Market
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। যে যুদ্ধের কারণে আজ বিশ্ববাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। একদিকে গ্লোবাল রিসেশন আর অন্যদিকে খাদ্য সংকট। পরিস্থিতি খুবই কঠিন। রাশিয়া এবং ইউক্রেন হচ্ছে গোটা বিশ্বের ফুড বাকেট। বিশেষত ইউরোপের। আন্তর্জাতিক বাজারে যে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করা হয় তার এক-তৃতীয়াংশ কন্ট্রিবিউট করে ইউক্রেন। আর ইউক্রেনে যুদ্ধ বেঁধেছে মানে গোটা বিশ্বে এর প্রভাব পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। আর এই খাদ্যশস্য আমদানি রপ্তানি হয় কোথা দিয়ে? কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে। তাই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলেও জাতিসংঘের সমঝোতায় কৃষ্ণ সাগরের বাণিজ্যিক রুট নিয়ে মধ্যস্থতায় আসে রাশিয়া ইউক্রেন। দুই দেশের তরফে সই করা হয় বাণিজ্যিক চুক্তি।
কৃষ্ণ সাগর। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির অন্যতম প্রধান করিডোর। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু রুশ-ইউক্রেন হামলার কারণে হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় এই রাস্তা। কিন্তু কেন? কিভাবেই বা গোটা বিশ্বে এই ম্যান মেড সংকট তৈরি হল? এটা হয়েছে মূলত দুইভাবে। প্রথমত, রাশিয়ার নৌবহরের মধ্যে পড়ে ইউক্রেনের রপ্তানি পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর দ্বিতীয়ত যুদ্ধের কারণে যে আন্তর্জাতিক খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছিল, সেই অভ্যন্তরীণ সংকট পূরণের জন্য রপ্তানি বাণিজ্যে রাশ টানে রাশিয়া। যার ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়ে খাদ্যসামগ্রীতে। এবং অবশ্যই সেটা বিশ্বব্যাপী।
মার্চ থেকে জুন নাগাদ আচমকাই খাদ্যপণ্যের দামে রেকর্ড বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। আফ্রিকা, ইয়েমেনের মত দেশে তৈরি হয় ম্যান মেড দুর্ভিক্ষ। তবে হঠাৎই জুলাই নাগাদ খাদ্যপণ্যের দামে এক বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কমতে থাকে খাবারের দাম। তবে এই নাটকীয় পরিবর্তনের ঠিক কি কারণ? সেই রুশ ইউক্রেন চুক্তি। যেখানে বলা হয় যে কৃষ্ণ সাগরে একটি করিডোর তৈরি করা হবে যেখানে খাদ্যপণ্যের জাহাজ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে। এবং নিম্ন আয়ের দেশের যেখানে খাদ্য সংকট তৈরি হলে তা পূরণ করা বেশ কঠিন, সেখানে যাতে খাদ্যপণ্য সরবরাহ সুস্থিত থাকে। আর এই চুক্তিতেই এল প্লট পরিবর্তন। এই চুক্তির পরে ইউক্রেন থেকে খাদ্য রপ্তানি হয় প্রায় সাড়ে ৯ মিলিয়ন টন। এক ধাক্কায় খাদ্যপণ্যের দাম কমে প্রায় ৯ শতাংশ।
সবটাই ঠিক চলছিল। কিন্তু যত ডামাডোল তৈরি হয় তা ওই একটা প্রশ্নকে ঘিরেই। কি সেই প্রশ্ন? অনেকেই দাবি করেছেন যে ইউক্রেন থেকে রপ্তানি হওয়া শস্যের বেশিরভাগটাই যাওয়ার কোথা ছিল নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হচ্ছে কি? জাতিসংঘ জানাচ্ছে, ইউক্রেন থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যে ৪৪ শতাংশ নেয় উন্নত দেশগুলো। আর নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে পৌঁছয় মাত্র ৩০ শতাংশ পণ্য। প্রসঙ্গত, রাশিয়ার নৌবহরে ড্রোন হামলার প্রতিবাদে চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া। কিন্তু এই ড্রোন হামলা করলো কারা? রাশিয়া অবশ্য এই বিষয়ে ইউক্রেনকেই দায়ী করেছে। মানে কৃষ্ণ সাগরের বাণিজ্যিক রুট ব্যবহার করে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইউক্রেন। এটাই ছিল রাশিয়ার অভিযোগ। কিন্তু ইউক্রেন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আর রাশিয়া এই চুক্তি থেকে সরে আসার কারণে আবারও বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। যেখানে ফুড কাউন্সিল থেকে জানানো হয় যে এবার হয়তো এক ধাক্কায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে ৫-৬% মতো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে। এতকিছু সত্ত্বেও কেন রাশিয়া আবারও ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানিতে সবুজ সংকেত দিচ্ছে? জানা গিয়েছে যে জাতিসংঘ এবং নিম্ন আয়ের দেশের থেকে চাপের কারণে ফের চুক্তিতে ফিরছে রাশিয়া। এছাড়াও ইউক্রেন যেখানে লিখিতভাবে বলেছে যে কৃষ্ণ সাগরের বাণিজ্যিক রুটকে তারা সামরিকভাবে ব্যবহার করবে না, সেখানে মুখ ফিরিয়ে থাকার কোন মানে হয় না। বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। তুরস্কের তরফ থেকে সাপোর্ট আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই রিস্ক না নিয়ে চুক্তিতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া। তবে রাশিয়ার সিদ্ধান্তের এই নাটকীয় পরিবর্তন খুব বেশিদিন সুস্থিত নাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ