Trending
মার্কিন মুলুকের দেখাদেখি ভারতেও শুরু হয়েছে শার্ক ট্যাঙ্ক। ভারতে যে এখন স্টার্ট আপের সংখ্যা এবং অন্তরপ্রনিয়রদের সংখ্যা বাড়ছে, সেটা এই অনুষ্ঠান দেখলে বোঝা যায়। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী- দেশের কত না রাজ্য থেকে এই শোয়ে আসছেন তাঁরা, নিত্য নতুন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে। শার্ক ট্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে সেই সকল আইডিয়া তাঁরা পিচ করছেন। প্রথম সিজনে এই অনুষ্ঠানটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল ভারতে। এমনকি কম বয়সীদের মধ্যেও শার্ক ট্যাঙ্ক নিয়ে উন্মাদনা ধরা পড়েছে। কিন্তু মজার বিষয় কি জানেন, অনুষ্ঠানে উপস্থিত শার্ক যারা বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়ে আজ মিডিয়ার আলোয় এসেছেন, বাস্তবে তাঁদের ব্যবসার হাল একেবারেই ভালো নয়। বরং কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরাও। আসুন আজ শার্ক ট্যাঙ্কের এই সব শার্কদের বর্তমান ব্যবসার হাল কেমন সেটা নিয়ে ছোট করে একটা আলোচনা সেরে নেওয়া যাক।
ভিনিতা সিং, অশনির গ্রোভার, অনুপম মিত্তাল, নমিতা থাপর, পীযূষ বনসল বা অমন গুপ্তা- এদের দেখে মনে হতে পারে যে এরা প্রত্যেকেই যে যে ব্যবসা করছেন, সেই ব্যবসা এবং অন্যান্য ব্যবসায় ইনভেস্ট করে দারুণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তাঁরা। এমনকি এদের ক্ষুরধার ব্যবসায়িক বুদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের সংস্থাকে দুর্দান্ত লাভের মুখ দেখিয়েছেন। কিন্তু মুশকিল হল, যো দিখতা হ্যায়, উওহি বিকতা হ্যায়- এই হল বর্তমান দুনিয়ার মূল মন্ত্র। কিন্তু সেই মন্ত্র সবসময় খাটে না। কারণ এদের প্রত্যেকের ব্যবসাই এখন বেশ ক্ষতির বোঝা টানছে। কিরকম, সেটা বলছি এক এক করে।
ভিনিতা সিং
সুগার কসমেটিক্সের কর্ণধার। শার্ক ট্যাঙ্কের খুব পরিচিত জাজ। কিন্তু কেউ কি ভাবতে পেরেছেন যে খোদ এই শার্ক নিজেই এখন ক্ষতির মাশুল গুনছেন ভালোরকম। গত বছর সুগার নিজেই ৭৫ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তার আগের বছর সেই ক্ষতির অঙ্কটা ছিল ২১ কোটির আশেপাশে। তার মানে গেল বছর ক্ষতির অঙ্কটা আরও বেড়েছে বৈ কমেনি।
ঘজল অলঘ
মামা আর্থের ফাউন্ডার হলেন ঘজল অলঘ। তাঁর তৈরি মামা আর্থ ব্র্যান্ড বেশ পরিচিতি লাভ করলেও ২০২২ সালে তাঁর সংস্থা লাভ করেছিল মাত্র ১৪ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২১ সালে ক্ষতির অঙ্কটা শুনলে মাথাটা বাঁই করে ঘুরে যেতে পারে। সেই বছর কোম্পানি প্রায় ১৩৩২ কোটি টাকা লসে রান করেছে। ২০২০ সালে লসের অঙ্ক ছিল ৪২৮ কোটি। ভাগ্যি ভালো যে ২০২২ সালে কিছুটা হলেও তো লাভের মুখ দেখেছেন ঘজল অলঘ। আর চলতি বছরে এখনো পর্যন্ত ৪ কোটি টাকা প্রফিট করেছেন ঘজল অলঘ। যদিও শোনা যাচ্ছে, ঘজল অলঘ নিজেই নাকি মামা আর্থের আইপিও নিয়ে আসছে। তার জন্য কোম্পানির ভ্যালুয়েশন ঠিক করা হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। তাও আবার ১৪ কোটির প্রফিটে!
অশনীর গ্রোভার
এই মানুষটা সম্পর্কে কে না জানে? ভারত পে-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন তিনি একসময়। কিন্তু বিতর্ক আর বিতর্ক। যে বিতর্কের জেরে ভারত পে থেকেই তাঁকে সস্ত্রীক বাদ দিয়েছে সংস্থা। বলা হয়, তিনি নাকি মোটা অঙ্কের টাকা তছরুপ করেছিলেন। সেই মামলা এখনো কোর্টে বিচারাধীন। তবে যত যাই হোক, অশনীর গ্রোভার খুব পরিচিত একটা মুখ। সেটা অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা একটা মাইলেজ দিয়েছে। তাঁর সোজাসাপ্টা কথা, অকারণে পিচ করতে আসা অন্তরপ্রনিয়রদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার তাঁকে বেশ জনপ্রিয় করেছে। অশনীর ইতিমধ্যে একটা বই লিখে ফেলেছেন। নিজে এখন বিভিন্ন পডকাস্ট এবং শোয়ে অংশ নিয়ে নিজের টিআরপি ভ্যালু বাড়িয়ে চলেছেন। সুতরাং শার্ক ট্যাঙ্ক অনুষ্ঠানের টিআরপি বাড়াতে অশনীর ম্যাজিক যে কাজ করবে বলাই যায়। আর যদি ভারত পে-র কথা বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে ২০২২ সালে ভারত পে নিজেই ৫৫৯৪ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছিল।
অনুপম মিত্তাল
শার্ক ট্যাঙ্কের অন্যতম জাজ। যিনি অশনীর গ্রোভারের মত কটু কথা বলেন না, বরং সদা হাস্য ইমেজ বজায় রেখে নতুন অন্তরপ্রনিয়রদের পরামর্শ দেন। কিন্তু এখন অনুপম মিত্তলের যা অবস্থা, তাতে ওকে কেউ পরামর্শ দিলেই ভালো হয়। অনুপম মিত্তালের খুব পরিচিত সংস্থা হল শাদি.কম। এখন সেটা একটি প্রাইভেট কোম্পানি বলেই তার লাভ-লোকসানের অঙ্কটা বলা বেশ কঠিন। তবে অনুপম আর যে যে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন যেমন মকান.কম, মৌজ মোবাইলের মত সংস্থা সবই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থাৎ, অনুপম মিত্তালের ব্যবসা যে ভালোরকম চলছে, সেটা বলা বোকামি হবে।
নমিতা থাপার
যিনি শার্ক ট্যাঙ্কে বিখ্যাত অভিজ্ঞতা না-থাকার জন্য একেকটি বিজনেস পিচ থেকে নিজেকে আউট রাখার কারণে। তিনি অবশ্য নিজের এই দুর্বলতা যে পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, তাঁর সংস্থা এমকিওর ফার্মা আসলে নমিতা থাপারের নয়, বরং তাঁর বাবার। তিনি এমকিওর ফার্মার সিইও নন। অর্থাৎ, তিনি নিজে আসলে কোন সেলফ মেড বিজনেস ওম্যান নন। ফ্যামিলি বিজনেসে নমিতা থাপার একজন কর্মীমাত্র বলা যায়।
পীযূষ বনসল
লেন্সকার্টের নাম আমরা সকলেই জানি। পীযূষ বনসল লেন্সকার্ট চালু করেছিলেন প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল। সারা দেশে ২৫০০-এর বেশি স্টোর রয়েছে পীযূষ বনসলের। কিন্তু পীযূষ বাবুর যেটা নেই সেটা হচ্ছে লেন্সকার্ট থেকে লাভ। গত বছর লেন্সকার্ট ২৪৬ কোটি টাকার বেশি লসের মুখে পড়ে। তবে যত যাই হোক, পীযূষ বনসলের একটা গুড ইমেজ রয়েছে। আর সেটার কারণেই শার্ক ট্যাঙ্কে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে নিয়েছেন।
অমন গুপ্তা
শার্ক ট্যাঙ্কের একমাত্র জাজ, যিনি নিজে এখনো পর্যন্ত নিজের সংস্থাকে লাভের মুখ দেখাতে পেরেছেন। বোট গত বছর ৭৯ কোটি টাকা লাভের মুখ দেখেছিল। এছাড়া শার্ক ট্যাঙ্কের সবচেয়ে পপুলার জাজদের মধ্যে অমন গুপ্তা এমন একজন যিনি বলতে গেলে নিজের পারসোনালিটির দরুন আসর মাতিয়ে রাখতে পারেন। অমন গুপ্তা অবশ্য বেশ কয়েকটি ইন্টারভিউয়ে বলেছেন, যে প্রথম থেকেই তাঁর লক্ষ্য ছিল কিভাবে কোম্পানিকে ভালোরকম প্রফিট দেখানো যায়।
বলাই বাহুল্য, শার্ক ট্যাঙ্ক আজ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একটি শো। বহু মানুষ আজ শার্ক ট্যাঙ্কে চোখ রাখেন এই ড্রামা দেখার জন্য। কিন্তু এক সেকেন্ড। আপনি কিন্তু এদের এই অবস্থা দেখে কখনই হতাশ হবেন না। বরং আপনার যদি সেই ক্ষমতা থাকে তাহলে নিজেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের স্টার্ট আপ শুরু করতে পারেন। অন্তরপ্রনিয়র হিসেবে পিচ করতে পারেন নিজের ব্যবসার আইডিয়া শার্ক ট্যাঙ্কে। তবে খেয়াল রাখবেন, কেউ থাকুক বা না-থাকুক আপনি যদি নিজের ওপর বিশ্বাস অটুট রেখে কাজ করেন, তাহলে আপনিও একজন সাকসেসফুল অন্তরপ্রনিয়র হয়ে উঠতে পারবেন। দেশে স্টার্ট আপের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। কত কত মানুষ আসছেন নিত্য নতুন আইডিয়া নিয়ে। আশা করা যায়, দেশে এমনই যত স্টার্ট আপের সংখ্যা বাড়বে, ততই আমাদের দেশ ইকোনমিকালি আরও স্ট্রং হবে। তাতে কেউ থাকুক বা না-থাকুক।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ