেকে গিয়েছেন।
রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখার্জি আম-বাঙালির কাছে পরিচিত নাম। দ্বিতীয় পরিচয়, একডালিয়া এভারগ্রীন ক্লাবের দূর্গাপূজোর উদ্যোক্তা তিনি। সেই পূজো দেখতে গিয়ে সুব্রত মুখার্জিকে এক ঝলক দেখার কৌতূহল ছিল সকলের।পালাবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন তিনিও।
রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত মমতা তৈরি করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস। সেই মমতাকে বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি তিনি। সুব্রতর মুখে শুনতে হয়েছিল, ‘মমতা তো নতুন শাড়ি ছিঁড়ে পরে।পাবলিকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।’ পরে মমতা ‘তরমুজ’ অ্যাখা দিয়ে পাল্টা আঘাত করেছিলেন। সবই আজ অতীত। সুব্রত মুখার্জির মৃত্যুর পর সেই মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এটা আমার কাছে বড় আঘাত। তিনি শুধু মন্ত্রী নন, ছিলেন আমার অভিভাবকও।’মমতাকে রাজনীতির ময়দানে নিয়ে এসেছিলেন সুব্রত। ১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রে দোর্দণ্ডপ্রতাপ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন মমতাই। সোমনাথকে সে বার হারিয়ে মমতার রাজনৈতিক জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। শোনা যায়, যাদবপুরে প্রার্থী হিসেবে মমতার নাম দিল্লি কংগ্রেসের কাছে সুপারিশ করেছিলেন খোদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
রাজনীতির পরেই তাঁর স্থান ছিল খেলার মাঠ। কট্টর মোহনবাগানী হয়ে তিনি একটা সময়ে নিয়মিত মাঠে যেতেন। মোহনবাগানের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন দীর্ঘদিন। রাজ্য কবাডি সংস্থার প্রেসিডেন্ট হয়ে মৃতপ্রায় বাংলার কবাডিকে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন।দক্ষতার পরিচয় তিনি রেখেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী হয়েও। তাঁর মৃত্যুতে সত্তর দশকে কংগ্রেসের বিখ্যাত ছাত্র আন্দোলনের শেষ প্রদীপও ছিলেন তিনি।বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যুর পরে সেই আন্দোলন চলে গেল ইতিহাসের পাতায়।
ব্যুরো রিপোর্ট