Trending
মহাকাশে পৌঁছে গিয়েছে ভারত। চাঁদ, মঙ্গলে অভিযান চালিয়ে নিজেকে ঢুকিয়ে নিয়েছে এলিট ক্লাবে। এবার পালা ভারত মহাসাগর। আমাদের লক্ষ্য এখন গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে অমূল্য রতনের খোঁজ চালানো। যদি এই সুবিশাল প্রোজেক্ট-টি সাফল্যের সঙ্গে করা যায়, তাহলে মজবুত হবে অর্থনীতি, আমরা ছাপ রাখতে পারব গোটা বিশ্বে। এবার তার জন্যই শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। কোন সাগরে দেবে ডুব, কতদিনেই বা দেবে? এই সব নিয়েই আলোচনা করব আজ, বলব গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে কিভাবে অর্থনীতিতে দুর্দান্ত গতি আনতে চাইছে ভারত। জানতে হলে স্কিপ না করে দেখুন গোটা প্রতিবেদন।
ভারতের দীর্ঘ একটা এলাকা জুড়ে রয়েছে সমুদ্র উপকূল। প্রায় ৭ হাজার ৫১৭ কিলোমিটার। এই সমুদ্রপথ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে অর্থনীতি আর অন্যদিকে রণনীতি। আপাতত এই দুই লক্ষ্যে ভারত এখন মহাসাগরে নামার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে ফেলেছে। জোর কদমে চলছে তার প্রস্তুতি। নাম দেওয়া হয়েছে, মিশন সমুদ্রযান। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য জোরকদমে কাজ করছে চেন্নাই-এর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশান টেকনোলজি। যে ডুবোযান পাঠানো হবে তার নাম রাখা হয়েছে ‘মৎস্য ৬০০০’। তিনজনকে নিয়ে মৎস্য ৬০০০ ডুব দেবে ৬ কিমি বা ৬ হাজার মিটার গভীর সমুদ্রে। খেয়াল রাখবেন, এই গভীরতায় জলের চাপ কিন্তু ভয়ঙ্কর। তাই জলের চাপ সহ্য করানোটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটা বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকারের ভূ-বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে মৎস্য ৬০০০-এর ডিজাইন তৈরি করছেন ইসরো, আইআইটি মাদ্রাজ এবং ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীরা। কী কী থাকছে এই ডুবোযান মৎস্য ৬০০০-এ? থাকছে অত্যাধুনিক মানের সেন্সর। খননকাজ চালানো সম্ভব হবে সমুদ্রের একেবারে গভীর তলদেশে। আর ভয়ঙ্কর জলের চাপ যাতে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তার জন্য থাকছে দুটো ইউনিট। এই সমুদ্রযান মহাসাগরের তলায় জলের চাপ সহ্য করে থাকতে পারবে ১২ ঘন্টা। আর যদি বিপদ সংকেত পাওয়া যায়, তাহলে ডুবোযানে থাকা মানুষের জন্য ৯৬ ঘন্টা সমুদ্রের নিচে থাকতে পারবে মৎস্যযান। এখানেই একটা বিষয় জানিয়ে রাখি। মৎস্য ৬০০০ তৈরি করা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে দেশীয় প্রযুক্তিকে মাথায় রেখে। জানা যাচ্ছে, এই ডুবোযানের ৭০% তৈরি করা হচ্ছে দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে। কয়েকটি কম্পিউটার আর কিছু সিস্টেম শুধু ইমপোর্ট করা হচ্ছে। মিশন সমুদ্রযান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য সময় নেওয়া হচ্ছে পাঁচ বছর। তার জন্য খরচ হতে পারে ৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। নির্দিষ্ট ফেজে এই টাকা খরচ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে ভারত কেন মহাসাগরে ডুব দেবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে?
মনে করা হচ্ছে সমুদ্রযান প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর মহাসাগরে যে অভিযান ভারত চালাবে, তাতে মহাসাগরের তলদেশে থাকা রহস্য কিছুটা হলেও কেটে যাবে। জানা গিয়েছে, মহাসাগরে ভারত এই পুরো প্রকল্পটি চালাবে বিজ্ঞানমূলক গবেষণা এবং অনুসন্ধানের জন্য। এবং এমনভাবেই পুরো বিষয়টা করা হবে যাতে সাগরতলে বাস্তুতন্ত্রের ন্যূনতম কোন ক্ষতি না হয়। খুব পরিকল্পিতভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে এই প্রকল্প চালানোর কাজ চালিয়ে যাবে ভারত। তবে অর্থনীতি যে দুর্দান্ত গতি পাবে সেটাকেও অস্বীকার করার জায়গা নেই। কারণ, ভারত মহাসাগরের নিচে রয়েছে খনিজের ভাণ্ডার। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এখানেই রয়েছে কোটি কোটি টন তামা, ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, কোবাল্টের মতো খনিজ। আর এই সকল খনিজ পদার্থ কিভাবে জলের তলা থেকে ডাঙায় তুলে আনা যায় সেই দিশা দেখাবে ভারতের মিশন সমুদ্রযান। অর্থাৎ ভারতের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি তো হবেই। একইসঙ্গে তৈরি হবে প্রচুর কর্মসংস্থান। দুর্দান্ত উন্নতি হবে জীবন-জীবিকার।
পৃথিবীর তিন ভাগ জল, এক ভাগ স্থল। মজার ব্যপার হল, এই তিন ভাগ জলের অধিকাংশটাই এখনো আমাদের অজানা। মহাসাগরের তলায় যে বিপুল ঐশ্বর্য লুকিয়ে রয়েছে সেটা কারুর অজানা নয়। একইসঙ্গে মানুষ সেখানে পৌঁছতে না-পারার কারণেই থেকে গিয়েছে রহস্যের পাহাড়। তাই হয়ত পৃথিবীর খুব বেশি দেশ মহাসাগরের গভীরে পৌঁছনোর সাহস দেখায় নি। কোন কোন দেশ মহাসাগরের তলদেশে পৌঁছতে পেরেছে? আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ফ্রান্স এবং জাপান। মনে করা হচ্ছে, ভারত যদি মিশন সমুদ্রযান প্রকল্পটা সাকসেসফুলি করতে পারে তাহলে ভারত ঢুকে পড়তে পারবে এই এলিট ক্লাবে। একইসঙ্গে রহস্য কাটবে অনেকটা, গতি আসবে দেশের ইকোনমিতে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ