Daily

রাজ্য রাজনীতিতে নক্ষত্র পতন হলো সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে। অবসান হলো একটা যুগের। অবসান হলো রাজ্য রাজনীতির আইকনের। আর পড়বে না পায়ের ছায়া এই ঘাটে। ফিরবে না। তুমি ফিরবে না।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন একটা প্রতিষ্ঠানের নাম। অন্তত রাজনীতির ক্ষেত্রে। জাতীয় কিংবা রাজ্য রাজনীতিতে সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছাড়া ভাবনাটাই ছিল অত্যন্ত কঠিন।
ছাত্র রাজনীতি থেকে উত্থান। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বর্ষীয়ান এই নেতাকে। এমনকি ঘোর বাম জামানাতেও সুব্রত বাবুর রাজনৈতিক গ্রাফ ছিল বেশ ঊর্ধ্বমুখী।
কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতিতে অভ্যস্ত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নামের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল আরো দুজনের নাম। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি ও সোমেন মিত্র। সুব্রত, প্রিয় ও সোমেন ছিল একই শব্দবন্ধতে উচ্চারিত একটা যুগের নাম।
কফি হাউজের আড্ডাটার মত প্রিয় চলে গিয়েছেন অনেকদিন আগে। চলে গিয়েছেন সোমেন মিত্রও। এবার না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের অন্যতম ভাগীদার সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
সদা হাস্যময়। সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের মন্ত্রীসভার অন্যতম এই সদস্য নিজের রাজনৈতিক গন্ডির বাইরে মানুষদের সঙ্গেও ছিলেন একান্ত আপন। ঘোর বাম জামানাতে দাঁড়িয়েও চোখে চোখ রেখে সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে নেত্রীর সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিলেন এই মানুষটি। যে কোন সমস্যার জট ছাড়াতে ওস্তাদ ছিলেন অভিজ্ঞতার বটবৃক্ষ সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
একুশ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যখন তৃণমূলের ভাঙন হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিত্যনৈমিত্তিক তখনো নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে দলের পতাকা বয়ে নিয়ে বেরিয়েছেন সাগর থেকে পাহাড়। দলনেত্রীর অন্যতম থিঙ্কট্যাঙ্ক ছিলেন এই মানুষটি। আর নেত্রীও দল পরিচালনার ক্ষেত্রে সবসময় প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন বর্ষীয়ান এই মানুষটিকে ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতা দখলের পর থেকে পঞ্চায়েত দপ্তরের বিপুল দায়িত্ব সামাল দিয়ে একদিকে যেমন পঞ্চায়েতের সুযোগ-সুবিধা তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পেরেছেন, অন্যদিকে তেমনি এবার উদ্যোগী হয়েছিলেন দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে। অর্থে অমিত মিত্র আর পঞ্চায়েতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে রেখে অনেকটাই নিশ্চিন্ত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নেই। আর সেই বিশ্বাসেই ভর করে না ফেরার দেশে অগণিত ভক্তের চোখের জলে বিদায় নিলেন সোনালী দিনের নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। অগণিত ফলোয়ার্সদের অস্ফুট আক্ষেপ, তুমি যাবে, কিন্তু কেন যাবে?
অঙ্কিত মুখার্জি, কলকাতা