Trending
গত ২ এপ্রিল ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সই হয়েছিল অবাধ বাণিজ্য চুক্তির। যা ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা ইসিটিএ নামে পরিচিত। এরপর গত বছর ডিসেম্বর থেকে দুই দেশের মধ্যে চালু হয় আমদানি রফতানি। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, এর ফলে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়বে দ্বি-গুণ। যার মাধ্যমে আরও মজবুত হবে দুই দেশের অর্থনীতি। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। শুধু বাণিজ্যিক চুক্তির মধ্যেই ভারতকে সীমিত রাখতে চায় না তারা। তাই ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ নিয়ে আসছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে অস্ট্রেলিয়ায়। ফলে ভারতীয় পড়ুয়ারা উচ্চ শিক্ষার জন্য সেই দেশে পড়তে যেতে পারেন, একইসঙ্গে সেখানে চাকরিও করতে পারবেন। অর্থাৎ, দুই দেশের পড়ুয়ারা যদি এই স্বীকৃতি পান, তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক তো আরও মজবুত হবেই। অস্ট্রেলিয়ায় কোন কোন চাকরির কদর বেশি? পড়ুয়ারাই বা অস্ট্রেলিয়ার কোন কলেজের জন্য নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে পারবেন, এই সব নিয়েই শুরু করি আজকের প্রতিবেদন।
সম্প্রতি দেশের বাণিজ্য এবং শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল একটি দুর্দান্ত ফোরকাস্ট করেছেন। যা ইন্ডিয়ার ইকোনমির জন্য একটা মেজর জাম্প হতে চলেছে। আমরা সকলেই জানি ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ভারত রফতানি বাণিজ্য থেকে আয় হয় ৬৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেটা অল টাইম রেকর্ড তৈরি করেছিল। তবে এবার তিনি জানিয়েছেন, এই অর্থবর্ষে সেই রফতানি বাণিজ্য আরও বেড়ে পৌঁছে যেতে পারে ৭৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে ২ ট্রিলিয়ন ডলারে। ভাবতে পারছেন? যদি এই অ্যাচিভমেন্ট সত্যিই হয়, তাহলে দেশের ইকোনমির জন্য সেটা কোন উচ্চতায় চলে যেতে পারে?
আজ ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এই দেশের কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে, দেশের আর্থিক কর্মকাণ্ডের চাকাটা আরও দ্রুত ঘুরতে শুরু করুক। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে যাবতীয় দিকে ভারতীয়রা নিজেদের ইমপ্রেশন তৈরি করবে গ্লোবাল মার্কেটে। আর যে কারণেই ভারত বিশ্বের তাবড় দেশগুলোকে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেশি করে করানোর ব্যপারে সচেষ্ট হয়েছে। তাদেরই মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি হবার ফলে ভারতকে রফতানি খাতে যে বড় রকম ফায়দা দিতে চলেছে, সেটা বলাই যায়। কিন্তু এবার ভারতীয়দের জন্য অস্ট্রেলিয়া নিজের কাজের বাজারকে আরও সম্প্রসারিত করে দিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানেজ ভারত সফর করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য সহ আরও কোন কোন বিষয়ে মনযোগী হলে দুই দেশের কাজের বাজার আরও চওড়া হবে, চলছে সেই নিয়েও আলোচনা। আর কাজের বাজার চওড়া করতে গেলে পড়ুয়াদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি হওয়াটা জরুরি। সেটাই হল অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মধ্যে। মনে করা হচ্ছে, এর ফলে দুই দেশের পড়ুয়াদের জন্য খুলে গেল বিশাল ওপেনিং।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতীয় ডিগ্রি থাকলে অস্ট্রেলিয়ার যে-কোন কলেজে উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়ুয়ারা সুযোগ পাবেন। এমনকি চাকরি পাবার ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে না। এমনকি অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশোনা করে আসার পর ভারতে সেই ডিগ্রি দেখালেই চাকরি পাবার ক্ষেত্রে অনেকটা সুযোগ তৈরি হয়ে যাবে। সেই একই পদ্ধতি খাটবে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে পড়তে আসা পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে শিক্ষার আদান-প্রদানের মাধ্যমে। শিক্ষার আদান-প্রদান যদি দুই দেশে এমন মুক্ত হয়ে যায়, তাহলে কাজের বাজার, উচ্চ শিক্ষা কোনকিছুতেই আর বাধা থাকবে না বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী ভারতীয়দের সংখ্যাটা প্রায় ৫ লাখ মতন। ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যাও কম নয়। এবার আপনি যদি ভারতীয় হন, এবং আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষার কথা ভাবেন, তাহলে বলে রাখি, সেই দেশের শিক্ষার মান নিয়ে আলাদা কোন কথা হবে না। অস্ট্রেলিয়াতে বহু ইউনিভার্সিটি রয়েছে প্রথম সারির। কিন্তু তার মধ্যেও আজ দেব ১০-টি ইউনিভার্সিটির লিস্ট। সেখানে পড়ার সুযোগ তৈরি হলে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের ফিউচার অনেকটাই তৈরি হয়ে যাবে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করে প্রকাশ করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারির দশটি ইউনিভার্সিটির নাম। সেগুলো হলঃ
ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন
ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ড
মোনাশ ইউনিভার্সিটি
ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস
ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাডিলেড
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া
ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনি
এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানবেরা
এর মধ্যে বিশ্বের সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে প্রথম ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়। এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা করলে ভারতীয় পড়ুয়াদের আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। বিশ্ব কাজের বাজারে এক দুর্দান্ত লাফ হতে পারে ভারতীয়দের জন্য। পড়াশোনা, তারপর উচ্চ মাইনের চাকরি। সব মিলিয়ে কাজের বাজারে যে চমকপ্রদ উত্থান হতে পারে, সেটা আর নতুন কথা কী? এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার কোন কোন কোর্সগুলির হাই ডিম্যান্ড রয়েছে।
Accountancy
Actuarial Science
Agricultural Science
Architecture
Biomedical Engineering
Core Engineering
Earth Science
IT and Computer Science
Psychology
Tourism and Hospitality
কাজের বাজারের কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে বলতে হবে অস্ট্রেলিয়ায় অন ক্যাম্পাস, অফ ক্যাম্পাসের পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরি করার দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে। রিটেল, হসপিটালিটি, টেলিমার্কেটিং, সেলস, রিসেপশন, কাস্টমার সার্ভিস, লেবার, ড্রাইভিং এবং পণ্য ডেলিভারির মত কাজের সুযোগ রয়েছেই। এগুলোকে বলা হয় ক্যাজুয়াল জব। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন টেকনোলজি, সোশ্যাল সায়েন্স, লাইফ সায়েন্সের মত বিভিন্ন সেক্টরে পড়ুয়াদের সুবিধা ভালোরকম। হাই ডিম্যান্ড কাজের সুযোগ এইসব সেক্টরেই সবথেকে ভালো।
দুই দেশের মধ্যে পড়ুয়াদের আসা-যাওয়া এবং উচ্চ শিক্ষার বিষয়টা যদি খুব তাড়াতাড়ি রেগুলেট হয়ে যায় তাহলে দুই দেশের সুবিধে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি একটি নতুন বৃত্তি শুরু করতে যাচ্ছেন, যা মৈত্রী প্রকল্পের একটা অংশ বলে ধরা যেতে পারে। মনে করা হচ্ছে, এর ফলে দুই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে বাণিজ্যিক সুযোগ অনেকটা বেশি তৈরি হবে। আর যদি ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এভাবেই শিক্ষা থেকে সংস্কৃতির সম্পর্ক আরও মজবুত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক যে আরও মজবুত হবেই, সে কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আপনারও কি তাই মনে হয়? উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের মত দেশগুলোর নিরিখে? জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন এই প্রতিবেদন।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ