Trending
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কা। আমরা সকলেই জানি। অর্থনীতিতে অক্সিজেন দেবার এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে বিশ্ব। শক্তপোক্ত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার ইকোনমি। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই ধীরে ধীরে ধার নেওয়া টাকা ফেরত দিচ্ছে দেশটা। বাংলাদেশকে সদ্য আরও ১০০ মিলিয়ন ডলার শোধ দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এই কামাল করল কিভাবে? সেটাই বলব আজকের প্রতিবেদনে।
গত দেড় বছর আগে শ্রীলঙ্কার অবস্থা কিরকম ছিল সেই ছবিটা এখনো হারিয়ে যায়নি। দৈন্যের গ্রাসে পড়ে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। একের পর এক ভেঙে পড়তে থাকে অর্থনীতির স্তম্ভ। বিভিন্ন সেক্টরে নামতে শুরু করে ধ্বস। প্রায় শূন্যে নেমে আসে রফতানি। এদিকে এক দানা শস্য কেনার জন্য আমদানির ওপর ভরসা করতে হয়। কিন্তু আমদানি করার জন্য যে বিপুল পরিমাণ ফরেক্স রিজার্ভের প্রয়োজন ছিল? সেখানেও ঘাটতি এতটাই চওড়া হয় যে শ্রীলঙ্কাবাসীর রোষ নজরে পড়ে গোটা বিশ্বের। বেবি ফুড, চাল, ডাল, ওষুধ- নিত্য প্রয়োজনীয় যে কোন পণ্যের দাম এতটাই রকেট গতিতে বাড়তে শুরু করে যে সরকারের প্রতি তীব্র অনাস্থা তৈরি হয়ে যায়। ফলে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ নেমে আসেন পথে। ক্ষোভ বিক্ষোভের আকার নেয়। সুন্দর সাজানো গোছানো দেশটায় ফের জ্বলে ওঠে আগুন।
অর্থনীতি যখন বরবাদ হচ্ছিল, সেই সময় প্রয়োজন ছিল রিফর্মসের। শ্রীলঙ্কাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হত। পলিসিতে ভালোরকম চেঞ্জ আনতেই হত। তার জন্য শ্রীলঙ্কা চেষ্টা করে প্রতিবেশী বন্ধু দেশগুলোর কাছ থেকে একে একে ঋণ নেবার। এই অর্থ সাহায্য করার পিছনে ছিল যাতে ভেঙে পড়া কাঠামোকে আবারও সুন্দর করে দাঁড় করানো যায়। বিপদে পাশে দাঁড়ায় আমাদের ভারত, বাংলাদেশ, জাপান সহ বেশ কিছু দেশ। শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়াবে এই বিশ্বাস প্রত্যেকটি দেশের ছিল। আর অর্থনীতি মজবুত হলে যে শ্রীলঙ্কা ধারের টাকা শোধ করবে সেই বিশ্বাসের ওপর ভরসা করেই বাংলাদেশ ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় শ্রীলঙ্কাকে। প্রথম দিকে তিন কিস্তিতে ন’মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দেশটার আর্থিক অবস্থা এমনই নড়বড়ে ছিল যে সেই সময় আগের চুক্তি অনুযায়ী টাকা দেওয়াটা বেশ কঠিন হত। সেই সময় শেখ হাসিনার সরকার শ্রীলঙ্কাকে টাকা পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়। তিনবার বাড়িয়ে করা হয় ২৭ মাস। চুক্তি মতন শ্রীলঙ্কা লন্ডন ইন্টারব্যাঙ্ক অফার রেট বা লিবোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে ১.৫% সুদ দেবার কথা ছিল দেশটার। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তরফ থেকে জানানো হয় যে শ্রীলঙ্কা চুক্তি মতন কথা রাখছে। সবমিলিয়ে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে ফেরত দিয়েছে ১৫০ মিলিয়ন ডলার। এখন আর মাত্র ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা বাকি। যদিও ঋণ পরিশোধের ব্যপারে শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী হাসিনা সরকার। এখন প্রশ্ন কিভাবে ঘুরছে শ্রীলঙ্কা? কিভাবে তারা ঋণ পরিশোধ করছে?
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কার ইকোনমি দাঁড় করানোর পিছনে মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে পর্যটন। হ্যাঁ, ট্যুরিজম সেক্টর শ্রীলঙ্কায় ধীরে ধীরে আবারও হারানো জমি ফেরত পাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা অর্থনীতির অন্যতম পিলার ছিল এই ট্যুরিজম। শ্রীলঙ্কায় যখন আগুন জমা হচ্ছিল, তখন সবথেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে পর্যটন খাত। বিদেশি নাগরিকদের খুব জনপ্রিয় পর্যটনের জায়গা হল শ্রীলঙ্কা। ফলে সেই খাত ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াতে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি আরও দুর্দশার গ্রাসে পড়ে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় এখন আবার ধীরে ধীরে দেশটায় ট্যুরিস্টদের সংখ্যা বাড়ছে। আর একটা কথা। জানেন তো, শ্রীলঙ্কায় সবথেকে বেশি ট্যুরিস্ট কোন দেশ থেকে গিয়েছে? ভারত।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ