Trending
১১ অগাস্ট ২০২৩। রাশিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টার মাক্সিম রেশেতনিকভ ভারতকে দুর্দান্ত একটা অফার দিলেন। ভারত এবং রাশিয়ার সাধারণ মানুষ দুই দেশেই নিঃসঙ্কোচে যাতায়াত করতে পারবেন। দুর্দান্ত একটা পজিটিভ মেসেজ তাই না। মানে ভিসার প্রয়োজন আর পড়বে না। রাশিয়ার মানুষ আসবেন ভারতে আর ভারতের নাগরিক যাবেন রাশিয়ায় ভিসা ছাড়াই। শুধু পাসপোর্ট দেখিয়ে আরামে ট্র্যাভেল করতে পারবেন দুই দেশের মানুষ। তার মানে কি ভিসার প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে বন্ধ হতে চলেছে দুই দেশের মধ্যে? ভবিষ্যতে ভিসার প্রয়োজন আর পড়বে না তাহলে? আর রাশিয়ার এই পদক্ষেপের জন্য কি ভারতের পাসপোর্ট আরও স্ট্রং হতে পারে? অনেকেই মনে করছেন, এরপর বহু দেশ ভারতকে ফ্রি ভিসা এন্ট্রি দিতে চাইবে। বিষয়টা কি? সেই নিয়েই কথা বলা যাক আজকের প্রতিবেদনে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভিসা ফ্রি এন্ট্রি দেবার জন্য ২০২২ সালে অফার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু সেই সময় অনেকেই খানিক ধন্ধে ছিলেন। সেটা কি আদৌ কোন কার্যকর হবে? শুধুই পুতিনের একটা সাধারণ স্টেটমেন্ট হবে নয় তো? তারপর দেখা গেল, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সত্যিই এই বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। রাশিয়া আগেই বলেছিল যে, ভারতীয়দের রাশিয়া যাবার জন্য কোন এমব্যাসি যাবার প্রয়োজন নেই। বরং অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ই-ভিসা করে নেওয়া যাবে। তবে এখন আরও বড় খবর। রাশিয়া বলছে আর ভিসার প্রয়োজনই নাকি নেই। আর এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ভারতের পাসপোর্ট। কেন বললাম জানেন? দেখুন আমরা ফিফথ লারজেস্ট ইকোনমি। ওয়ার্ল্ডের ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং ইকোনমি। তারপরেও কিন্তু আমাদের পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং ৮৫-তে। যেটা খুব একটা স্বস্তিজনক নয়। সাউথ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এদের কথা যদি ধরি, এই সকল দেশ ভারতের থেকে ছোট হয়েও পাসপোর্ট র্যাঙ্কিং-এ একেবারে ফ্রন্টফুটে। যদি ইকোনমিই পাসপোর্ট র্যাঙ্কিং-এর জন্য মেজর একটা কারণ হয় তাহলে ভারতের পাসপোর্ট পিছিয়ে কেন? কারণ একটাই। আসলে যে দেশের পাসপোর্ট সবথেকে বেশি ভিসা ছাড়া ট্র্যাভেল করতে পারবে, সেই দেশের পাসপোর্ট তত শক্তিশালী হবে। আর অনেকেই বলছেন, রাশিয়ার মতো সুপার পাওয়ার দেশ যখন ভারতের জন্য এই পদক্ষেপ নেয় তখন সেটা ভারতের পাসপোর্ট র্যাঙ্কিং-এ খুব পজিটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলে। এক্ষেত্রেও সেটা হতে চলেছে। মানে ভারতের পাসপোর্ট আরও অনেক বেশি শক্তিশালী হতে পারে।
দেখুন, রাশিয়ার আগে সার্বিয়া ভারতকে ফ্রি ভিসার অফার করেছিল। কারণ ভারত এবং সার্বিয়ার বন্ধুত্ব ভালোই। ভারতীয়দের অনেকেই তখন সার্বিয়া গিয়ে সেখান থেকেই বর্ডার ক্রশ করে ঢুকে পড়ছিলেন ইউরোপের অন্যান্য দেশে। এই মাইগ্রেশন ধীরে ধীরে সার্বিয়াকে ঘিরে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর জন্য বেশ থ্রেট হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। আর যে কারণে সার্বিয়াকে ফ্রি ভিসা থেকে সরে দাঁড়ানোর ব্যপারে চাপ সৃষ্টি করে। আর সার্বিয়া সেটা মেনেও নেয়। বন্ধুরা পাসপোর্ট ইনডেক্সে যে বলা হয়, এই দেশের পাসপোর্ট এতো র্যাঙ্কে রয়েছে বা ভালো সেটা নির্ভর করে কতগুলো দেশ ভিসা ছাড়াই ঢুকতে দেবে? ভারতীয় পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু সার্বিয়ার ঝটকা তো লাগেই। তবে রাশিয়া যেহেতু এখন নিজেই ভারতকে ফ্রি ভিসা এন্ট্রি দিতে চাইছে, সেটা ভারতের পাসপোর্টের জন্য দারুণ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। রাশিয়া কিন্তু চিন বা ইরানের সঙ্গে ভিসা ফ্রি রেসিপ্রোকাল অ্যারেঞ্জমেন্ট করে থাকে। মানে আপনি আমাদের লোকেদের জন্য ভিসার হ্যাপা তুলে নিন, আমরাও আপনাদের থেকে ভিসার হ্যাপা তুলে নেব। কিন্তু রাশিয়ার একটা ভয় আছে।
এমনিতেই খুব বড় দেশ রাশিয়া। কেউ যদি মনে করেন তাহলে একা গিয়ে তারপর রাশিয়ার কোন অজ গাঁয়ে যদি সেটলড হয়ে যান নকল ডকুমেন্ট তৈরি করে, তখন তো বিষয়টা যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে। আর সেই কারণে দারুণ একটা পদক্ষেপ নিয়েছে রাশিয়া। তারা বলেছে, একা নয় বরং গ্রুপ করে আসতে পারেন এখানে। ৫ জনের গ্রুপ করে এলে তখন এই ধরণের ঘটনা ঘটবে না বলেই মনে করছেন সেই দেশের মাথারা। আর পাঁচ জন মানে সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্যামিলিই হবে। এবার প্রশ্ন হতে পারে, যত না রাশিয়ান ভারতে আসবেন তার থেকে তো বেশি ভারতীয়রাই রাশিয়া যাবেন। তাহলে দিনের শেষে লাভের গুড় কার? রাশিয়ার নিশ্চয়ই। একটা সমীক্ষা বলছে, বহু ধনী রাশিয়ান আগে গোয়া ঘুরতে আসতেন। তারপর দেখা যায় তাঁরা গোয়া বিমুখ হয়ে চলে যাচ্ছেন দুবাই। সেখানকার ফেসিলিটি থেকে সবকিছুই অনেক উন্নত হচ্ছে। তাই ফ্রি ভিসা হলে আশা করা যায় গোয়াতে আবার ধনী রাশিয়ানদের ঢল নামবে। তারা আমাদের ইকোনমিকে সমৃদ্ধ করবেন।
ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে রাশিয়ানরা যথেষ্ট ওপেন মাইন্ডেড। তাদের মধ্যে ঐ ইউরোপ, আমেরিকার মতো রেসিজমের কু-মনোভাব তেমন নেই বললেই চলে। ফলে রাশিয়ার মানুষ ভারতের সার্বিক ইতিহাস সম্পর্কে ভালোরকম ওয়াকিবহাল। সুতরাং ফ্রি ভিসা হলে তখন রাশিয়ানদের কাছে ভারত অন্যান্য রাজ্যের ট্যুরিজম সেক্টরকে আরও বেশি করে প্রোমোট করতে পারবে। সুতরাং এরপর যদি পুতিন ভারত সফর করেন বা মোদী যদি রাশিয়ায় যান তাহলে হয়ত দুই দেশের মধ্যে এই ফ্রি ভিসা বিষয়টি এস্টাব্লিশ হয়ে যাবে। কারণ ইরানের সঙ্গে, চিনের সঙ্গে যদি করা যায় তাহলে আর ভারতের সঙ্গে করতে তো কোন আপত্তি নেই। কারণ ভারত এবং রাশিয়া বহুদিনের বন্ধু। তারা ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আশা করা যায়। একটাই কথা, দুই দেশের মধ্যে যদি ফ্রি ভিসা চালু হয়ে যায় তাহলে সেটা যেমন জিও পলিটিক্যাল সেক্টরকে যথেষ্ট লাভবান করে তুলবে তেমনই দুই দেশের ট্যুরিজম সেক্টর আরও এনরিচড হবে। অর্থাৎ দিনের শেষে ফায়দা হবে দুই দেশেরই। ফ্রি ভিসা হয়ে গেলে আপনিও কি রাশিয়া ঢুঁ মেরে আসবেন? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করে নিন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ