Story
বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলির মধ্যে অন্যতম টেরাকোটা। যার আঁতুড়ঘর বাঁকুড়া। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টেরাকোটার চোখ ধাঁধানো শিল্পসৃষ্টি আর বাঁকুড়ার মধ্যে আটকে নেই। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার গ্রামীণ শিল্পীরা টেরাকোটার শিল্পকর্মকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য মাত্রায়। তার মধ্যে অন্যতম হল বর্ধমান।
পূর্ব বর্ধমানের মানকরে বেশ কিছু পরিবার বংশপরম্পরায় জড়িয়ে রয়েছেন টেরাকোটা শিল্পের সঙ্গে। পোড়ামাটির এই শিল্পকর্মে ঠাঁই হয় দুর্গা, গণেশ, বুদ্ধ বা ঘোড়ার মত বিভিন্ন আকারের বিভিন্ন ধরণের মূর্তি। যা বিক্রি করেই মানকর ইয়ার্ডের এই শিল্পী পরিবারগুলির পেট চলে। এই শিল্পকর্ম তৈরিতে শুধু পুরুষরা নয় মহিলারাও হাত লাগান একযোগে। কিন্তু করোনার কোপ পড়েছে এখানেও। গত বছর থেকে বন্ধ বিক্রিবাটা। তাই দুশ্চিন্তা বুকে নিয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের।
মূর্তি অনুযায়ী ঠিক করা হয় দাম। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার, চার হাজার এমনকি পাঁচ হাজার টাকাতেও বিক্রি হয় এই সকল মাটির শিল্প। সৃজনশীলতায় মোড়া এই শিল্পকর্মগুলি তৈরির পিছনে থাকে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নিখুঁত যত্ন। কিভাবে তৈরি করা হয় এই টেরাকোটার মূর্তি? সেই বিষয়ে জানালেন আরেক টেরাকোটা শিল্পী সুমন দে।
বড় শোপিস হলে একদিনে দুটো থেকে তিনটে। আর ছোট আকারের হলে দশ থেকে পনেরো পিস পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব হয় পোড়ামাটির এই সকল মূর্তি। পরিশ্রমের অভাব না থাকলেও বেচাকেনা কমে আসায় স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের সংসারে জমা হচ্ছে অনিশ্চয়তা। যদিও তাঁদের এই বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার। সরকারি বিভিন্ন স্কিমের মাধ্যমে তাঁদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়াও ‘জয়ন্তী মহিলা দল’ নামে একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীও তৈরি করা হয়েছে তাঁদের জন্য। যার মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক দিকটা অনেকটা মসৃণ হয়ে যাবে।
পূর্ব বর্ধমানের মানকর ইয়ার্ডের এই শিল্পী পরিবারগুলির কাজ পৌঁছে যায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। সরকারি মেলাগুলি তাঁদের বেচাকেনার পথটা অনেক মসৃণ করে দিয়েছে। কারণ টেরাকোটার এই শিল্পকর্মের চাহিদা থাকে সবসময়ই। করোনার থাবা এসে পড়ায় বন্ধ হয়েছে মেলা। তাই বেচাকেনাতেও নেমেছে ভাটা। কিন্তু রাজ্য সরকারের সহযোগিতা পেলে বিক্রিতে আসবে জোয়ার। আপাতত সেই আশাতেই শিল্পকর্ম তৈরি করে চলেছেন পূর্ব বর্ধমানে মানকর ইয়ার্ডের শিল্পীরা।
পত্রলেখা বসু চন্দ্র
পূর্ব বর্ধমান