Trending
আর নয় চিন, শ্রীলঙ্কায় এবার পালাবদলের দিন। কিরকম? শ্রীলঙ্কা এবার নিজেদের ভবিষ্যৎ দিয়ে দিল ভারতের হাতে। অন্তত ২০ বছরের জন্য। যেটা মনেপ্রাণে চাইছিল না বেজিং। কিন্তু নয়া দিল্লির হাতে শ্রীলঙ্কা নিজেকে সঁপে অনেকটা নিশ্চিন্ত। ঐ ২০ বছরের জন্য। হ্যাঁ, তার জন্য বেজিং কি কোনভাবেই খেপে যাবে না? নিশ্চয়ই। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কাছে ভারত ছাড়া তো বিশ্বাস করার মত কোন অপশন নেই। আর তাই তো চিনকে টপকে এবার ভারতের সঙ্গেই এনার্জি ডিল করে ফেলল শ্রীলঙ্কা। কিভাবে, চলুন আলোচনা শুরু করি এটা নিয়েই।
প্রথমেই বলি, শ্রীলঙ্কা ছোট্ট একটা দেশ। অতএব ইকোনমির দিক থেকেও ভারতের দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত এই দেশটা কোনদিনই মেজর কিছু করতে পারত না। বড় কোন দেশের সাহায্য ছাড়া। সেটা করতে চেয়েছিল চিন। বেজিং-এর লক্ষ্য ছিল, খানিকটা পাকিস্তানের মতনই শ্রীলঙ্কান ইকোনমিতে চিন সরকার কায়েম রহে। কিন্তু অন্ধকার যে অচিরেই ঘনিয়ে আসবে, সেই বিষয়েও বেশ অন্ধকারে ছিল শ্রীলঙ্কার সরকার। শ্রীলঙ্কার ইকোনমিকে শক্তপোক্ত করতে ঢালাও প্রতিশ্রুতি ছিল বেজিং-এর। তারপর হাম্বানটোটা বন্দর, মনে আছে তো? শ্রীলঙ্কার সরকার কিছুটা তাজ্জব হয়েছিল বই কী? মনে মনে করেছিল, কখন যে ঘুঘু এসে ধান খেয়ে গেল, বুঝতেই পারা গেল না। তারপরেই ঘুম ভাঙল দেশটার। কিন্তু ততদিনে নিজেদের খিচুড়িমার্কা মানিটারি পলিসি আর এক্সেসিভ চাইনিজ ইনফ্লুয়েন্সের কারণে ইকোনমি গেল একেবারে ডাউন স্ট্রিমে। শ্রীলঙ্কার অবস্থা কতটা শোচনীয় হয়েছিল বলার প্রয়োজন নেই। বরং মনে করুন একবার। (অস্থির শ্রীলঙ্কার ফুটেজ) তারপরেই তো এনার্জি ডিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলতে বসল। তখন আর মুখে ‘রা’ নেই সরকারের।
কিরকম বলি? অটল বিহারি বাজপেয়ি সর্বপ্রথম শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিলেন। যেখানে শ্রীলঙ্কার এনার্জি সেক্টরকে মোটামুটিভাবে দাঁড় করাবার জন্য বাজপেয়ি রাবণের দেশে নিয়ে এসেছিলেন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনকে। ডিল অনুযায়ী ২০ বছর শ্রীলঙ্কার এনার্জি সেক্টরকে নিজেদের হাতে রেখেছিল আইওসি। সেই চুক্তি খুব শিগগির শেষ হবার মুখে। এবার বিষয়টা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের এই এনার্জি ডিল হোক সেটাই নাকি চায় নি বেজিং। শ্রীলঙ্কায় একটা মুসলিম পপুলেশন রয়েছে। এছাড়া সেখানে রয়েছে কম্যুনিজমের প্রভাব। ইনফরমেশন মোতাবেক, শ্রীলঙ্কায় এদের কাছে গোপনে ফান্ডিং করার দায়িত্ব বহাল তবিয়তে ধরে রেখেছে চিন। আর তাদের উদ্দ্যেশ্য কী? অ্যান্টি ইন্ডিয়া মুভমেন্ট। ভারত বিরোধী পথে হেঁটে শ্রীলঙ্কার সরকারকে ঘেঁটে ইকোনমিকে নিজের কাছে রেখে দিতে চেয়েছিল চিন। ফলে শ্রীলঙ্কার মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব তৈরিও হয় এবং সেটা বারবার শ্রীলঙ্কার সরকারকে ভারত বিরোধী পজিশন নিতে জোর করায়। মুশকিলটা হল চিন যখন নিজেকে শ্রীলঙ্কার বিপদের সময় একেবারে সরিয়ে নিল। কিরকম? শ্রীলঙ্কায় যখন আর্থিক বিপর্যয় চরমে গিয়ে পৌঁছল, সেই সময় শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের অবস্থা একেবারে এজ অফ দ্য ক্লিফে। মানুষের হাতে খাবার নেই। ওষুধের দাম আকাশছোঁয়া। ডেলি এসেনশিয়াল যে কোন পণ্য তখন মহার্ঘ্য হয়ে উঠেছিল। আর সবথেকে বেশি হোঁচট খায় এনার্জি সেক্টর। এই সেক্টরটা এমন যে, একে অবহেলা করলে ইকোনমিকেই অবহেলা করা হবে। শ্রীলঙ্কার ঘুম ভাঙল কখন জানেন? যখন এই মহাবিপদে শ্রীলঙ্কা বুঝতে পারল কখন যেন তাদের পাশ থেকে নিঃশব্দে বেজিং সরে পড়েছে। এমন সময়ে দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কা বুঝতে পারল এই মুহূর্তে ভারত ছাড়া তাদের আর গতি নেই।
এমারজেন্সির সময় ভারত তখন দুর্দান্ত এক কূটনৈতিক চাল দিয়েছিল। তারা শ্রীলঙ্কার ইকোনমিকে তুলে ধরার জন্য ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনকে আবার নিয়ে এলো। এই ফেরত আনার কারণ, পুরনো বন্ধুর স্মৃতিকে একটু উসকে দেওয়া। ব্যস, হলও তাই। শ্রীলঙ্কা যখন বুঝতে পারল, ততদিনে চিন যেন ধীরে ধীরে শ্রীলঙ্কার পলিটিক্সে গব্বর হয়ে উঠেছে। আর এনিমি অফ মাই এনিমি ইজ মাই ফ্রেন্ড। জিও পলিটিক্সে ভারত এবং চিন দুই এশিয়ান যুযুধান। অতএব, চিন যা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ভারত একেবারেই সেটা করেনি। বরং শ্রীলঙ্কার বিপদে সবার প্রথমে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারতই। যখন রাবণের দেশ বুঝতে পারল ততদিনে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। তবে ঐ সবুরে বোধোদয় কাজে দিল। চিনের নাকের তলা দিয়েই ভারতের হাতে সঁপে দিল শ্রীলঙ্কা নিজেদের ভবিষ্যৎ। এনার্জি সেক্টরে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ২০ বছরের ডিল, মুখের কথা নয়। সময় অনেক পেরিয়েছে, বছরও ভালোরকম ঘুরেছে। এখন ভারত যেভাবে শ্রীলঙ্কার মধ্যে এনার্জি সেক্টরকে মিশিয়ে দিল এবং ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনকে ফিরিয়ে আনল, তারপর তো চিনের চক্ষুশূল ভারত হবেই। তাই কি না? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক, শেয়ার মাস্ট। আর নতুন হলে ভুলবেন না সাবস্ক্রাইব করতে বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ